|
|
|
|
|
ডায়াবিটিস’কে বিট করার টেকনিক
শুধু ওষুধ খেলেই ডায়াবিটিস সারবে না। সঙ্গে শরীরচর্চা
আর সুস্থ জীবনযাপনও সমান জরুরি। জানালেন
ফিটনেস এক্সপার্ট বিশ্বজিৎ তপাদার |
|
|
শরীরচর্চাকে অবজ্ঞা করে শুধু ওষুধ বা ডায়েটিং দিয়ে ডায়াবিটিসের সমস্যাকে মোকাবিলা করা শক্ত। কারণ ডায়াবিটিসের ওষুধ, নিয়মিত ব্যায়াম এবং ঠিক খাদ্যাভ্যাস তিনের ঠিকঠাক সমন্বয়ই ডায়াবিটিসকে কাবু করার এক মাত্র পথ। ডায়াবিটিস ধরা পড়লে বা পারিবারিক ইতিহাস থাকলে জীবনযাত্রা নিয়ে সতর্ক হোন। ডায়াবিটিসকে অবহেলা করলে পরবর্তী কালে ম্যাক্রোভাসকুলার বা লার্জ ভেসলস্ ডিজিজ হতে পারে। যেমন অ্যানজাইনা, মায়োকার্ডিয়াল ইনফ্রাকশন, সেরিব্রাল স্ট্রোক, পায়ে ক্র্যাম্প, পায়ের পাতায় ঘা (ডায়াবিটিক আলসার) ইত্যাদি। অথবা মাইক্রোভাসকুলার বা স্মল ভেসেলস ডিজিজ দেখা যায়। যেমন চোখের রেটিনার কার্যকারিতা কমে যাওয়া, কিডনির সমস্যা, স্নায়ুর রোগ বা গায়ে হাত পায়ে জ্বালা জ্বালা মতো হয়। অবহেলা করলে জীবনহানিও হতে পারে। পরিসংখ্যান বলছে ভারতের মোট জনসংখ্যার আট থেকে নয় শতাংশ মানুষই এই মুহূর্তে ডায়াবিটিসে আক্রান্ত। সংখ্যাটি বিপুল।
স্বাভাবিক বা তুলনামূলক ভাবে কম ওজনের ছোট ছোট ছেলেমেয়ে থেকে শুরু করে চল্লিশের কম বয়সী পুরুষ বা মহিলাদের (যাঁদের পারিবারিক ইতিহাস রয়েছে) মধ্যে এক ধরনের ইনসুলিন-নির্ভর ডায়াবিটিস দেখা যায় যাকে IDDM বা টাইপ ওয়ান ডায়াবিটিস মেলিটাস বলা হয়। তবে মোট ডায়াবিটিস রুগীর শতকরা নব্বই থেকে পঁচানব্বই জনই কিন্তু ইনসুলিন-নির্ভর নয়, এই রকম NIDDM বা টাইপ টু ডায়াবিটিসে ভোগেন। চল্লিশোর্ধ্ব পুরুষ ও মহিলা, পরিবারিক ইতিহাস রয়েছে, আর তার সঙ্গে দৈহিক ওজন অতিরিক্ত থাকলে (ওবেসিটি) টাইপ টু ডায়াবিটিসে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে।
অতিরিক্ত তৃষ্ণা, খুব বেশি খিদে, ঘন ঘন মূত্রত্যাগ, অত্যধিক ক্লান্তি এবং প্রাণশক্তির অভাবের মতো লক্ষণগুলি ডায়াবিটিসকেই ইঙ্গিত করে। এদের একটাও অনুভূত হলে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে আপনার ব্লাড সুগারের মাত্রাটা যাচাই করে নিন। কারণ দ্রুত রোগ নির্ণয়ই ডায়াবিটিসের মোকাবিলায় সাফল্য পাওয়ার মূল চাবিকাঠি। |
|
ডায়াবিটিসে শরীরচর্চা কেন জরুরি?
