দলে ‘বিদ্রোহ’ সামাল দিতে উদ্যোগী হতে হল দুই ২৪ পরগনায় সিপিএম জেলা নেতৃত্বকে। দক্ষিণ ২৪ পরগনায় নতুন জেলা সম্পাদকমণ্ডলীতে নেওয়া হল আব্দুর রেজ্জাক মোল্লার ‘ঘনিষ্ঠ’ নেতা আব্দুস সাত্তার মোল্লাকে। উত্তর ২৪ পরগনায় গোষ্ঠী-কোন্দল যাতে পঞ্চায়েত ভোটের আগে দলের কাজে প্রভাব না-ফেলে, সেই লক্ষ্যে অমিতাভ নন্দী শিবিরের সঙ্গে ‘বনিবনা’র চেষ্টা চালাল ক্ষমতাসীন গৌতম দেবের শিবির।
দক্ষিণ ২৪ পরগনার জেলা সম্পাদকমণ্ডলীতে নতুন মুখ কুলতলির রামশঙ্কর হালদার এবং ভাঙড়ের সাত্তার মোল্লা। বাদ দিয়েছেন যাদবপুরের বটকৃষ্ণ রায়। বাম জমানায় এলাকায় ‘ছড়ি ঘোরানো’ এবং জমি-বাড়ির দালালি সংক্রান্ত অনিয়মের অভিযোগে আগেই দল থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে যাদবপুরের আর এক প্রাক্তন ‘প্রভাবশালী’ নেতা স্বপন রায়কে। তবে খোকন ঘোষ দস্তিদার এ বারও রয়ে গিয়েছেন। বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের কেন্দ্র যাদবপুরের ‘ভোট-ম্যানেজার’ খোকনবাবুর বিরুদ্ধে দলেই নানা অভিযোগ। দলের নিচু তলার একাংশে তাঁকে নিয়ে ক্ষোভ আছে। কিন্তু অভ্যন্তরীণ সমীকরণের জেরেই তাঁকে এ বারও জেলা সম্পাদকমণ্ডলীতে রেখে দেওয়া হয়েছে। সদস্যদের দায়িত্ব বণ্টন এখনও হয়নি।
সিপিএম সূত্রের খবর, জেলা কমিটির বৈঠকে শুক্রবার সম্পাদকমণ্ডলীতে অন্তর্ভুক্তির জন্য সাত্তারের নাম প্রস্তাব করেন রেজ্জাকই। দলের কাছে প্রাক্তন ভূমিমন্ত্রীর বক্তব্য, ভাঙড় ও ক্যানিং বিধানসভা এলাকা থেকে সম্পাদকমণ্ডলীতে রয়েছেন তিনি ও তুষার ঘোষ। তবে আজকাল তাঁর শরীর সব সময় সুস্থ থাকছে না। তাই ওই এলাকার স্থানীয় নেতা হিসাবে সাত্তারকে সম্পাদকমণ্ডলীতে নেওয়া হোক। রেজ্জাকের প্রস্তাব ‘সর্বসম্মতি’তে পাশ হয়ে যায়। মোট ১৯ জনের জেলা সম্পাদকমণ্ডলী গঠিত হয়েছে এ দিন। তার মধ্যে ১৮ জন নিয়মিত সদস্য। শারীরিক অসুস্থতার জন্য জয়নগরের রবি বোস অব্যাহতি নিয়েছেন। প্রবীণ নেতা শিবদাস ভট্টাচার্যকে ‘আমন্ত্রিত’ সদস্য হিসাবেই রাখা হয়েছে। মহিলা মুখ হিসাবে রয়ে গিয়েছেন খোকনবাবুর স্ত্রী চন্দনা ঘোষ দস্তিদার। সাত্তার আসায় জেলা সম্পাদকমণ্ডলীতে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের প্রতিনিধি হলেন তিন জন রেজ্জাক, সাত্তার এবং মহেশতলার মোরসেলিন মোল্লা। দক্ষিণ ২৪ পরগনার জেলা সম্পাদক সুজন চক্রবর্তী বলেন, “সর্বসম্মতিতেই নতুন সম্পাদকমণ্ডলী গঠিত হয়েছে।” রাজ্য সম্পাদক বিমান বসু এ দিনের বৈঠকে হাজির ছিলেন।
প্রাক্তন মন্ত্রী রেজ্জাককে ‘ঠান্ডা’ রাখতেই ভাঙড়-১ জোনাল কমিটির সম্পাদক সাত্তারকে সম্পাদকমণ্ডলীতে নেওয়া হয়েছে বলে দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা সিপিএমের একাংশের ব্যাখ্যা। দীর্ঘ কয়েক বছর ধরেই জমি অধিগ্রহণ ও শিল্পায়নের প্রশ্নে দলের শীর্ষ নেতাদের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে সমালোচনা করে সিপিএমকে বিপাকে ফেলেছেন রেজ্জাক। তাঁর সেই ‘বিদ্রোহী’ মনোভাব এখনও বজায় রয়েছে, সম্প্রতি রাজ্য কমিটির বৈঠকেও যাননি। কিন্তু নিজের জেলায় রেজ্জাকের ‘প্রভাব’ যথেষ্ট। সেই জন্যই আগামী পঞ্চায়েত নির্বাচনের কথা মাথায় রেখে রেজ্জাককে পুরোপুরি হাতের বাইরে যেতে দিতে চায় না সিপিএম। প্রসঙ্গত, এ দিনের বৈঠকে জেলা সম্পাদক সুজনবাবুর পেশ-করা প্রস্তাব সমর্থন করেন রেজ্জাকই।
পক্ষান্তরে, উত্তর ২৪ পরগনার নতুন জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর প্রথম বৈঠকে এ দিন গৌতমবাবু ও অমিতাভবাবুর মধ্যে একপ্রস্ত মতান্তর হয় বলে সিপিএম সূত্রের খবর। তবে জেলা সম্পাদকমণ্ডলী থেকে ‘অব্যাহতি’ নেওয়ার ভাবনা ছেড়ে অমিতাভবাবু যাতে দলে তাঁর দায়িত্ব পালন করেন, তার জন্য দমদমের প্রাক্তন সাংসদকে অনুরোধ করেন জেলা সম্পাদক গৌতমবাবুই। গোষ্ঠী-দ্বন্দ্ব কাটিয়ে দলের ঐক্যবদ্ধ চেহারা তুলে ধরতে এবং নিচু তলাকে চাঙ্গা করতে মাস জুড়ে জেলার নানা প্রান্তে সাধারণ সম্পাদক প্রকাশ কারাট-সহ একাধিক শীর্ষ নেতাকে এনে জনসভার কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে। সেই কর্মসূচি ও পঞ্চায়েত ভোটের প্রস্তুতিতে নন্দী-শিবিরের ক্ষোভ যাতে ‘বিরূপ’ প্রভাব না-ফেলে, তা দেখাই আপাতত গৌতমবাবুদের লক্ষ্য। কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য রেখা গোস্বামী এ দিনের বৈঠকে ছিলেন, ‘আমন্ত্রিত’ সদস্য হিসাবে এর পরে তিনি নিয়মিতই বৈঠকে আসবেন। পঞ্চায়েত ভোটের বড় অংশ যে-হেতু মহিলা প্রার্থী হবেন, তাই প্রাথমিক আলোচনার জন্য জেলা কমিটির দুই সদস্য তানিয়া চক্রবর্তী ও রমলা চক্রবর্তীকেও বৈঠকে ডাকা হয়েছিল। |