গ্রাম পঞ্চায়েতে ইন্দিরা আবাস যোজনায় ঘর প্রাপকদের তালিকায় নাম উঠেও বিপাকে পড়েছেন রিকশা চালক ছবি দাস। প্রথম কিস্তির টাকা দিয়ে কিছু কাজ করেছেন। দ্বিতীয় কিস্তির টাকার জন্য তিন মাস ধরে পঞ্চায়েত দফতরে ঘুরে বেড়াতে হচ্ছে তাঁকে। সামনে বর্ষা। কেমন করে দিন কাটবে সেই দুশ্চিন্তায় তাঁর মতো দিশেহারা দশা হয়েছে হরিশ্চন্দ্রপুরের ১৩৩ জন উপভোক্তার। অন্য দিকে দুঃস্থ বিধবা হেমা দাস ছ’মাস আগে বিধবা ভাতার আবেদন করেন। অনুমোদনের পরে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টও খোলেন। কিন্তু ভাতা জোটেনি। হেমাদেবীর মতো দশা হয়েছে এলাকার ৩০০ অসহায় বিধবার। কংগ্রেস পরিচালিত মালদহের হরিশ্চন্দ্রপুর গ্রাম পঞ্চায়েতে বন্ধ রয়েছে দুঃস্থ বাসিন্দাদের ত্রাণের চাল বিলি থেকে শুরু করে রাস্তা, নলকূপ, নিকাশি নালা সংস্কার সহ বিভিন্ন উন্নয়নের কাজ। কারণ, কর্মীর অভাব। পঞ্চায়েতের উন্নয়নমূলক কাজকর্ম দেখভালের দায়িত্ব যার সেই নির্মাণ সহায়ক নেই। নেই এগজিকিউটিভ অ্যাসিস্ট্যান্ট। আছেন শুধু সচিব। ওই পরিস্থিতিতে পঞ্চায়েত প্রধানও নিয়মিত দফতরে না-যাওয়ায় উন্নয়নের কাজ লাটে উঠেছে বলে অভিযোগ। পঞ্চায়েত দফতরে কর্মী সমস্যার কথা প্রশাসনের কর্তারা অস্বীকার করেননি। হরিশ্চন্দ্রপুর-১ ব্লকের বিডিও সজল তামাং বলেন, “দু’জন গুরুত্বপূর্ণ কর্মী না-থাকায় সমস্যা হচ্ছে। দ্রুত সমস্যা সমাধানের চেষ্টা চলছে। এ ছাড়াও প্রধান নিয়মিত দফতরে যাচ্ছেন না বলেও অভিযোগ পেয়েছি। সব দিক খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” ২১ সদস্যের ওই গ্রাম পঞ্চায়েতে গত নির্বাচনের পরে প্রধান হন অর্চনা চক্রবর্তী। এক বছর আগে গোষ্ঠী দ্বন্দ্বের জেরে অনাস্থায় তিনি অপসারিত হলে প্রধান হন খুকুমণি দাস। কয়েক মাস ঠিকঠাক চললেও ফের দলের সঙ্গে প্রধানের ঠান্ডা লড়াই শুরু হয়ে যায় বলে অভিযোগ। কংগ্রেস সূত্রে জানা গিয়েছে, দ্রুত উন্নয়নের কাজ করার জন্য দলের তরফে ৩ জনের কোর কমিটি তৈরি করা হয়। সেটা মেনে নিতে না পারায় প্রধান দফতরে কম যাতায়াত করছেন। তার উপরে ৩ মাস আগে দুই কর্মী বদলি হওয়ায় সমস্যা আরও প্রকট হয়েছে। যদিও প্রধান খুকুমণি দাস বলেন, “দফতরে যাই না এটা ঠিক অভিযোগ নয়। অনেক সময় এলাকায় যেতে হয়। সেজন্য সব সময় দফতরে থাকা সম্ভব হয় না। বড় পঞ্চায়েত এলাকা হওয়ায় কাজের চাপও বেশি। দু’জন কর্মী নেই। এ জন্য কাজের সমস্যা হচ্ছে। দলের সঙ্গে আমার কোনও বিরোধ নেই।” গ্রাম পঞ্চায়েত সূত্রে জানা গিয়েছে, বিধবা ভাতার জন্য ৩০০টি আবেদন পঞ্চায়েতে পড়ে আছে। ব্লক থেকে ২০০ জনের বার্ধক্য ভাতার অনুমোদন মিললেও সব খতিয়ে দেখে প্রধানের স্বাক্ষর না-মেলায় টাকা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। নলকূপ সংস্কারের টেন্ডার হয়ে গেলেও নির্মাণ সহায়ক না-থাকায় কাজ শুরু করা যাচ্ছে না। ছবি দাস বলেন, “আইএওয়াই যোজনার অর্ধেক টাকা না মেলায় বাড়ির ছাদ করতে পারছি না। কবে টাকা মিলবে সেটাও বুঝতে পারছি না।” হেমাদেবী বলেন, “বিধবা ভাতা পাব বলে তিন মাস আগে অ্যাকাউন্ট খুলেছি। কিন্তু কবে টাকা পাব জানি না।” এ জন্য জেলা কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক মোস্তাক আলম কর্মী সমস্যাকে দুষেছেন। তিনি বলেন, “পর্যাপ্ত কর্মী নেই। তাই উন্নয়নের কাজে সমস্যা হচ্ছে।” |