পুরনো অপরাধী নয়, দক্ষিণ শহরতলির বিভিন্ন এলাকা দাপিয়ে ছিনতাই করে বেড়াচ্ছে মাদকাসক্ত যুবকেরাই। সম্প্রতি কয়েক জন ছিনতাইকারীকে গ্রেফতার করার পরে এমনটাই দাবি করছেন পুলিশকর্তারা। ধৃতদের জেরায় পুলিশ জেনেছে, এরা প্রত্যেকেই মধ্যবিত্ত বা নিম্ন-মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান। নেশার খরচ জোগাড় করতেই এরা ছিনতাই করত বলে তদন্তকারীদের দাবি।
লালবাজারের এক কর্তা জানান, গত মঙ্গলবার রাতে হরিদেবপুরে হানা দিয়ে ধ্রুব হালদার, সৌমিত্র বন্দ্যোপাধ্যায় ও সুভাষ সিংহ নামে তিন যুবককে গ্রেফতার করা হয়। তাদের কাছ থেকে ১০টি সোনার হার এবং দু’টি মোটরবাইক উদ্ধার হয়। দক্ষিণ শহরতলির অন্তত ১২টি ছিনতাইয়ে এরা জড়িত বলে দাবি পুলিশের। লালবাজার সূত্রের খবর, ধ্রুব-র একটি দোকান রয়েছে। তার স্ত্রী একটি কলসেন্টারে কাজ করেন। বাকি দু’জনও চাকরিজীবী। ধৃতেরা মাদকাসক্ত বলে জানিয়ে পুলিশের দাবি, নেশার টাকা জোগাড়ের জন্যই ছিনতাইয়ের দল বানিয়েছিল এরা।
পুলিশ জানায়, গত কয়েক মাসে বেহালা, যাদবপুর, রিজেন্ট পার্ক, পাটুলির মতো দক্ষিণ শহরতলির বিভিন্ন এলাকায় নিয়মিত ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে। শনিবার রাতেও গড়িয়াহাটের কাছে সুইন হো স্ট্রিটে এক মহিলার হার ছিনতাই হয়। গত বুধবার চেতলায় এবং বৃহস্পতিবার পর্ণশ্রীতেও দুই মহিলার হার ছিনতাই করে দুষ্কৃতীরা। চেতলার ঘটনায় ইতিমধ্যেই তিন যুবককে গ্রেফতার করা হয়েছে। ধৃতদের নাম অভিজিৎ চট্টোপাধ্যায়, অনিরুদ্ধ চট্টোপাধ্যায় এবং জগতার সিংহ। তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, মূল অভিযুক্ত অভিজিৎ হোটেল ম্যানেজমেন্টের ছাত্র। বাকি দু’জন কলসেন্টারের কর্মী। তদন্তে পুলিশ জেনেছে, ছিনতাই করার সময়েও নেশাগ্রস্ত ছিল তারা।
লালবাজারের কর্তারা জানাচ্ছেন, এ পর্যন্ত যা দেখা গিয়েছে, শহরতলির পরপর ছিনতাইয়ের ঘটনায় অপরাধের কৌশল একই ধরনের। সকাল বা সন্ধ্যার দিকে রাস্তায় একা বেরোনো মহিলাদের ‘টার্গেট’ করার পরে সাইকেল বা মোটরবাইকে চেপে এসে ছিনতাই করছে দুষ্কৃতীরা। প্রসঙ্গত, সম্প্রতি কলকাতার রাস্তায় লাগানো আলোও চুরি হচ্ছে। প্রশাসন সূত্রের খবর, ডিএল খান রোড এবং তার আশপাশের রাস্তায় আলো চুরি যাওয়ার ঘটনা নজরে এসেছে খোদ মুখ্যমন্ত্রীরও। পুলিশের সন্দেহ, এই ধরনের চুরির পিছনেও রয়েছে মাদকাসক্তরাই।
গোয়েন্দারা জানিয়েছেন, ছিনতাইয়ের ঘটনার তদন্তে নেমে তাঁরা দেখেছেন, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই অপরাধের প্রকৃতি পাকা ছিনতাইবাজদের মতো নয়। তা থেকেই সন্দেহ হয় তদন্তকারীদের। কারণ, ছিনতাইবাজেরা কখনই ঝুঁকি নিয়ে অপরাধ করে না। কিন্তু এদের ক্ষেত্রে সেই ঝুঁকি লক্ষ করা গিয়েছে। পরবর্তী কালে, স্থানীয় কিছু সূত্রের মাধ্যমেই ওই যুবকদের খোঁজ মেলে। গোয়েন্দাদের দাবি, মাদকাসক্ত ওই যুবকেরা রোজ ছিনতাই করে না। কিন্তু যে দিন টাকার প্রয়োজন হয়, সে দিন এরা বেপরোয়া হয়ে ওঠে। এক গোয়েন্দা অফিসার বলেন, “দিন কয়েক আগে দক্ষিণ শহরতলিতে এক মহিলার মুখ চেপে সাঁড়াশি দিয়ে গলার হার কেটে নিয়ে পালিয়েছে দুষ্কৃতীরা।”
পুলিশ সূত্রে খবর, ওই যুবকেরা সদ্য এ ধরনের কাজ করতে এসেছে। এর আগে পুলিশের খাতায় তাদের নামও ছিল না। তাই দক্ষিণ শহরতলিতে পরপর ছিনতাইয়ের ঘটনার তদন্তে নেমে প্রথমে পুরনো কোনও দুষ্কৃতী-দলের যোগসূত্র পায়নি পুলিশ। প্রায় চার মাস ধরে বিভিন্ন এলাকায় খোঁজ চালিয়ে প্রথমে হরিদেবপুরের ওই তিন যুবকের খোঁজ মেলে। লালবাজার সূত্রের খবর, এ পর্যন্ত এ রকম মাদকাসক্ত যুবকদের ২-৩টি দলের খোঁজ মিলেছে। এর বাইরে আরও দল রয়েছে বলে গোয়েন্দাদের সন্দেহ। |