|
|
|
|
|
‘রোল’কাতার কড়চা
মুঘলেরা পরোটা বানাতে শিখিয়েছিল, কিন্তু তার পর সেই
পরোটা
গুটিয়ে-টুটিয়ে
বাঙালি যা করে দেখাল,
তাকে রোলারকোস্টার
ছাড়া
আর কীই বা বলি!
রোল-কল জারি থাকুক।
জানাচ্ছেন অঞ্জন চট্টোপাধ্যায় |
|
|
হাতে কলমের বদলে ক্ষমতা থাকলে শহরটার নাম পালটে দিয়ে রোলকাতা রাখতাম। যে শহরের অলি-গলি-পাকস্থলী জুড়ে কুটির শিল্পের মতো রোল-এর দোকান তাকে খামখা কোল-এ করে তুলে রাখার মানেই দেখি না আমি। মুঘলেরা পরোটা বানাতে শিখিয়েছে, বাঙালি সেই পরোটার পাততাড়ি গুটিয়ে গুটিয়ে বানিয়ে ফেলেছে রোল। হ্যাঁ, সেই রোল যা কিনা রীতিমত কলকাতা রক করছে বহু দিন হল।
গোলকায়নের বোকাবাক্সে যতই জিঙ্গল বাজুক, ম্যাকের বাবা খ্যাঁক হয়ে কলকাতার রোল কল চলছে, চলবে! ‘সাবওয়ে’ হোক বা ফ্লাইওভার, কলকাতার জিভের থেকে ডাবল আন্ডা চিকেনের স্বাদ ভবি ভোলবার নন। সপ্তাহের যে কোনও দিন পাইকপাড়া থেকে পাটুলি অবধি রাউন্ড মারুন, দেখবেন গ্লোবালকে গো-হারা হারাচ্ছে এই লোকাল প্লেয়াররা। আসলে, স্বাদের বিশ্বে একনায়কতন্ত্র চলে না, জনগণতন্ত্রের সেখানে একটাই প্রতীক, সেই জিভ চিহ্নে ছাপ রাখতে না পারলে, ব্র্যান্ড বাজা বারাত হতে বাধ্য। আর, এখন তো দেখি ঠ্যালায় পড়ে পাঁচতারা হোটেলও নাম পালটে সেই পাঁচুদার রোল-ই তাদের স্ন্যাকস মেনুতে রাখছে। অতএব, স্বাদের প্রবেশ অবাধ।
আমাদের ছোটবেলায় কিন্তু রোল ব্যাপারটার নাম-গন্ধ ছিল না। আশির দশকে, আমাদের প্রথম যৌবনে, তার সঙ্গে প্রথম অভিসার। মূলত, বেকার যুবকের অন্নসংস্থানের অন্যতম প্রধান হাতিয়ার ছিল এই রোল সেন্টারগুলো। বিহারি ফুচকাওয়ালাকে কম্পিটিশনে ফেলে ভাইরাসের মতো ছড়িয়ে পড়েছিল বাঙালির এই স্ন্যাকস বার। লোকজন আমাকে রসনাশিল্পে কৃতীর সম্মান দেন, আমি কিন্তু বাঙালির উদ্যোগপর্বে এই মানুষগুলির কৃতিত্বও কিছু কম দেখি না। এমন ‘স্পেশালিটি’ রান্নায় তাঁরাই বা পিছিয়ে কোথায়? |
|
ছবি: দেবাশীষ দেব |
পাড়ার মোড় থেকে পুজোর প্যান্ডেল অবধি চোখের খিদে মেটাতে এই রোলের কোনও বিকল্প নেই। নিজাম, বাদশা বা পার্ক স্ট্রিটের কুসুম স্ন্যাকস বার বা হট কাটি রোল তো কিংবদন্তি। রোলের দুনিয়ায় রকস্টার এরা। পাড়ার আটপৌরে রোল শপগুলোর চেয়ে এদের ভ্যারাইটি ও
ভ্যালু কিঞ্চিৎ বেশি। আর সাবেক যমুনা সিনেমা হলের পাশে বিফ রোল? আহাহ, ডোডো পাখির মতো হারিয়ে গিয়েও আজও তার স্বাদ জিভে লেগে আছে। যতই বুটিক রেস্তরাঁ হোক, হোক ঝাঁ-চকচক শপিং মলের ফুড কোর্ট, কলকাতা বেঁচে থাকবে তার ‘ফুড’পাথের রসে ও রসনায়। আসলে, এক একটা শহরের সঙ্গে এক একটা স্বাদ জড়িয়ে থাকে। মুম্বইয়ের যেমন বড়া পাও, কলকাতার তেমনই রোল। তাই, দিনে দিনে শহরটার যতই ভোল বদলাক,
রোল বদলাবে না!
|
|
|
|
|
|