‘চোর’ অপবাদ দিয়ে বিএ তৃতীয় বর্ষের এক পরীক্ষার্থীকে পরীক্ষা চলাকালীন মারধরের অভিযোগ উঠল হাবরা শ্রীচৈতন্য কলেজের কয়েকজন শিক্ষক-শিক্ষিকার বিরুদ্ধে। ‘ঘটনার জেরে অপমানিত’ সুকান্ত দাস নামে ওই ছাত্র শুক্রবার পরীক্ষা দিয়ে বাড়ি ফিরে কীটনাশক খেয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন। আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাঁকে বনগাঁ হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। তাঁর কাছে মেলা ‘সুইসাইড নোট’-এ কলেজের ওই ঘটনার উল্লেখ রয়েছে বলে হাসপাতাল সূত্রের খবর।
অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে শ্রীচৈতন্য কলেজের অধ্যক্ষ ইন্দ্রমোহন মণ্ডলের দাবি, “ওই ছাত্র সম্পূর্ণ মিথ্যা অভিযোগ তুলেছেন। তিনি পরীক্ষার সময়ে নকল করছিলেন। তাই তাঁর খাতা কিছু ক্ষণের জন্য নিয়ে নেওয়া হয়। মারধর
করা হয়নি।”
পুলিশ ও কলেজ সূত্রে জানা গিয়েছে, বাগদার কনিয়াড়ার বাসিন্দা সুকান্ত বনগাঁর দীনবন্ধু মহাবিদ্যালয়ের ছাত্র। তাঁর পরীক্ষার ‘সিট’ পড়েছে শ্রীচৈতন্য কলেজে। গত ৭ মে সংস্কৃত পরীক্ষার সময়ে ‘গার্ড’ দিচ্ছিলেন ওই কলেজের রসায়নের শিক্ষক অতনু মিত্র। জরুরি কাগজপত্র ও পেন ড্রাইভ-সহ তাঁর ব্যাগ রাখা ছিল টেবিলে। অভিযোগ, পরীক্ষার শেষে ব্যাগটি চুরি যায়। সুকান্তর দাবি, পরীক্ষার হলের ‘ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরা’র ‘ফুটেজ’ দেখে অতনুবাবু-সহ কয়েকজন শিক্ষক-শিক্ষিকা তাঁকে ‘সন্দেহ’ করেন। ৯ মে ভূগোল পরীক্ষা চলাকালীন অতনুবাবুরা ‘চোর’ অপবাদ দিয়ে তাঁকে অফিসঘরে ডেকে নিয়ে গিয়ে মারধর করেন বলে বৃহস্পতিবার থানায় অভিযোগ দায়ের করেন সুকান্ত। শুক্রবারেও তাঁকে আর এক দফা হেনস্থা করা হয় বলে অভিযোগ। |
পুলিশ সূত্রের খবর, খোয়া যাওয়া ব্যাগটি অবশ্য হাবরা স্টেশনের এক দোকানদারের কাছ থেকে ৯ মে তারিখেই পাওয়া যায়। তবে সেই ব্যাগে পেন ড্রাইভ পাওয়া যায়নি ।
সুকান্তর দাবি, “সিসিটিভি-র ফুটেজ দেখে অতনুবাবুরা আমাকেই ব্যাগ-চোর হিসেবে শনাক্ত করেন। কিন্তু সেই ফুটেজ দেখতে চাওয়ায় আমাকে মারধর করা হয়। হুমকিও দেওয়া হয়। আমার ব্যাগ, মোবাইল এবং উত্তরপত্রও কেড়ে নেওয়া হয়। পরীক্ষা শেষ হওয়ার আধ ঘণ্টা পরে আমাকে ছাড়া হয়।”
কলেজ কর্তৃপক্ষের দাবি, সিসিটিভি-র ‘ফুটেজ’-এ তাঁরা সুকান্তের ছবি পাননি। তবে অভিযুক্তকে শনাক্ত করতে সুকান্তকে ডাকা হয়েছিল। কিন্তু সুকান্ত ওই ছাত্রের নাম বলতে চাননি। অতনুবাবুর দাবি, “সুকান্ত নকল করছিলেন বলেই তাঁর উত্তরপত্র কিছু ক্ষণের জন্য নিয়ে নেওয়া হয়। ওঁর কাছ থেকে প্রচুর টোকাটুকির কাগজপত্র উদ্ধার করা হয়েছে। ওই সময়েই ওঁকে কিছু ক্ষণের জন্য সিসিটিভি-র ফুটেজ দেখতে পাঠানো হয়েছিল। পরে ওঁর খাতা ফিরিয়ে দেওয়া হয়। পরীক্ষা শেষ করার জন্য বাড়তি সময়ও দেওয়া হয়। আদৌ মারধর করা হয়নি।”
সুকান্ত কলেজ কর্তৃপক্ষের এই দাবি মানতে চাননি। তাঁকে দলীয় সংগঠনের সদস্য দাবি করে তৃণমূল ছাত্র পরিষদের উত্তর ২৪ পরগনা জেলা কমিটির সদস্য অর্ণব পাল বলেন, “সুকান্ত অন্যায় করলে, ওঁর বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া যেত। চোর অপবাদ দেওয়া উচিত হয়নি। উনি যাতে ফের ভূগোল পরীক্ষা দিতে পারেন, সে জন্য বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করা হয়েছে।” |