পৃথিবী জুড়ে যখন সন্ত্রাস বিপুল ভাবে মাথা চাড়া দিয়ে উঠেছে, সকলেই তার থেকে পরিত্রাণের পথ খুঁজছে, অথচ সমাধানের পথটা অজানা। রাগ-অনুরাগ মিউজিক রিসার্চ অ্যাকাডেমি তখন মনে করে সঙ্গীতের মাধ্যমে মানুষের মনের শুদ্ধিকরণ ঘটতে পারে। সমাজ যদি সংস্কৃতিবোধকে ধরে রাখতে সক্ষম হয়, সে সমাজ এগিয়ে যেতে বাধ্য। আমাদের বর্তমান সময়ে সুস্থ পারিপার্শ্বিকতা, সুস্থ সংস্কৃতিবোধ সবই কেমন যেন ছন্নছাড়া। কিন্তু এই ছন্নছাড়া পারিপার্শ্বিকতা থেকে বেরিয়ে আসার পথই খুঁজেছেন স্মৃতি লালা তাঁদের সাম্প্রতিক নিবেদন ‘ক্রাইসিস’-এর মাধ্যমে। আর এই সমাধানের রাস্তা খুঁজতে এখানে সঙ্গীতকেই প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। অভিনব অনুষ্ঠান। সময়োপযোগী পদক্ষেপ।
রাতের পরে যেমন সকাল আসে, তেমন আমাদের সামাজিক ও মানবিক অধ্যায়ে কখনও অন্ধকারের পরেই আলোর উৎস দেখতে পাই। আর এই ‘ক্রাইসিস’ থেকে আলোয় উত্তরণের সন্ধান খুঁজলেন স্মৃতি লালা ও তাঁর সহশিল্পীরা জিডি বিড়লা সভাঘরে সঙ্গীতের মাধ্যমে। একটা সময় ছিল যখন মানুষ একে অপরের দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিতেন। আজ অনেক বিপদেও কেউ কারও পাশে দাঁড়াই না। সত্যিই দুঃসময়। |
আলোকিত প্রাণের দিকে এগিয়ে যেতে, চরম সংকট থেকে মুক্তি পেতে স্মৃতি লালা যে সব কবির রচনা বেছে নিয়েছেন তাঁরা হলেন রবীন্দ্রনাথ, নজরুল, সুভাষ মুখোপাধ্যায়, শক্তি চট্টোপাধ্যায়, গুলজার, সলিল চৌধুরী প্রমুখ।
ভারতমাতার মন্ত্র দিয়ে অনুষ্ঠানের সূচনা আর শেষে এসেছে সারা পৃথিবার সুন্দরকে এক করার আহ্বান। সংকট বা ক্রাইসিসকে চারটি পর্বে ভাগ করা হয়েছে। তা হল: ১.রিয়েলাইজেশন ২.অ্যানালিসিস ৩.সলিউশন ৪.মেসেজ। আর এই প্রতিটি পর্বে সমবেত যন্ত্রসঙ্গীত, সমবেত কণ্ঠ, তালবাদ্য একক ও সমবেত যে ভাবে পরিচালক লালা সাজিয়েছেন তা কাউকে অন্যমনস্ক হতে দেয় না। সঙ্গীত যে সমস্ত সংকট মোচনের অস্ত্র হতে পারে সেই বিশ্বাস অনুভব করেছেন বলেই তাঁদের এই দলবদ্ধ প্রয়াস চূড়ান্ত সার্থক। একটি দলবদ্ধ প্রয়াসে নিবেদনে সামগ্রিক সৌন্দর্য যে কতটা জরুরি সেটি রাগ-অনুরাগ-এর কর্ণধার জেনেছেন বলেই শিল্পের বিভিন্ন মাধ্যমকে একত্রীকরণ করে গড়ে তুলেছেন ক্রাইসিস-এর সমাধান। একেবারে শেষ পর্বে গায়ত্রী মন্ত্রের মাধ্যমে জনমানসের মধ্যে শান্তির বার্তা পৌঁছে দেবার প্রচেষ্টা বা ‘জাগরে জাগ নব মন্ত্রে’ গানের ব্যবহার ও সুকান্ত ভট্টাচার্যের কবিতার ব্যবহার শ্রোতাদের মন কেড়ে নেয়। সত্যিই ‘মানুষ বড় কাঁদছে’, কারও তো কোনও না কোনও ভাবে পাশে দাঁড়াবার প্রয়োজন। এই প্রযোজনায় সঙ্গীতের ব্যবহার ছাড়াও বেশ কয়েকটি সুসংকলিত আবৃত্তি ও পিছনের প্রেক্ষাপটে কিছু ছবির ব্যবহার অনুষ্ঠানটিকে অন্য মাত্রা দিয়েছে।
অনুষ্ঠানের প্রারম্ভে প্রাক্তন রাজ্যপাল শ্যামলকুমার সেন ও তাঁর সহধর্মিণী শুভ্রা সেনকে সংবর্ধনা জানিয়ে উপহার সামগ্রী তুলে দেন বিচারপতি অমিতাভ লালা ও স্মৃতি লালা। শ্যামলকুমার সেন প্রদীপ জ্বালিয়ে অনুষ্ঠানের সূচনা করে দেন। প্রথম পর্বে সঞ্চালক ছিলেন সতীনাথ মুখোপাধ্যায়। |
সম্প্রতি ইন্দুমতী সভাগৃহে কাব্যলোক আয়োজিত ‘ফাল্গুনী সন্ধ্যা’য় গান ও কবিতা শোনালেন বিভিন্ন শিল্পী। শুরুতেই সুস্মিতা দত্তের পরিচালনায় শোনা গেল সমবেত সঙ্গীত ‘ফাগুন হাওয়ায় হাওয়ায়’। এ দিনের অন্যান্য শিল্পী ছিলেন শ্রীকুমার চট্টোপাধ্যায়, সুছন্দা ঘোষ, সুস্মিতা দত্ত, মানসী ভট্টাচার্য, প্রতিমা গঙ্গোপাধ্যায়, জয়তী ভট্টাচার্য, শক্তি বন্দ্যোপাধ্যায় ও মালবিকা ভট্টাচার্য। একক আবৃত্তিতে ছিলেন সুজিত দত্ত। সুছন্দা ঘোষের ‘আমার মল্লিকা বনে’, সুস্মিতা দত্তের ‘কেউ বলে ফাল্গুুন’, মানসী ভট্টাচার্যের ‘মধুকালে এল’, মালবিকা ভট্টাচার্যের ‘দিয়ে গেনু বসন্তের’ ও প্রতিমা গঙ্গোপাধ্যায়ের ‘বসন্তে আজ’ গানগুলি উল্লেখযোগ্য। কবিতা পাঠ করলেন সুজিত দত্ত। শোনালেন ‘আজি কার দিন’, ‘এই তীর্থ দেবতার’ প্রভৃতি। |