ওবেসিটি কম করতে না পারলে ডায়াবিটিস আরও চেপে বসবে। অতিরিক্ত ওজনকে কম করতে নিয়মিত শরীরচর্চা ছাড়া উপায় নেই।
শরীরচর্চাই একমাত্র প্রাকৃতিক উপায় যার মাধ্যমে দেহে অবস্থিত ইনসুলিন ভাল ভাবে কাজ করে। এ ছাড়া মাংসপেশীগুলির মধ্যে প্রচুর পরিমাণে এনার্জি ব্যবহৃত হওয়ার ফলে রক্তের মধ্যে মিশে থাকা অতিরিক্ত গ্লুকোজের মাত্রা একটা ভারসাম্যে পৌঁছায়।
এক জন সুস্থ প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের দেহে প্রতি দিন গড়ে ২৫ থেকে ৪০ ইউনিট ইনসুলিন নির্গত হয়। ডায়াবিটিস রুগীদের ক্ষেত্রে চাহিদা বা প্রয়োজনীয়তা আরও বেশি থাকে। নিয়মিত ব্যায়ামের মাধ্যমেই এই ঘাটতিটা সব থেকে ভাল পূরণ হয়।
শরীরচর্চা মনকে ফুরফুরে করে। ডায়াবিটিস আক্রান্তদের জন্য মানসিক আরাম প্রয়োজন।
কী ধরনের শরীরচর্চা করবেন?
ফিটনেস বিজ্ঞানে ব্যায়ামের মাধ্যমে ডায়াবিটিস পরিচর্যা করতে ‘সেফ’ (SAFE)-কেই বেছে নেওয়া হয়েছে। ‘সিম্পল অ্যাচিভেব্ল ফাংশনাল এক্সারসাইজ’ বা ‘সেফ’ই হল ডায়াবিটিস রোগীদের জন্য আদর্শ ব্যায়াম, যার মধ্যে কোনও রকম ‘হাই ইমপ্যাক্ট অ্যাক্টিভিটি’ নেই। প্রতিটি মানুষের জন্য তার ক্ষমতা এবং প্রয়োজন অনুযায়ী কার্ডিয়োভাসকুলার ব্যায়াম, যেমন নিয়ম করে খোলা আকাশের নীচে হাঁটা, অথবা ট্রেডমিল, ক্রসট্রেনার-এ ঘাম ঝরানোর সঙ্গে সঙ্গে সারা শরীরের মাংসপেশিগুলিকে উজ্জীবিত করতে ফ্রি-হ্যান্ড এবং রেজিসটেড (বাধা দিয়ে) ব্যায়াম করিয়ে হাত-পা সহ প্রতিটা অঙ্গপ্রত্যঙ্গে রক্তের জোগানের একটা সামঞ্জস্য নিয়ে আসা, মাংসপেশিগুলিকে শুকিয়ে যাওয়া (মাসকুলার অ্যাট্রোফি) থেকে রক্ষা করা এবং হাড়ের সন্ধিগুলির কোমলতা বাড়িয়ে তুলে প্রতিটা ফাংশনাল সফ্ট টিস্যুকে কার্যক্ষম রেখে চলাই ‘সেফ’-এর প্রধান লক্ষ্য। দাঁড়িয়ে, বসে এবং শুয়ে সব রকম ভাবেই ‘সেফ’ করা যায়। হালকা ওজনের ডাম্বেল, রেজিসটেড ইলাসটিক ব্যান্ড, জিম বল সবই ব্যবহার চলবে। তবে নিজস্ব ক্ষমতার বাইরে গিয়ে জোর করে অতিরিক্ত পরিশ্রম করে ব্যায়াম করা ডায়াবিটিস রোগীদের উচিত নয়। এতে সমস্যা বাড়তে পারে। ডায়াবিটিসে অতি মাত্রায় অ্যারোবিক্স, খুব বেশি লাফানো-ঝাঁপানো জাতীয় ব্যায়ামগুলো এড়িয়ে চলা উচিত।
