|
|
|
|
|
জুতসই ফিট
সুপারহিট |
সুন্দর পোশাকেও সৌন্দর্য অধরা থাকার কারণ, ওই কাট বা ফিটিংস আপনার জন্য
যথাযথ নয়।
ঠিক ফিট ও কাট চিনবেন কী ভাবে? জানাচ্ছেন চিরশ্রী মজুমদার |
সুন্দর একটি পোশাক চোখে লাগল, ঝটপট সেটা নিয়ে ট্রায়াল ঘরে ঢুকলেন। তার পরই মন চৌচির। ধ্যাৎ, মানাচ্ছেই না আমায়। কিংবা সেটার ওপর এমনি লোভ জন্মাল, যে ওই চিলতে ঘরটার আয়নাগুলো কী যে বলল, সেটা তেমন পরিষ্কারই হল না। এ বার আসল সময়ই মহা মুশকিল। অত সুন্দর একখানা জামা, কিন্তু কই কেউ তো ভাল কিছু বলছে না। নিজেরও স্বচ্ছন্দ ঠেকছে না। হাতাটা বার বার টেনে তবে ঠিক জায়গায় রাখতে হচ্ছে। ঠিক এই জামাটার সঙ্গে এই ট্রাউজার্সটা কেমন যেন দেখাচ্ছে। রং মানিয়েছে ঠিকই, তবুও বেখাপ্পা দেখাচ্ছে। একটু খতিয়ে দেখলে কিন্তু আসামিকে অচেনা লাগবে না। আসলে তো জামাটা নয়, ওই বিশেষ কাটটা আপনাকে মানায়নি এবং ফিটও করেনি। পরার পর পোশাক ও পোশাকসহ আপনাকে কতটা সুন্দর দেখাবে, সেটা যে অনেকটাই নির্ভর করে এই দু’টি বিষয়ের ওপর।
এম্পায়ার লাইন, মারমেড, বল গাউন, বাটারফ্লাই, অ্যাসিমেট্রিক্যাল-কাট হয় প্রচুর রকম। ফ্যাশন সম্বন্ধে বিরাট কিছুও জানতে হবে না, কেবল বার কয়েক দোকানে জামাকাপড়ের ট্যাগ দেখলেই এ রকম অনেক কাটের কথাই জানবেন। না জানলেও নামগুলো থেকেই পোশাকটা আকৃতিতে ঠিক কেমন কিছুটা আন্দাজ করাই যায়। স্কিনি, স্ট্রেট, বেলবটমস, লো হাই বা মিড ওয়েস্ট বিভিন্ন রকমের পোশাকের ফিটিংস সম্পর্কেও কিছুটা একই মন্তব্য প্রযোজ্য। এ বার প্রশ্ন, আপনার জন্য কোন কাট, কোন ফিটিংটা সেরা, সেইটা বুঝবেন কী করে?
|
|
প্রথমে চিনতে হবে নিজেকে। আপনার শরীর কোন আকৃতির, সেই ‘বডি শেপ’টা বুঝে নিয়ে, তবে পোশাক বাছাই। সব মানুষের শরীরের আকৃতি তো মোটেও এক রকম নয়। কারও চেহারা অ্যাথলেটিক ধাঁচের, কারওর সঙ্গে তুলনা টানা যায় আপেল বা ন্যাসপাতির আকারের। একেবারে ব্যাকরণ মাফিক আওয়ার গ্লাস সদৃশ (বালিঘড়ির মতো) চেহারা খুব বিরল। সাধারণ মানুষ বলুন বা সিনেমা মডেলিং জগৎ, সব জায়গাতেই তাই। সে ক্ষেত্রে, চেহারার প্রয়োজন বুঝে পোশাক পরলে, যে কোনও বডি শেপকেই ‘পারফেক্ট ফিগার’ বা নিখুঁত শরীর নকশা বলে মনে হবে। পোশাকে সুন্দর মানাবে।
কিম কাদার্শিয়ানের মতো আওয়ারগ্লাস ফিগার হলে, এমন পোশাক বাছুন যেটা ওই ভাঁজগুলোয় লেপ্টে থাকবে। তাই বলে শরীর আঁকড়ে থাকা টাইট ড্রেস একেবারেই নয়। অ্যাসিমেট্রিক্যাল প্যাটার্ন (এই পোশাকের নির্দিষ্ট আকৃতি নেই, কোনও অংশ কাটা বা একাধিক কাপড়ের লেয়ার যুক্ত হয়। দেখে মনে হয় কাপড় পরতে পরতে জড়িয়ে রাখা শরীরে) তো আপনার জন্য তুলনাহীন। খুব সুন্দর দেখাবে মাঝখানে বেল্ট দেওয়া ট্রেঞ্চ কোট (রেনকোটের কাটটাই ফ্যাশন অভিধানে ট্রেঞ্চকোট নামে পরিচিত) পরলে। শিফন ড্রেস এই চেহারাতেই ভাল দেখায়। এ ছাড়া, ভি নেক কার্ডিগান বা বোট নেক(কাঁধ অংশটা বেশ ছড়ানো হয়) ব্লাউজ টপ, টিউলিপ ফুলের আকৃতির স্কার্ট, করসেট, বা একটু খোলামেলা পোশাক, সব কিছুই আপনাকে দুরন্ত মানাবে।
