আর্থিক ‘স্বচ্ছলতা’ সত্ত্বেও বিপিএল তালিকায় নাম। এমন অভিযোগ তুলে দুই সিপিএম কাউন্সিলরের বিরুদ্ধে অভিযোগ জানিয়েছিল তৃণমূল। দুর্গাপুরের সেই দুই কাউন্সিলরকে আসন্ন পুরভোটে আর প্রার্থীপদ দেয়নি সিপিএম। উল্টে, এ বার ২৯ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল প্রার্থী শেফালি চট্টোপাধ্যায়ের পরিবারের বিপিএল তালিকায় নাম থাকার বিষয়টি প্রচারে আনতে চাইছে সিপিএম।
২৯ নম্বর ওয়ার্ডের প্রার্থী শেফালিদেবীর স্বামী সুনীল চট্টোপাধ্যায় তৃণমূলের দুর্গাপুর ২ ব্লক সভাপতি। একটি বেসরকারি সংস্থার কর্মী ছিলেন সুনীলবাবু। কয়েক বছর আগে তিনি অবসর নেন। তাঁর ছেলে অভিজিৎবাবু ডিপিএলের ঠিকাকর্মী। তিন জনের এই পরিবারটি এপিএলের অন্তর্গত।
বিতর্ক শুরু হয়েছে সুনীলবাবুর পরিবার বিপিএল তালিকাতেও ঠাঁই পাওয়ায়। সেই তালিকায় দেখানো হয়েছে, পরিবারের সদস্য সংখ্যা ১২ জন। সিপিএম কাউন্সিলর তথা স্থানীয় বোরো কমিটির চেয়ারম্যান শিবশঙ্কর চট্টোপাধ্যায়ের অভিযোগ, “একই সঙ্গে এপিএল এবং বিপিএল, দুই তালিকাতেই ওই পরিবারের নাম রয়েছে। সরকারি নিয়ম অনুযায়ী পরিবারটির নাম বিপিএল তালিকায় থাকার কথা নয়। অথচ বিপিএল তালিকা থেকে নাম বাদ দেওয়ার ব্যাপারে পরিবারটি কোনও উচ্চবাচ্যও করেনি।”
তৃণমূল প্রার্থী শেফালীদেবীর অবশ্য দাবি, বিষয়টি তাঁর জানা নেই। তাঁরা বিপিএলের কোনও সুযোগ-সুবিধাও নেন না। তৃণমূল নেতা সুনীলবাবুও বলেন, “আমরা বিপিএল তালিকায় নাম তোলার জন্য কোথাও দরবারও করিনি। এর পিছনে আমাদের কোনও হাত নেই।” তিনি জানান, বিষয়টি নজরে আসতেই তিনি তৎপর হয়েছেন। শীঘ্রই মহকুমাশাসকের কাছে পরিবারের নাম বিপিএল তালিকা থেকে বাদ দেওয়ার আবেদন জানাবেন তিনি। দুর্গাপুরের মহকুমাশাসক আয়েষা রানি জানান, বিষয়টি খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
কেন্দ্রীয় সরকার বিপিএল তালিকায় অন্তর্ভুক্তির ব্যপারে কয়েকটি সূচক বেঁধে দিয়েছে। বাড়ি আছে কি না, থাকলে সেই বাড়ি কাঁচা না পাকা, জামাকাপড়, খাদ্য নিরাপত্তা, শৌচাগার আছে কি না, ক্রয় ক্ষমতা, সাক্ষরতা, পরিবারের সদস্যদের কর্মক্ষমতা, বাড়ির শিশুদের পড়াশোনা ইত্যাদি বিষয়ে সমীক্ষা চালিয়ে নম্বর দেওয়া হয়। মোট নম্বর ৫২। ১৫ নম্বরের বেশি পেলে সেই পরিবার বিপিএল তালিকাভুক্ত হয় না। তার কম পেলে ঠাঁই হয় বিপিএল তালিকায়।
কয়েক মাস আগেই দুই সিপিএম কাউন্সিলর সুধীর রুইদাস ও রুমা পালের পরিবারের নাম বিপিএল তালিকায় রয়েছে, এই অভিযোগে তৃণমূল সরব হয়। মেয়রের কাছে এ ব্যাপারে তারা লিখিত অভিযোগও জানায়। তৃণমূলের অভিযোগ, দুই পরিবারেই সরকারি চাকুরে থাকা সত্ত্বেও দলীয় প্রভাব খাটিয়ে বিপিএল তালিকায় নিজেদের পরিবারের নাম ঢুকিয়ে নিয়েছেন ওই দুই কাউন্সিলর। দু’জন কাউন্সিলরই অবশ্য দাবি করেছিলেন, তাঁদের পরিবারের নাম বিপিএল তালিকায় থাকার কথা তাঁরা জানতেনই না। মেয়র দুই কাউন্সিলরকেই বিপিএল তালিকা থেকে দ্রুত নাম বাদ দেওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেন। ওই দুই কাউন্সিলরকেই সিপিএম এ বার প্রার্থীপদ দেয়নি। দলের জেলা সম্পাদক অমল হালদারের বক্তব্য, “ও সব বরদাস্ত করা হবে না।”
এমন পরিস্থিতিতে স্বচ্ছল তৃণমূল প্রার্থীর পরিবারের নাম বিপিএল তালিকায় থাকার বিষয়টিকে ওই ওয়ার্ডের প্রচারে হাতিয়ার করতে চাইছে সিপিএম। স্থানীয় বোরো কমিটির চেয়ারম্যান তথা সিপিএম কাউন্সিলর শিবশঙ্করবাবুর কথায়, “বিষয়টিকে আমরা এ বারের পুরভোটে প্রচারে তুলব।” তৃণমূল নেতা সুনীলবাবু বলেন, “সরকারি নিয়ম অনুযায়ী আমার পরিবারের নম্বর ১৫-এর নীচে হতে পারে না। আমার পরিবারকে হেয় করার জন্য উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে সিপিএম এমন ঘটিয়েছে।” |