বেসরকারি হাসপাতালে তো কথাই নেই! অনেক সরকারি হাসপাতালেও জরুরি বিভাগে টাকা মেটালে তবেই চিকিৎসার ব্যবস্থা হয়। ব্যবস্থাটা পুরোপুরি উল্টে ফেলতে বললেন মুখ্যমন্ত্রী তথা স্বাস্থ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সরকারি হাসপাতালের জরুরি বিভাগে ‘আগে টাকা, পরে চিকিৎসা’র প্রবণতা বদলে ‘আগে চিকিৎসা, পরে টাকা’র ব্যবস্থা নিশ্চিত করার জন্য শুক্রবার স্বাস্থ্যকর্তাদের নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।
রাজনৈতিক দায়বদ্ধতার চেয়ে মানুষের প্রাণের মূল্য অনেক বেশি। তাই ফাইলের পাহাড় জমিয়ে না-রেখে স্বাস্থ্যকর্তাদের দ্রুত তা দেখে ছেড়ে দেওয়ারও নির্দেশ দিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী। তাঁর কথায়, “একটা ফাইল সই হতে দেরি হলে হয়তো একটা জীবন চলে যেতে পারে। তাই কিছু জমিয়ে রাখবেন না। মহাকরণে গিয়ে আমার প্রথম কাজ স্বাস্থ্য আর শিক্ষা সংক্রান্ত সহায়তার ফাইলগুলো সই করা। আপনারাও সেটাই করুন।” শুক্রবার স্বাস্থ্য দফতরের দু’টি নতুন বাড়ির শিলান্যাসে প্রধান অতিথি ছিলেন মমতা। গত এক বছরে স্বাস্থ্য ব্যবস্থার প্রভূত উন্নতি হয়েছে বলে দাবি করেন তিনি। ঘোষণা করেন, গরিবদের জীবনদায়ী ওষুধ দেওয়ার জন্য রাজ্য সরকার ‘ওষুধ ব্যাঙ্ক’ চালু করছে। ওই ব্যাঙ্কে কম খরচে ওষুধ দেওয়ার জন্য ওষুধ সংস্থাগুলির কাছে আবেদন জানান মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর কথায়, “কর্পোরেট সংস্থাগুলি যেমন সামাজিক দায়বদ্ধতা পালনে প্রতি বছর মোটা অঙ্কের টাকা খরচ করে, তেমনই আপনারাও সেই কাজে এগিয়ে আসুন।”
স্বাস্থ্যের হাল ফেরাতে অনাবাসী ভারতীয়দেরও সাহায্য চান মুখ্যমন্ত্রী। ওষুধ ব্যাঙ্কে ওষুধের ব্যবস্থা করার সঙ্গে সঙ্গে সরকার জেলায় জেলায় যে-সব নতুন সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতাল চালু করতে উদ্যোগী হয়েছে, সেখানে বিভিন্ন ওয়ার্ডের আর্থিক দায়িত্ব নেওয়ার জন্য অনাবাসীদের অনুরোধ জানান তিনি। শীঘ্রই স্বাস্থ্য দফতরের ওয়েবসাইটের মাধ্যমে এই অনুরোধ ছড়িয়ে দেওয়া হবে।
স্বাস্থ্য দফতরের কর্মীদের সদর্থক ভূমিকার প্রশংসা করতে গিয়ে এ দিন স্বাস্থ্যসচিব সঞ্জয় মিত্রের কাজকে দরাজ সার্টিফিকেট দেন মুখ্যমন্ত্রী। বলেন, “আমি ওঁকে দিল্লি থেকে নিয়ে এসেছি। আগে বিদ্যুৎসচিব থাকাকালীন অনেক উন্নতি করেছিলেন। এখানেও অনেকটা পেরেছেন। স্বাস্থ্য দফতরটি নিজের হাতে রেখেছি বলেই সমস্যাগুলো বুঝতে পারি। ডাক্তার-নার্স নেই, ডায়াগনস্টিক সেন্টারে কর্মী নেই। তা সত্ত্বেও কিছু মানুষ প্রাণপাত করে কাজ করছেন।”
ক্ষমতায় এসেই হাসপাতালে হাসপাতালে আচমকা সফরে বেরোতেন মমতা। সেটা কেন বন্ধ রেখেছেন, এ দিন তারও ব্যাখ্যা দেন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর কথায়, “আমি গেলে জনতা ভিড় করে। সংবাদমাধ্যমেরও হুঁশ থাকে না। স্যালাইনের বোতল ভাঙে। রোগীরা ওয়ার্ডে ঢুকতে পারেন না। অক্সিজেনের মাস্ক খুলে যায়। সংক্রমণ ছড়ানোরও ভয় থাকে।” এই যুক্তি দেখিয়ে হাসপাতালের ভিতরে না-ঢোকার জন্য সাংবাদিকদেরও অনুরোধ করেন মমতা। অনুষ্ঠানে ছিলেন কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়, রাজ্যের স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য, স্বাস্থ্যে বিশেষজ্ঞ কমিটির চেয়ারম্যান সুব্রত মৈত্র, শিশুমৃত্যু রোধে গঠিত টাস্ক ফোর্সের চেয়ারম্যান ত্রিদিব বন্দ্যোপাধ্যায় প্রমুখ। সুব্রতবাবু জানান, তাঁরা হাসপাতালে ঘুরে পরিকাঠামোর সমস্যাগুলি চিহ্নিত করছেন। তিনি বলেন, “অনেক কাজ শুরু হয়। তার পরে মনিটরিং হয় না। এটাও একটা সমস্যা। ছ’মাসের মধ্যে ‘রোড ম্যাপ’ তৈরি হবে। তাতে সমাধানের পথ থাকবে।” |