ম্যালেরিয়ার ভয় নেই মহানগরে, বলল ‘হু’ |
নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা |
কলকাতা কি তা হলে ‘ম্যালেরিয়া-মুক্ত’ হয়ে গেল!
অন্তত বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু)-র যে রিপোর্ট নিয়ে শুক্রবার মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায় এই দাবি করলেন, তাতে অনেকটা এমন কথাই বলা হয়েছে। পর্যটকদের জন্য ‘হু’ যে গাইডবুক তৈরি করেছে, সেখানে ওড়িশা, অসম ও পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন শহরে ম্যালেরিয়ার উপদ্রবের উল্লেখ থাকলেও কলকাতাকে সেই তালিকায় রাখা হয়নি। আর ওই গাইডবুক হাতে নিয়ে এ দিন মেয়র বলেন, “রাজ্যের অন্যত্র ম্যালেরিয়ার প্রবণতা থাকলেও কলকাতা ম্যালেরিয়া-মুক্ত বলে রিপোর্ট দিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। এই স্বীকৃতিতে পুরসভা গর্বিত।”
হু-র ওই গাইডবুকে ভারতের যে যে অঞ্চলকে ‘ফ্যালসিপেরাম ম্যালেরিয়া অধ্যুষিত’ বলে চিহ্নিত করা হয়েছে, তার মধ্যে কলকাতা নেই। ফ্যালসিপেরামের ওষুধ প্রতিরোধী ম্যালেরিয়ার ভয়ও মহানগরীতে নেই বলে দাবি করেছে হু-র ইন্টারন্যাশনাল ট্র্যাভেল অ্যান্ড হেল্থ ২০১২ নামের গাইডবুক। তবে শহর ভাইভাক্স ম্যালেরিয়া মুক্ত কি না সে ব্যাপারে কিছু বলা হয়নি। শহর থেকে ফ্যালসিপেরাম ম্যালেরিয়া উল্লেখযোগ্য ভাবে কমে যাওয়ার কৃতিত্ব যে কলকাতা পুরসভার, এ দিন সাংবাদিক সম্মেলন ডেকে সেটাই জানিয়েছেন মেয়র। মেয়র পারিষদ (স্বাস্থ্য) অতীন ঘোষ বলেন, “গত বছর থেকে জরুরি ভিত্তিতে মশা রুখতে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। অ্যানোফিলিস ও এডিস মশার আঁতুরঘর নিশ্চিহ্ন করতে নেমেছেন পুর স্বাস্থ্যকর্মীরা।”
মেয়র বলেন, “কলকাতার বিভিন্ন খালের নোংরা জলে মশার বংশবৃদ্ধি হচ্ছিল। শহরের বাসিন্দাদের স্বস্তি দিতে ওই সব খালে স্পিড বোটে করে নিয়মিত ভাবে মশা মারার ওষুধ ছড়ানো হয়েছে। দীর্ঘ প্রচেষ্টার ফলেই গত মরসুমে এই শহরে মশার উপদ্রব অনেকটা কমানো গিয়েছে।” পুরসভার স্বাস্থ্য বিভাগের অনেক কর্তাকেই মেয়রের এমন মন্তব্য অস্বস্তিতে ফেলেছে। এক স্বাস্থ্যকর্তা পরে বলেন, ম্যালেরিয়া বা ডেঙ্গির মশা নোংরা জলে হয় না। পরিষ্কার জলে ওই মশারা ডিম পাড়ে। মেয়রের মন্তব্যে ভুল বার্তা পৌঁছতে পারে বলেও স্বাস্থ্যকর্তাদের কেউ কেউ মন্তব্য করেন।
গত বছর কলকাতায় ম্যালেরিয়া যে কমেছে তা স্বীকার করলেও তার কৃতিত্ব বাজারে আসা নতুন ওষুধকেই দিয়েছেন ম্যালেরিয়া বিশেষজ্ঞ অমিতাভ নন্দী। তিনি বলেন, “শুধু কলকাতা নয়, দেশের যেখানে যেখানে নতুন ওই ওষুধ ব্যবহার হয়েছে সেখানে ম্যালেরিয়া সংক্রমণ উল্লেখযোগ্য ভাবে কমেছে। কলকাতায় ওই ওষুধ গত দুই বছর ধরে খুব সফল ভাবে প্রয়োগ করা হয়েছে। তার ফলই মিলেছে।” ওই ম্যালেরিয়া বিশেষজ্ঞ বলেন, “এতে আত্মপ্রসাদ লাভের কোনও জায়গা নেই। অতীতে ক্লোরোকুইন সফল ভাবে ম্যালেরিয়া সারাত। এখন ম্যালেরিয়ার জীবাণু ক্লোরোকুইন-প্রতিরোধী হয়ে পড়েছে। ভবিষ্যতে নতুন ওই ওষুধেও যে ম্যালেরিয়ার জীবাণুর মধ্যে প্রতিরোধ ক্ষমতা জন্মাবে না সেই গ্যারান্টি কিন্তু কেউ দিতে পারবে না।” |