‘খুশি’কে দেখে মন ভাল হয়ে যায় চিকিৎসক-নার্সদের
‘খুশি’কে নিয়ে খুশি উপচে পড়ছে সকলের।
মাস দেড়েকের মেয়ে খুশি। জন্মের সময়ে ওজন ছিল দেড় কেজি। বাঁচানো যাবে কিনা তা নিয়েই সংশয়ে ছিলেন টাকি গ্রামীণ হাসপাতালের চিকিৎসকেরা। সদ্যোজাত মেয়েটিকে ছেড়ে হাসপাতাল থেকে পালিয়ে গিয়েছিল তার মানসিক ভারসাম্যহীন মা। এই অবস্থায় মেয়েটির ভবিষ্যৎ নিয়ে ঘোর অনিশ্চয়তা ছিল চিকিৎসক, নার্সদের মধ্যে। কিন্তু প্রাথমিক সেই লড়াইয়ে জিতে গিয়েছেন তাঁরা। খুশির ওজন এখন প্রায় আড়াই কিলো। দিব্যি হাত-পা ছুঁড়ে হাসছে-খেলছে। তাকে নিয়েই এখন সময় কাটে নার্স-আয়াদের। বছর খানেকের আগে তাকে হাসপাতাল ছেড়ে অন্যত্র পাঠাতে চান না বিএমওএইচ তথা ওই হাসপাতালের চিকিৎসক সর্বজিৎ মুখোপাধ্যায়। বললেন, “ইতিমধ্যেই অন্তত ৮-১০ জন মেয়েটি দত্তক নিতে চেয়ে আমাদের সঙ্গে কথা বলেছেন। কিন্তু মেয়েটি সময়ের আগে জন্মেছিল। আমরা ওকে নিয়ে খুবই চিন্তিত ছিলাম। অনেক যত্ন, শুশ্রূষায় ভাল করে তোলা গিয়েছে। আর ক’দিন রেখে ওকে পুরোপুরি সুস্থ করে তবেই কোনও হোমে পাঠাতে চাই।”
ছবি: নির্মল বসু
বিএমওএইচ তো চান। আইনের পথে চলতেই হবে তাঁকে। কিন্তু খুশিকে যাঁরা সারা দিন নিজের সন্তানের মতোই আগলাচ্ছেন, সেই নার্স-আয়াদের ‘মায়ের মন’ খুশিকে কাছ-ছাড়া করতে কখনওই রাজি নয়। জরিনা বিবি, আসমা বিবি, জহুরা বিবি, তুলসি মণ্ডলেরা বললেন, “ওকে ছাড়া আমাদের এখন একটা দিনও কাটে না। বাড়িতে ছেলেমেয়ে আছে। কিন্তু মনে হয় কখন কাজে আসব। দেখতে পাব খুশিকে। ওকে এ ক’দিনেই বড্ডো ভালবেসে ফেলেছি।” নার্স শ্যামলী চৌধুরী, অনিমা হালদারের কথায়, “সর্ব ক্ষণ ওকে কেউ না কেউ চোখে চোখে রাখে। খুশিকে নিয়ে যেন শোরগোল পড়ে গিয়েছে গোটা হাসপাতালে। পরিবেশটাই অন্য রকম হয়ে গিয়েছে খুশি আসায়। ওকে দেখলেই সকলের মন ভাল হয়ে যায়।”
হাসপাতালের সকলে নাম রেখেছেন মেয়েটির। বিএমওএইচ জানালেন, জন্মের পরে খুশির জন্ডিস হয়েছিল। সদ্যোজাতের ক্ষেত্রে তা অস্বাভাবিক নয়। কিন্তু খুশির শারীরিক অবস্থা যা ছিল, তাতে ওই রোগ ভয়ঙ্কর হতে পারত। অনেক যত্ন, সেবায় ভাল করে তোলা গিয়েছে মেয়েটিকে। হাসপাতালের নিজস্ব নানা বরাদ্দ থেকে খুশির জন্য এখন ফিডিং বোতল, তোয়ালে, সাবান-পাউডার আরও নানা কিছু টুকিটাকি কেনা হয়।
কী ভাবে খুশি এল হাসপাতালে?
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানালেন, সেটা গত ৭ এপ্রিলের কথা। হাসনাবাদের রাস্তায় সদ্যোজাত মেয়ে ও তার মাকে পড়ে থাকতে দেখেন স্থানীয় কিছু মানুষ। বছর তিরিশের মানসিক ভারসাম্যহীন মহিলার জ্ঞান ছিল না। মেয়ের শরীর ভেসে যাচ্ছিল রক্তে। রাস্তাতেই জন্মেছিল খুশি। স্থানীয় কিছু মানুষ মা-মেয়েকে নিয়ে আসেন হাসপাতালে। সেখানেই নাড়ি কাটা হয়। মহিলার অসংলগ্ন কথাবার্তায় পরিচয় কিছুই উদ্ধার করতে পারেননি চিকিৎসক-নার্সরা। পর দিন হাসপাতাল থেকে উধাও হয়ে যান ওই মহিলা। আর কোনও খোঁজ মেলেনি। নিয়মমাফিক পুলিশের কাছে অভিযোগ জানানো হয়। শুরু হয় খুশির দেখভাল। আয়া-নার্সরা বলেন, “যত কষ্টই হোক, এক দিন যে ওকে ছেড়ে দিতে হবে, তা জানি। কিন্তু যেখানেই থাকুক, ও যেন ভাল থাকে।”
নিজের মায়ের স্নেহ-যত্ন কোনও দিনই পাবে না খুশি। কিন্তু এত মানুষের কোল যাকে কাছে টেনে নিয়েছে, সকলের স্নেহ-ভালবাসায় তার ভবিষ্যৎ ভরে উঠবে খুশিতে এমনটাই মনে করেন হাসপাতালের সকলে।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.