|
|
|
|
আন্দোলন থেকে সরে উন্নয়নে |
পাহাড়ের জন্য এসএসসি গড়ার আর্জিতে সাড়া রাজ্যের |
নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা |
পাহাড়বাসীর ‘ক্ষোভ’ ও সরকারের ‘বিরক্তি’ আঁচ করে আপাতত আন্দোলন থেকে সরে উন্নয়ন ও কর্মসংস্থান ত্বরান্বিত করতে চাইছে গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা। যার ‘ইঙ্গিত’ মিলল দার্জিলিং পাহাড়ের জন্য পৃথক আঞ্চলিক স্কুল সার্ভিস কমিশন (এসএসসি) গড়ায় মোর্চা নেতাদের তদ্বিরে। দলের সভাপতি বিমল গুরুঙ্গের নির্দেশ মেনে শুক্রবার মহাকরণে শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুর সঙ্গে দেখা করে যত দ্রুত সম্ভব পাহাড়ের জন্য পৃথক এসএসসি গঠনের প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ করার অনুরোধ করেছেন মোর্চার দুই বিধায়ক। রাজ্য তাতে সাড়াও দিয়েছে।
ওই বৈঠকের পরে মহাকরণে মোর্চার প্রচার সচিব তথা কালিম্পঙের বিধায়ক হরকাবাহাদুর ছেত্রী বলেন, “শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে কথা হয়েছে। উনি আশ্বাস দিয়েছেন, দ্রুত পাহাড়ের জন্য পৃথক আঞ্চলিক স্কুল সার্ভিস কমিশন চালু হয়ে যাবে। প্রথম দফায় ২৬৯ জন অ্যাড-হক শিক্ষক-শিক্ষিকার চাকরির স্থায়ীকরণ করা হবে। তার পরে নতুন শিক্ষক নিয়োগের প্রক্রিয়া শুরু হবে।”
পাশাপাশি, মোর্চার প্রচার সচিবের দাবি, ৭ সদস্যের দার্জিলিং স্কুল সার্ভিস কমিশন দ্রুত গঠিত হবে বলেও শিক্ষামন্ত্রী তাঁদের আশ্বাস দিয়েছেন। ঘটনা হল, ‘গোর্খাল্যান্ড টেরিটোরিয়াল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন’ (জিটিএ) চুক্তিতেও পাহাড়ের জন্য পৃথক এসএসসি গঠনের প্রস্তাব রয়েছে। প্রশাসন সূত্রের খবর, সুবাস ঘিসিংয়ের আমলেও দার্জিলিংয়ের জন্য পৃথক এসএসসি ছিল। কিন্তু ২০০৩ থেকে সেটি বাতিল হয়ে যায়। এসএসসি ছাড়াও জিটিএ চুক্তি অনুযায়ী, আগামী শিক্ষাবর্ষের মধ্যেই দার্জিলিং, মিরিক, কার্শিয়ং, কালিম্পংতে একটি করে পলিটেকনিক কলেজ তৈরি করার ব্যাপারেও রাজ্য সরকার উদ্যোগী হয়েছে বলে হরকাবাহাদুর জানান।
রাজ্যের স্কুলশিক্ষা সচিব বিক্রম সেন বলেন, “স্কুল সার্ভিস কমিশন আইনেই দার্জিলিং পাহাড় এলাকার জন্য একটি আঞ্চলিক স্কুল সার্ভিস কমিশন গড়ার কথা রয়েছে। সেই অনুযায়ী কাজ হবে। তবে জিটিএ চুক্তি অনুযায়ী ওই কমিশনের হাতে বাড়থি কিছু ক্ষমতা থাকতে পারে।”
বস্তুত, গ্রীষ্মের পর্যটন মরসুমে তরাই-ডুয়ার্সের কিছু এলাকা জিটিএ-তে অন্তর্ভুক্তির দাবি জোরদার করতে তাঁরা আন্দোলনে নামায় যে পাহাড়-সমতলের জনতা ক্ষুব্ধ তা মোর্চা নেতাদের অনেকেই বুঝতে পেরেছেন। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও আন্দোলনের নামে পাহাড়-সমতলের উন্নয়নে বিঘ্নের খবরে যথেষ্ট ‘বিরক্ত’ বলে মোর্চা নেতাদের কাছে খবর পৌঁছয়। মোর্চার কেন্দ্রীয় কমিটির এক নেতা জানান, পাহাড়বাসীর পক্ষ থেকেও আন্দোলনের চেয়ে উন্নয়ন ও কর্মসংস্থানে জোর দেওয়ার জন্য নানা ভাবে দলীয় কার্যালয়ে বার্তা পৌঁছায়।
দার্জিলিংয়ের ৬৭১টি স্কুলে ৭৭০ জন শিক্ষকের পদ শূন্য রয়েছে দীর্ঘ দিন। অবিলম্বে শিক্ষক নিয়োগ না হলে শিক্ষা ব্যবস্থা ভেঙে পড়ার উপক্রম হতে পারে বলে মোর্চার শীর্ষ নেতাদের কাছে আশঙ্কা প্রকাশ করেন দলের শিক্ষক নেতাদের একাংশ।
পাহাড়ের অস্থায়ী ২৬৯ জন শিক্ষককে দ্রুত স্থায়ীকরণের জন্য ‘চাপ’ও দেওয়া হয়। কারণ, ওই অস্থায়ী শিক্ষকদের জিটিএ চুক্তির পরে দ্রুত স্থায়ী করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন মোর্চা নেতৃত্ব।
হরকাবাহাদুর বলেন, “আলোচনায় সিদ্ধান্ত হয়েছে, ওই ২৬৯ জন দীর্ঘ দিন শিক্ষকতা করার জন্য বিশেষ কিছু নম্বর পাবেন। ওঁদের মধ্যে অনেকে ২০ বছর শিক্ষকতা করছেন। তাঁদের এসএসসি পরীক্ষা দেওয়ার বয়স পেরিয়েছে। কিন্তু এ দিনের বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে, ওই সব আবেদনকারীর ক্ষেত্রে পরীক্ষায় বসার বয়স হিসাব করা হবে, যে দিন থেকে তিনি শিক্ষকতা করছেন সেই দিন থেকে।”
মোর্চার প্রচার সচিবের সংযোজন, “রাজ্য সরকার যখন চাইবে, তখন জিটিএ-র নির্বাচন হতে পারে। আমাদের দল নির্বাচনের জন্য সব সময় প্রস্তুত।” |
|
|
|
|
|