নিজস্ব সংবাদদাতা • মেদিনীপুর |
ঘটনার ৪৮ ঘন্টা পরেও মেদিনীপুরে ছাত্র খুনের ঘটনায় কাউকে গ্রেফতার করতে পারল না পুলিশ। যে ভাবে বাড়ির মধ্যে অভিষেক নাগ নামে ওই কিশোরকে খুন করা হয়েছে, তা নিয়েও পুলিশের মধ্যে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। কারা খুন করেছে, তাদের উদ্দেশ্যই বা কী ছিল, তদন্তে এই সব প্রশ্নের উত্তর খোঁজার চেষ্টা করছে পুলিশ। ইতিমধ্যেই মৃতের পরিবারের লোকজন-সহ ২০ জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। রবিবার দিনভর জিজ্ঞাসাবাদ পর্ব চলে। জেলা পুলিশ সুপার সুনীল চৌধুরি বলেন, “বেশ কয়েকজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। ঘটনার সঙ্গে কারা জড়িত, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।”
অভিযুক্তদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাইছেন এলাকার মানুষও। ময়নাতদন্তের পর শনিবার দুপুরে মেদিনীপুরের পদ্মাবতী শ্মশানে অভিষেকের শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়। দেহ নিয়ে শোক-মিছিলে সামিল হন এলাকার অনেকেই। ওই কিশোরের বন্ধু, পরিচিতদের হাতে ছিল প্ল্যাকার্ড। তাতে লেখা, ‘আমরা খুনির সাজা চাই।’ মেদিনীপুর শহরের নির্মল হৃদয় আশ্রমের অষ্টম শ্রেণির ছাত্র ছিল অভিষেক। তার আত্মার শান্তি কামনা করে শনিবার সকালে স্কুলে বিশেষ প্রার্থনা সভা হয়। ওই দিন স্কুল ছুটি রাখা হয়। দুপুরে বাড়িতে এসে পরিবারের লোকজনদের সঙ্গে দেখা করেন প্রধান শিক্ষক ফাদার জয় ডিসুজা। |
সকালে স্কুল থেকে ফিরে শুক্রবার দুপুরে বাড়ির একটি ঘরে ঘুমোচ্ছিল বছর তেরোর অভিষেক। বিকেলে ওই ঘর থেকেই তার ক্ষতবিক্ষত দেহ উদ্ধার হয়। মেদিনীপুর শহরের বরিশাল কলোনিতে বাড়ি অভিষেকদের। যৌথ পরিবার। বাবা প্রবীর নাগ মেদিনীপুর পুরসভার কর্মী। মা মিতাদেবী গৃহবধূ। একটি দোকানও দেখভাল করেন। দাদা অভিরূপ দ্বাদশ শ্রেণিতে পড়ে। বরিশাল কলোনি রীতিমতো ঘনবসতিপূর্ণ। গাঁ ঘেষাঘেষি করে মাথা তুলেছে বাড়িগুলি। এমন একটি এলাকায় দুপুরবেলা কী ভাবে ঘরের মধ্যে ঢুকে এক কিশোরকে খুন করে দুষ্কৃতিরা পালিয়ে গেল, তদন্তে নেমে সেই রহস্যের জাল ছেঁড়ারই চেষ্টা করছে পুলিশ। প্রাথমিক তদন্তে পুলিশের ধারণা, এই ছাত্রকে খুন করাই একমাত্র উদ্দেশ্য ছিল দুস্কৃতিদের। কিন্তু কেন তা এখনও অজানা। স্থানীয়দের দাবি মেনে ইতিমধ্যে ঘটনাস্থলে পুলিশ কুকুর এনে তদন্ত হয়েছে। ওই কুকুর অবশ্য ঘটনাস্থল থেকে বাড়ির পিছন দিক দিয়ে গিয়ে একটি পুকুরের পাড় হয়ে কিছুদূর গিয়ে দাঁড়িয়ে পড়ে। পুলিশের ধারনা, কুকুরের দেখানো পথ দিয়েই দুষ্কৃতিরা পালিয়ে গিয়েছে।
পুলিশের কাছে এখনও সে ভাবে কোনও সূত্র আসেনি। ফলে ঘটনা ঘিরে ধোঁয়াশা রয়ে গিয়েছে। তদন্তকারী এক অফিসার বলেন, “এ ক্ষেত্রে আরও কিছু সময় লাগতে পারে। তদন্ত এগোচ্ছে। এ ধরনের ঘটনার ক্ষেত্রে কম সময় অভিযুক্তদের চিহ্নিত করা সম্ভব হয় না।” অভিষেক যে ঘরে খুন হয়েছে, সেই ঘরটি ‘সিল’ করে দিয়েছে পুলিশ। জানা গিয়েছে, আজ, সোমবার ঘটনাস্থলে আসতে পারে ফরেন্সিক দল। মৃত ছাত্রের দেহে ছুরি বা চপার জাতীয় কিছুর আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। তার হাতের শিরা কাটা হয়। এই সব সত্ত্বেও পরিবারের লোকজন কেন চিৎকার শুনতে পেলেন না? তাহলে কী এ ক্ষেত্রে প্রথমে শ্বাসরোধ করেই খুন করা হয়? জেলা পুলিশ সুপার বলেন, “ময়নাতদন্তের রিপোর্ট পেলে বিষয়টি
স্পষ্ট হবে।” |