গুরু গ্রেগকে জবাব দিতে পেরেছিলেন। গুরু গ্রেগের প্রাক্তন কর্মশালায় এসে আইপিএলের ফ্র্যাঞ্চাইজি মালিকদের জবাব দেওয়া হল না সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের। এক ম্যাচ বাদে মাঠে ফিরে ব্যাটসম্যান সৌরভ জয়পুরে করলেন মাত্র ২। অধিনায়ক হিসেবেও পুণের ভাগ্য ফেরাতে ব্যর্থ তিনি। এ বার দ্রাবিড়ের রাজস্থান রয়্যালসের কাছে পুণে হারল ৪৫ রানে।
পর-পর তিনটে ম্যাচের ফল শনিবার ইডেনে মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের জয়, এ দিন রয়্যালসের পুণেকে উড়িয়ে দেওয়া আর তার পর কিংস ইলেভেন পঞ্জাবের রুদ্ধশ্বাস জয়। শেষ চারের দৌড়কে আরও জমিয়ে দিয়ে গেল।
এই নিয়ে টানা আট ম্যাচ হারল পুণে ওয়ারিয়র্স। সাম্প্রতিক অতীতে এ রকম ‘ধারাবাহিকতা’ আর একটা দলই দেখাতে পেরেছে। ধোনির টিম ইন্ডিয়া। যারা ইংল্যান্ড আর অস্ট্রেলিয়া থেকে ফিরেছে ০-৮ টেস্ট হারের স্কোরবোর্ড নিয়ে। সৌরভ তখন ছিলেন কমেন্ট্রি বক্সে। অথবা কলম হাতে বিশেষজ্ঞের ভূমিকায়। আজ তিনি নিজেই আক্রান্ত।
চলতি আইপিএলের প্রথম হ্যাটট্রিক এ দিন করলেন রাজস্থান রয়্যালসের অজিত চান্ডিলা। টসের সময় রাহুল দ্রাবিড় যাঁর নামই মনে করতে পারছিলেন না। প্রথম শ্রেণির ম্যাচ খেলেছেন মাত্র দু’টো। হরিয়ানার এমন অখ্যাত স্পিনার শেষ করলেন ৪-০-১৩-৪ বোলিং হিসেব নিয়ে। পুণের কোনও শেন ওয়াটসনও ছিল না। যিনি ৩১ বলে ৫৮ করে তফাত গড়ে দেবেন। কোনও অজিঙ্ক রাহানে ছিল না। যিনি দুর্দান্ত ধারাবাহিকতা দেখিয়ে যাবেন। রাহানে এ দিনও করে গেলেন ৪৭ বলে ৬১। |
বরং পুণে নিয়ে সারাক্ষণই কেমন একটা ঘোঁট পাকিয়ে থাকা আবহাওয়া। টানা অষ্টম হারের পর সহারা-প্রধান সুব্রত রায় বলে দিলেন, সামনের বার যুবরাজ সিংহের প্রত্যাবর্তনের দিকে তাকিয়ে রয়েছে পুণে ওয়ারিয়র্স। হাবেভাবে পরিষ্কার, যুবরাজ সুস্থ হয়ে মাঠে ফিরতে পারলে তাঁর হাতে অধিনায়কত্ব ফিরিয়ে দেওয়া হবে। এ বারের অধিনায়ক আর ফ্র্যাঞ্চাইজি মালিকদের মধ্যে সম্পর্ক যেখানে যাচ্ছে তাতে সামনের বার মেন্টর হিসেবেও কি সৌরভকে দেখতে পাওয়া যাবে? ক্রিকেটমহলে প্রশ্নটা ঘুরতে শুরু করে দিয়েছে।
সুব্রত রায় এ দিন বলেন, “আমি গত রাতে আমার ছেলের সঙ্গে কথা বলেছিলাম। ওকে বলেছিলাম, আমরা তো কোয়ালিফায়ার্স থেকে ছিটকেই গিয়েছি। এই ম্যাচগুলোতে যারা খেলেনি তাদের চান্স দাও। ভারতীয় প্লেয়ার হোক কী বিদেশি প্লেয়ারযারা এত দিন বাইরে বসে থেকেছে তাদের খেলার সুযোগ দাও।” তবে একা সৌরভকে কাঠগড়ায় দাঁড় করাননি তিনি। বরং বলেছেন, “আমরাই একমাত্র টিম যারা নিলামে যায়নি। সেটাও মনে রাখতে হবে। সৌরভ চেষ্টা করেছে।”
চেষ্টার একটা নমুনা এ দিন পাওয়া গেল ম্যাচ শুরুর আগে। যখন সৌরভ চলে গেলেন রাজস্থান ক্রিকেট অ্যাকাডেমির নেটে ব্যাটিং প্র্যাক্টিস করতে। ভারতীয় দলের চাকরি হারানোর পর এটাই ছিল গ্রেগ চ্যাপেলের ঠিকানা। গুরু গ্রেগ চলে যাওয়ার পর এখন প্রধান কোচের দায়িত্বে চন্দ্রকান্ত পন্ডিত। তখন কে জানত, সব চেষ্টাই ফের মাটি হয়ে যাবে বাইশ গজের যুদ্ধে গিয়ে!
