ম্যাঞ্চেস্টার শহরের রং এত দিনে নীল হয়ে গেল!
ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের রংও। ৪৪ বছর ২ দিন পরে।
অলৌকিক! অবিশ্বাস্য! ঐশ্বরিক! যে ভাবেই ব্যাখ্যা করা যাক, কিছুতেই তুষ্ট হওয়া যাবে না। ইনজুরি টাইমে ২ গোল করে ম্যাচ জিতে ম্যাঞ্চেস্টার সিটি এক নতুন ইতিহাস তৈরি করল ইপিএলে।
৪৪ বছর আগে ইংল্যান্ডের দুই প্রান্তে দুই নাটকীয় ম্যাচ শেষে হাসি ফুটেছিল ম্যাঞ্চেস্টার সিটি সমর্থকদের মুখেই। রবিবারের নাটক সব কিছুকে ছাপিয়ে গেল এমন ভাবে, গোটা মাঠে নেমে এলেন ম্যাঞ্চেস্টার সিটির সমর্থকরা। ফেন্সিং টপকে। সচরাচর যা ও দেশে দেখা যায় না।
নিজেদের মাঠে ১৬ নম্বর দল কুইন্স পার্ক রেঞ্জার্সের সঙ্গে খেলা ছিল ম্যাঞ্চেস্টার সিটির। ম্যাঞ্চেস্টার ইউনাইটেডের খেলা ছিল অ্যাওয়ে ম্যাচে সান্ডারল্যান্ডের সঙ্গে। হিসেব সোজা ছিল। ম্যাঞ্চেস্টার সিটি জিতলেই চ্যাম্পিয়ন হত ৪৪ বছর পরে। দুই ম্যাঞ্চেস্টারের পয়েন্ট সমান। কিন্তু ইউনাইটেড গোল পার্থক্যে পিছিয়ে ছিল।
|
৯০ মিনিটের খেলা চলছে যখন তখন ইউনাইটেড ১-০ এগিয়ে। রুনির গোলে। ওই সময়ে সিটি দশ জনের প্রতিপক্ষের কাছে ১-২ হারছে। গ্যালারিতে কান্নাকাটি চলছে সিটি সমর্থকদের। ইনজুরি টাইম শুরু। লিগ জিততে আরও দু’গোল দরকার, কী করে কী হবে? সান্ডারল্যান্ডে ইউনাইটেডের গ্যালারিতেই বরং উৎসবের বন্যা। সিটির খেলায় মারপিট করে কুইন্স পার্ক রেঞ্জার্সের বার্টন লাল কার্ড দেখেন। তাই তাদের খেলা চলছিল একটু বেশিক্ষণ।
এক মাঠে রুনিরা জিতেও উৎসব করতে পারছিলেন না। ফার্গুসন চুইংগাম চিবিয়ে এগনোর সময় জয়োৎসবের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। অন্য মাঠে সিটি কোচ মানচিনি হতাশা, ক্রোধে কী করবেন ভেবে পাচ্ছেন না। তখনই ম্যান ইউ গ্যালারিতে খবর এল, ইনজুরি টাইমের ১ মিনিট ১৫ সেকেন্ডে ২-২ করেছেন সিটির এডিন জেকো। তাতে কী? তখনও সিটির গ্যালারিতে হাহাকার। ইউনাইটেডের গ্যালারিতে উল্লাস। পরের ১ মিনিট ৫ সেকেন্ডের মধ্যে সব পালটে গেল। সের্জেই আগেরো মারাদোনার জামাই নতুন ইতিহাস গড়লেন ৩-২ করে। তাঁর জীবনের স্মরণীয়তম গোল।
চোখের পলকে দুই মাঠের ছবিটাই পাল্টে গেল একেবারে। সিটির গ্যালারিতে উৎসব সব কিছু ছাপিয়ে গেল। ১৩ বছর আগে বায়ার্ন মিউনিখের বিরুদ্ধে ইনজুরি টাইমে ০-১ পিছিয়ে থেকে ২ গোল করে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জিতেছিল ফার্গুসনের ম্যাঞ্চেস্টার। সেই স্মৃতি উস্কে দিল মানচিনির ম্যাঞ্চেস্টার।
৯৩ কোটি পাউন্ড খরচ করে এ বার সিটি দল গড়েছিলেন তাদের আবুধাবির তেলব্যবসায়ী মালিক মনসুর। এ বার লিগে তারা ম্যাঞ্চেস্টার ইউনাইটেডকে ৬ গোল দিয়েছে রুনিদের মাঠেই, দুটো ডার্বিই জিতেছে। কিন্তু একটা সময় তারা পিছিয়ে গিয়েছিল ৮ পয়েন্টে। সেখান থেকে তারা ফার্গুসনদের তাড়া করে লিগ জিতল। নাটকের পরে নাটকীয় ম্যাচ খেলেছেন আগেরো, তেভেজ, সিলভা, নাসরি, ইয়াইয়া তোরে-রা। ধরে ফেলেছেন রুনিদের। রবিবার বিকেল সব কিছু নাটক ছাপিয়ে গেল। ম্যাঞ্চেস্টারের কিছু অংশে এখন কান্না, কিছু অংশে উৎসব। কিন্তু রাত থেকেই শহরের রং নীল হয়ে গিয়েছে।
|
চুম্বকে সিটির সাফল্য |
|
• ম্যাঞ্চেস্টার সিটি ম্যাঞ্চেস্টার ইউনাইটেডকে (৬-১, ১-০) দু’বারই হারিয়েছে। আর্সেনালের সঙ্গে ফল ১-০, ০-১।
চেলসির সঙ্গে ১-২, ২-১। টটেনহ্যামের সঙ্গে ৫-১, ৩-২। লিভারপুলের সঙ্গে ১-১, ০-১।
• ম্যাঞ্চেস্টার সিটি ইংল্যান্ডে লিগ জিতেছে ৩ বার। এফ এ কাপ ৫ বার। উয়েফা কাপ উইনার্স কাপ ১ বার।
• ১৯৮৯ সালে আর্সেনাল লিভারপুলকে গোলপার্থক্যে হারিয়ে লিগ জেতে। এতদিনে আবার গোল পার্থক্যে ইংলিশ লিগ জিতল কেউ।
• দুই ম্যাঞ্চেস্টারের (৮৯) পরে লিগ তালিকায় থাকল আর্সেনাল (৭০), টটেনহ্যাম (৬৯), নিউ ক্যাসল (৬৫), চেলসি (৬৪), এভার্টন (৫৬), লিভারপুল (৫২)।
• নেমে গেল বোল্টন, ব্ল্যাকবার্ন ও উলভস। |
|