|
|
|
|
|
|
|
মুখোমুখি... |
|
আমি মানুষটাই তাৎক্ষণিক |
স্মৃতি নয়। প্রচণ্ড বর্তমানে। বয়সটা যে মনে মনে এখনও বিশ। আগামী পরশু
যদিও তিনি ৯০-এর চৌকাঠে। মৃণাল সেন। মুখোমুখি সংযুক্তা বসু |
পত্রিকা: আইপিএল দেখছেন?
মৃণাল: অবশ্যই। আইপিএল-এর মধ্যে এক ধরনের তারুণ্য আছে। খুব পেটাপেটি করে অল্প সময়ে খেলা হয়। ক্রিকেটের কথাই যখন উঠল আরেকটা কথা বলি। সচিন যে রাজ্যসভায় সদস্য হয়ে যাচ্ছে এতে আমি খুব খুশি। সচিন খুব বড় মাপের মানুষ। এক কথায় অসাধারণ। আশা করি রাজ্যসভায় ওর উপস্থিতি, নানা বিষয়ে ওর মূল্যবান মতামত নানা দিক থেকে কাজে লাগবে।
পত্রিকা: কিন্তু এতে তো সচিনের স্পোর্টসম্যানের ভাবমূর্তিতে রাজনৈতিক রং লেগে গেল...
মৃণাল: আমার তা মনে হয় না।
পত্রিকা: আর দু’দিন বাদেই ৯০ বছরে পা দেবেন। কেমন লাগছে?
মৃণাল: (মুচকি হাসি) মেজাজে আছি। তবে নব্বই-ঊননব্বইটা শুনতে ভাল লাগে না। বরং ইংরেজিতে এইট্টি নাইন বললে খুশি হব।
পত্রিকা: কেন, অসুবিধে কী?
মৃণাল: ছবিতে দেখেছি একশো বছর পার হয়েও কী শক্তপোক্ত নীরদ চৌধুরী বাগানে হোসপাইপ দিয়ে গাছে জল দিচ্ছেন। কিন্তু আমার কেমন যেন লাগে ওই নব্বই-টব্বই বললে। |
|
ছবি: দেশকল্যাণ চৌধুরী |
পত্রিকা: ঠিক আছে। ৯০-য়ের কথায় যাব না। কিন্তু সময় তো অনেকটা গেল। এখন পিছন ফিরে দেখলে জীবনের কোন ভুলগুলো না করলেই ভাল হত বলে মনে হয়?
মৃণাল: (একটু ভেবে) অনেক সময় অকারণে শত্রু তৈরি করেছি। কম কথা বললে ভাল হত। ঘটনা-দুর্ঘটনায় তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া করেছি বহুবার। সংযমী হওয়া উচিত ছিল। আজকাল নিজের ভুলত্রুটিগুলো বুঝিও। ছবি যখন করেছি, ছবিতেও অনেক গোলমাল করেছি। আবার ঠিকও করেছি। আমার ছবিগুলো যখন দেখি মনে হয়, উফ্ফ্ এই ছবিটা যদি আবার নতুন করে করা যেত। আই উইশ আই কুড ডু ইট অল ওভার এগেন। বারবারই মনে হয় সেই ছবি সম্পর্কে যে কনক্লুশান ছিল সেটা বদলাতে পারলে ভাল হত। সিদ্ধান্তের তো শেষ নেই। দৃষ্টিভঙ্গি কালে কালে পাল্টায়। সো আই ওয়ান্ট টুকারেক্ট মাই ওন কনক্লুশানস।
পত্রিকা: তা হলে ২০০২-এ ‘আমার ভুবন’ করার পর আর কোনও ছবি করলেন না কেন?
মৃণাল: দৌড়ঝাঁপ করে ছবি করার দিন আর নেই। তা ছাড়া সবাইকেই যে সারাজীবন ছবি করতে হবে এমন তো নয়। চ্যাপলিন তো বুড়ো বয়সে যখন অথর্ব, বলতেন, “আমার মাথায় কিলবিল করছে আইডিয়া। কিন্তু আমার যখন চলে যাবার চলে যাব। হোয়েন আই গো আই গো”। আমি চ্যাপলিনের মতো করে ভাবছি না। এখন চারদিকে যা দেখছি তার মধ্যেও অনেক গল্প আছে। এমনকী খবরের কাগজের হেডলাইনের মধ্যেও কত গল্প খুঁজে পাই। বলতেও ইচ্ছে করে। কিন্তু কী ভাবে বলব ঠিক করে উঠতে পারি না।
পত্রিকা: তা ‘আমার ভুবন’ ছবিতে চ্যাপলিনের ছবির অংশ দেখিয়েছিলেন...