আর সরকারি বিবৃতি যা-ই হোক, ভেতরে-ভেতরে মতান্তরের তথ্য উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। পুণের বাকি রইল আর একটাই ম্যাচ। দাদা বনাম খান-এর ফিরতি লেগ। যা ১৯ মে হবে পুণেতে। কিন্তু ইডেনের দাদা বনাম খান নিয়ে যে রকম সারা দেশের ক্রিকেটমহল উত্তাল হয়েছিল, এ বার সে রকম হাওয়া দেখতে পাওয়া কঠিন। ম্যাচটাই যে কেমন ম্যাড়ম্যাড়ে হয়ে দাঁড়াচ্ছে। আর তার চেয়েও বড় প্রশ্ন, সেই ম্যাচের আগেও কি ফের তর্ক-বিতর্ক উঠবে যে, সৌরভ খেলবেন কি না?
এত দীর্ঘ অন্ধকারের মধ্যে দিয়ে আর কখনও যায়নি সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের ক্রিকেটজীবন। কাছাকাছি থাকতে পারে শুধু দক্ষিণ আফ্রিকায় হওয়া আইপিএল। সে বার যদিও তাঁকে সরিয়ে ব্রেন্ডন ম্যাকালামের হাতে কেকেআরের নেতৃত্ব তুলে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু সে বারও টানা আট ম্যাচে হারের কলঙ্ক ছিল না। ব্যাটসম্যান সৌরভ স্পিনারদের ওড়াতে পারছেন না যেমন বিস্ময়কর দেখাচ্ছে, তেমনই চোখে লাগছে পুণে ওয়ারিয়র্সের ড্রেসিংরুম বেআব্রু হয়ে পড়া। যোগাযোগ ব্যবস্থা সম্পূর্ণ ভেঙে পড়েছে। এক বার মালিক বলছেন, সৌরভ আর খেলবেন না। সামনের বছর মেন্টর হিসেবে দেখা যাবে। আবার সৌরভ বলছেন, তিনিই এ মরসুমের শেষ পর্যন্ত অধিনায়ক। একটা ম্যাচে দেখা যাচ্ছে তিনি ডাগ-আউটে। পরের ম্যাচে আবার তিনি ওপেনার। টস করতে যাচ্ছেন। বিভ্রান্ত টিমের বিভ্রান্ত, দিগভ্রষ্ট চলাফেরা।
মাইকেল ক্লার্ক দেশে ফিরে গিয়েছেন। এ দিন অ্যালান ডোনাল্ডকেও ডাগ-আউটে দেখা গেল না। পুণে শিবির থেকে অবশ্য দাবি করা হল, ডোনাল্ড পায়ের ব্যথায় কাবু বলে আসতে পারেননি। সংশয় আর বক্তব্য-পাল্টা বক্তব্যে পরিবেশটাই গুমোট হয়ে রয়েছে। এখন ফিরে তাকাতে গেলে অবিশ্বাস্য মনে হবে যে, এই টিমটাই মুম্বইতে মুম্বইকে হারিয়ে রাজকীয় ভাবে তাদের আইপিএল অভিযান শুরু করেছিল!
|
নাটকীয় জয় পঞ্জাবের
নিজস্ব সংবাদদাতা • মোহালি |
ডেকান চার্জার্সের বিরুদ্ধে নাটকীয় জয় তুলে নিল কিংস ইলেভেন পঞ্জাব। শেষ ওভারে পঞ্জাবের দরকার ছিল ১৬ রান। কিন্তু সেই অসাধ্যসাধন করে দেন পঞ্জাবের গুরকীরত সিংহ। পর পর বাউন্ডারি এবং ওভার বাউন্ডারি মেরে। শেষ বলে প্রয়োজন ছিল চার রান। বাউন্ডারি মেরে খেলা শেষ করে দেন গুরকীরত (১২ বলে ২৯ন:আ:)। তবে এমন রুদ্ধশ্বাস জয় হয়তো আসতই না, যদি না ডেভিড হাসির ইনিংসটা থাকল। মাত্র ৩৫ বলে ৬৫ করে অপরাজিত থেকে যান হাসি। চারটে বাউন্ডারির সঙ্গে পাঁচটা ছক্কা মেরে। ডেকানের কুড়ি ওভারে তোলা ১৯০-৪ তাড়া করতে গিয়ে এক সময় ৫৬ রানের মধ্যে তিন উইকেট পড়ে যায় কিংসের। সেই অবস্থা থেকে দলকে টানেন হাসি। ডেকান বোলারদের মধ্যে একমাত্র ডেল স্টেইন ২ উইকেট তোলেন।আর হাসি-গুরকীরতের দাপটে জলে গেল শিখর ধওয়ানের ইনিংস। তাঁর ৫০ বলে ৭১-এর মতোই কাজে এল না ক্যামেরন হোয়াইটের অপরাজিত ৬৭ রানের দুরন্ত ব্যাটিং। এই ম্যাচ জিতে চেন্নাই, রাজস্থান, বেঙ্গালুরুর সঙ্গে লড়াইয়ে ঢুকে পড়ল পঞ্জাব। ১৩ ম্যাচে পয়েন্ট ১৪।
|