ঘুমের ব্যাঘাত এড়িয়ে চলুন
আন্তর্জাতিক উপদেষ্টা সংস্থা এ সি নিয়েলসন সম্প্রতি পাঁচটি দেশের মানুষের মধ্যে ঘুম নিয়ে এক সমীক্ষা চালিয়েছে। তথ্য বলছে, ভারতে তিরানব্বই শতাংশ মানুষ ঘুম সম্পর্কিত নানা সমস্যায় ভুগছেন।
ন্যাশনাল স্লিপ ফাউন্ডেশন-এর মত অনুযায়ী, ঘুমের ব্যাঘাতের জন্য একাশি শতাংশ মানুষের ডায়াবিটিসের আশঙ্কা বেড়ে যাচ্ছে। হৃদরোগের সম্ভাবনা আটাত্তর শতাংশ এবং মানসিক অবসাদ তেতাল্লিশ শতাংশ বেড়ে গিয়েছে। ঘুমের পরিমাণ ঠিক থাকলে শরীরে ইনসুলিনের পরিমাণ ঠিক মাত্রায় বজায় থাকে। তাই ডায়াবিটিস আক্রান্তদের ক্ষেত্রে উপযুক্ত খাদ্যাভ্যাস, নিয়মিত ব্যায়াম, প্রয়োজনীয় ওষুধের সঙ্গে ঘুমটাও ভাল ও উপযুক্ত পরিমাণে হওয়া চাই।
কী কী খাব
• স্কিম্ড দুধ এবং ওই দুধ দিয়ে ঘরে পাতা দই।
• সমস্ত সবুজ শাকসবজি, বিশেষ করে লাউ, করলা, বিনস্, ঢেঁড়স, বাঁধাকপি, ফুলকপি, সজনে ডাঁটা,
কড়াইশুঁটি, ঝিঙে, পটল এবং অল্প মাত্রায় গাজর, বিট ও পেঁয়াজ চলবে।
• অল্প তেলে রান্না, বেক্ড, তন্দুরি বা গ্রিল করা রান্না।
• ডিমের সাদা অংশ, মাছ, চর্বি ছাড়া মাংস।
• ফলের মধ্যে বেশি করে আনারস, মুসুম্বি, আপেল, তরমুজ, কমলালেবু, পেয়ারা।
• কিডনির সমস্যা না থাকলে বিভিন্ন ডাল, সয়াবিন, রাজমা, ছোলা চলবে।
• ভাত ও আটার রুটি খুবই অল্প পরিমাণে চলতে পারে। ভুট্টার রুটি, যবের রুটি, ডালিয়া চলবে।
• স্যালাডে মুলো, শসা, লেটুস, টমেটো।
যা যা খাব না
• ঘি, মাখন বা বনস্পতিতে তৈরি ময়দার পুরি, পরোটা, শিঙাড়া, সুজি বা অন্যান্য স্ন্যাক্স।
• ডিমের কুসুম, কিমা, সসেজ, হ্যাম, অরগ্যান মিট (লিভার, কিডনি, ব্রেন)।
• ফলের মধ্যে আম, কাঁঠাল, কলা, সবেদা, আঙুর, লিচু এবং খেজুর।
• আলু ও মিষ্টি আলু।
• খোয়াক্ষীর, মিষ্টি দই, মিষ্টি, আইসক্রিম, কুলপি, চকলেট, ক্যান্ডি ও নরম পানীয়।
ডায়াবিটিসে ভুগলে অন্তত ‘রাম’ ও ‘বিয়ার’ এড়িয়ে চলুন। অবশ্যই মনে রাখবেন, ডায়াবিটিস রোগীদের ক্ষেত্রে ধূমপানের মতো শত্রু দ্বিতীয় কেউ নেই।
|
যোগাযোগ: ৯৮৩৬০১৬২১৫ |
|
|
|
|
|