অবিলম্বে কর্নাটকে মুখ্যমন্ত্রী বদলের দাবিতে বিজেপি নেতৃত্বের উপরে আরও চাপ বাড়ালেন ইয়েদুরাপ্পা। বিজেপি নেতৃত্বকে একহাত নিয়ে আজ সনিয়া গাঁধীর প্রশস্তিও করে ফেললেন রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী। পরিস্থিতি সামাল দিতে সদানন্দ গৌড়াকে দিল্লিতে ডেকে পাঠিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বদলের বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেন দলের কেন্দ্রীয় নেতারা।
সুপ্রিম কোর্ট সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দেওয়ার পরেও দলের কোনও কেন্দ্রীয় নেতা পাশে না দাঁড়ানোয় ক্ষুব্ধ ইয়েদুরাপ্পা দল ছাড়ার ইঙ্গিত দিয়ে বসেন। বিজেপি সূত্রের খবর, গত সপ্তাহে দিল্লিতে ইয়েদুরাপ্পার ঘনিষ্ঠ এক নেতা সনিয়া গাঁধীর রাজনৈতিক সচিব আহমেদ পটেলের সঙ্গে বৈঠক করেন। তার পরেই আজ ক্ষুব্ধ ইয়েদুরাপ্পার মুখে এই সনিয়া-বন্দনা। তাঁর কথায়, “সনিয়া গাঁধীর প্রশংসা আমায় করতেই হবে। আমি দেখেছি, দলের কেউ সমস্যায় পড়লে দলের সব সদস্য তাঁর পাশে দাঁড়ান। তাঁরা যথেষ্ট ঐক্যবদ্ধ। তাঁরা একে অন্যকে সাহায্য করেন এবং সমস্যা মিটিয়ে ফেলেন। আর বিজেপিতে সবাই অপেক্ষা করেন, কে-কখন সমস্যায় পড়বে। কত ক্ষণে দলের সবাই তাকে কোণঠাসা করবে। আর সেই সুযোগে দলে অন্যের জায়গাটা দখল করার কথাও ভাবে অনেকে।”
বিজেপির এক শীর্ষ নেতার কথায়, সিবিআই তদন্ত শুরু হওয়ার পর ইয়েদুরাপ্পাও বুঝতে পারছেন, তাঁর পক্ষে মুখ্যমন্ত্রীর পদ ফিরে পাওয়া সম্ভব নয়। সে কারণে তাঁর ঘনিষ্ঠ নেত্রী শোভাকে মুখ্যমন্ত্রী পদে বসাতে চাইছেন। কিন্তু বিজেপি নেতৃত্ব তা খারিজ করে দিয়েছেন। এখন কর্নাটকে বিজেপিতে ভাঙ্গন রুখতে ইয়েদুরাপ্পার পছন্দের অন্য কাউকে সেই পদে বসানো যায় কি না, তা নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। প্রয়োজনে উপমুখ্যমন্ত্রী পদেও কাউকে বসানোর কথা চলছে। বিজেপি নেতৃত্ব মনে করছে, দক্ষিণে বিজেপির দখল করা প্রথম রাজ্য ছিনিয়ে নিতে খোদ সনিয়া গাঁধী তৎপর হয়েছেন। আগে রাজ্যপাল হংসরাজ ভরদ্বাজের মাধ্যমে সরকারকে অস্থির করানোর চেষ্টা হয়েছে। এ বার ইয়েদুরাপ্পার মাধ্যমে সরকার ফেলে দিতে চাইছে কংগ্রেস। ইয়েদুরাপ্পাকে দিয়ে দল ভাঙাতে পারলে বা তাঁর ঘনিষ্ঠদের ইস্তফা দেওয়াতে পারলে এ বছরই গুজরাতের সঙ্গেই কর্নাটকে নির্বাচন করিয়ে নেবে দল। যদিও নিতিন গডকড়ী এ দিনও বলেছেন, “আমি আশাবাদী, সঙ্কট কেটে যাবে।” ইয়েদুরাপ্পার বিরোধী গোষ্ঠীর নেতা অনন্ত কুমারও বলেন, “দু’দিনের মধ্যেই রাজ্যের সঙ্কট মিটবে।” বিজেপি নেতৃত্বের ধারণা, চাপের রাজনীতি করলেও এখনই ইয়েদুরাপ্পার পক্ষে ইস্তফা দেওয়া সম্ভব নয়। দল ছাড়া নিয়ে ইয়েদুরাপ্পাও বলেন, “এখনও সিদ্ধান্ত নিইনি।”
কিন্তু এ ভাবে চাপের রাজনীতির কাছে মাথা নোয়ানো ঠিক হবে কি না, তা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে বিজেপিতে। নেতৃত্বের মতে, কংগ্রেসের হাতে তামাক খেয়ে ইয়েদুরাপ্পা যতই দল ছাড়ার কথা বলুন, তাঁকেও বুঝতে হবে কংগ্রেস তাঁকে বিজেপি ভাঙার জন্য ব্যবহার করে আর পাত্তা দেবে না। আর বিজেপির মতো দলে থেকে তিনি যেটুকু সুবিধা পাবেন, দল ছেড়ে সেই গুরুত্ব তাঁকে কেউ দেবে না। এই অবস্থা ইয়েদুরাপ্পাকে পাল্টা চাপে ফেলতে বিজেপির মুখপাত্র তরুণ বিজয়ের মন্তব্য, “দক্ষিণে বিজেপির প্রথম রাজ্যে আর খুব বেশি আশা রয়েছে বলে মনে হচ্ছে না। জোড়াতালি দিয়ে সরকার টিকিয়ে রাখলেও পদে পদে বিপদ বাড়বে।” |