ললিপপ বডি শেপ-এর ক্ষেত্রে শরীরের ঊর্ধ্বাংশ ভারী হয়, অথচ পা দু’টো তুলনায় সরু, লম্বা দেখতে লাগে। ঠিক এই চেহারাই অভিনেত্রী সলমা হায়েকের। আপনি ফিটেড ভি নেক টপ, হল্টার নেক পোশাক পরুন। বোতাম দেওয়া, ফুলস্লিভস সেমিফর্মাল শার্টে চমৎকার মানাবে। কোমরের অংশ থেকে সরু হওয়ায়, এ লাইন স্কার্ট বা পেনসিল স্কার্ট ভাল অপশন হবে। স্কিন ফিট ডেনিমের থেকেও ভাল হয় বুট কাট ডেনিম কিনলে। এগুলো হাঁটু পর্যন্ত চাপা, তার পর সামান্য ফ্লেয়ার (ঘের) দেওয়া হয়।
ন্যাসপাতির মতোও গঠন হয় অনেকেরই। যেমন জেনিফার লোপেজ। কাঁধ সরু, ঊর্ধ্বভাগের তুলনায় কোমরের নীচের অংশ ভারী হয়। আপনাকে মানাবে এম্পায়ার লাইনের জামা (কোমর থেকে রানির পোশাকের মতো খানিকটা ঘের থাকবে), হাঁটু ঝুলের এ লাইন স্কার্ট। বোট নেক টপ লো রাইজ ডেনিম দিয়ে পরলে চেহারার প্রোপোরশন (বিভিন্ন অংশের পরিমাপগত অনুপাত বা সাম্য) ঠিকঠাক লাগবে। ছোট ঝুলের স্কার্ট পরলে ঘের রাখুন, টপের ক্ষেত্রে গলার নীচটায় পাথর ইত্যাদির অলংকরণ থাকবে। টপটা লেপেল কাট (ব্লেজারে যেটা থাকে) দেখে কিনুন।
স্কেলের মতো সোজাসাপ্টা, রোগা গড়নের চেহারা হলেও অনেক উপায় আছে। প্লিট দেওয়া শার্ট বা টপ কিনুন, তাতে চেহারায় নরম ভাব আসবে। রাফলড ব্লাউজ (অনেক কুচি, লেস, ফ্রিল ইত্যাদি বসানো ঘটিহাতা জামা)। আনুভূমিক স্ট্রাইপ দেওয়া পোশাকেও গ্ল্যামারাস লাগবে। জ্যাকেট কিনুন অনেক। চেহারায় মেয়েলি ভাব ফোটাতে প্রচুর বিড বসানো অ্যাকসেসরি ব্যবহার করুন। যেমন থ্রি লাইন নেকপিস, বড় দুল, স্কার্ফ ইত্যাদি। হলিউডের কাইরা নাইটলিরও এমনটাই চেহারা, তবুও তাঁকে যথেষ্ট কমনীয় দেখায়। বরং ইচ্ছে হলে হট প্যান্টস, স্প্যাগেটি স্ট্র্যাপ প্রভৃতি অত্যাধুনিক পোশাক পরতে পারেন। এই সব পোশাকে কখনওই দৃষ্টিকটু দেখাবে না।
বললাম তো শুধুমাত্র প্রধান কয়েকটা আকৃতির কথা। দোকানগুলোয় প্রত্যেকেরই উপযুক্ত কাট আর ফিটিংসের পোশাক থাকে। তাই শুধু পোশাকটি ভাল দেখতে লাগছে বলে, বা স্টোরের ছেলে বা মেয়েটি কেনানোর জন্য সবেতেই মাথা নাড়ছে বলে, ফস করে অন্য কারও পোশাক কিনে বসবেন না। ফর্মুলাগুলো মাথায় রেখে শপিং করুন। দেখবেন কিছু দিনের মধ্যে নিজেরই ফিটিংস আর কাট সম্পর্কে পোক্ত একটা আইডিয়া হয়ে গেছে। তখন, একটা প্রাত্যহিক ধরনের দেখতে সাজই দারুণ বাহবা পাবে। আসল কথাটা তো সেই ইউরোপের রূপকথার পাতাতেই ছিল। তখন উপমাটা জুতোর হলেও পরিধানের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। যতই সুন্দর হোক, ঠিক মাপমত না হলে কোথায় সিন্ডারেলা? |
|
|
|
|
|