মৃণাল: ‘আকাশ কুসুম’এও ‘গোল্ড রাশ’এর প্রভাব আছে। যেখানে এক জন যুবক ধনী হওয়ার স্বপ্ন দেখতে দেখতে মরীচিকার পেছনে ছুটতে থাকে। বিরাট শহরের এক বিশাল বাড়ির মাথায় দাঁড়িয়ে সে বলে, ‘শালা এই শহরটাকে কিনে নিতে চাই’। চরিত্রটায় অভিনয় করেছিল সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। অসাধারণ। |
|
নন্দনে শিশু চলচ্চিত্র উত্সবে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে মৃণাল সেন। ফাইল চিত্র |
পত্রিকা: সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় দাদাসাহেব ফালকে পেলেন...
মৃণাল: সে খবর তো আমিই ওকে দিয়েছিলাম। আমি আগে থেকেই জানতাম। ওর এই পুরস্কার অনেক আগে পাওয়া উচিত ছিল।
পত্রিকা: উত্তমকুমার কি দাদা সাহেব ফালকে পেতে পারতেন না?
মৃণাল: অবশ্যই পেতে পারত। কিন্তু মরণোত্তর দাদাসাহেব ফালকে পুরস্কার হয় না সাধারণত। তা ছাড়া এ পুরস্কার তো ঋত্বিকও পেতে পারত। পাননি এমন আরও অনেকেই। এ সব নিয়ে প্রশ্ন তুললে বিতর্ক বাড়ে।
পত্রিকা: উত্তমকুমারকে ‘রাতভোর’ ছবিতে নিয়েছিলেন। ছবিটি চলেনি। তার পর আর ওঁকে নিলেন না কেন?
মৃণাল: মনে আছে উত্তম আর সুপ্রিয়া ভোরবেলা বেড়াতে বেরোত। একদিন ভোরে হঠাৎ টেলিফোন। আগের দিন ‘পদাতিক’ দেখে ওরা মুগ্ধ। দু’জনে একসঙ্গেই বলল, “দারুণ ছবি। কিন্তু আমরা কোথায়। আমরাও এই কলকাতাতেই আছি।” উত্তম খুব বড় মাপের শিল্পী। এ বিষয়ে সন্দেহ নেই। কিন্তু আমি যে ধরনের ছবি করেছি, তাতে ওকে ব্যবহার করার সুযোগ পাইনি। সে তো সৌমিত্রকেও যতটা ব্যবহার করা যেত, করতে পারিনি।
পত্রিকা: আপনি যে রকম জাম্প কাট ব্যবহার করে, কোলাজের মতো করে ছবি বানাতেন, যেখানে গল্পটা থাকত ক্ষীণ সূত্রের মতো-আজকাল বাংলা ছবির তরুণ পরিচালকেরা সেই স্টাইলে কাজ করছেন। দেখছেন আজকালকার পরিচালকদের ছবি?
মৃণাল: হ্যাঁ শুনেছি। দু’য়েকটা হালের ছবি দেখিনি যে তা নয়। কিন্তু তেমন লাগেনি। শেষ পর্যন্ত কোনও দর্শনে পেছায় না। মানে একটা ছবি যখন করা হচ্ছে একটা ফিলজফি থাকবে তো। যে কোনও ছবি করার সময় সেই ছবি কেন করা হচ্ছে সেইটা খুব গুরুত্বপূর্ণ।
ভাল লেগেছিল গৌতম ঘোষের ‘মনের মানুষ’। প্রসেনজিৎও অসাধারণ। আজ আমি যদি ছবি করতাম হয়তো ওকে নিতাম। নিতাম হয়তো অঞ্জন দত্তকেও। এরা সকলেই সময়ের সঙ্গে সঙ্গে কাজকর্ম নিয়ে নানা পরীক্ষানিরীক্ষা করছে। অঞ্জন দত্তের ‘রঞ্জনা আমি আর আসব না’, ‘বং কানেকশন’। সব ছবিরই ভাল মন্দ নিয়ে প্রশ্ন থাকে, অঞ্জনের ছবিতেও সেটা আছে। অঞ্জন খুব বুদ্ধিমান পরিচালক। সাহসী। এখন যে ছবিটা করছে, ‘দত্ত ভার্সেস দত্ত’ সেটার চিত্রনাট্য শুনিয়ে গিয়েছিল। অসামান্য। প্রতি মুহূর্তে নিজেকে ভাঙা গড়া করে নিয়ম কানুন তছনছ করার মানসিকতা আছে অঞ্জনের। তবে ওই সব ডিটেকটিভ গপ্পোটপ্পো আমার ভাল লাগে না। আর ভাল লেগেছে ‘ভূতের ভবিষ্যৎ’। পরিচালক অনীকের (দত্ত) রসিকতাবোধ, তুখড় বুদ্ধিমত্তা, সৃজনশীলতার পরিচয় আগাগোড়া ছবিটায়। এমন টানটান কোনও বিশ্রামের যেন দরকার পড়ে না। এমন ছবি এ দেশে হয়নি। ওর আগামী কাজ দেখার জন্য কৌতূহল রইল।
পত্রিকা: কলকাতা ফিল্ম ফেস্টিভ্যালেও তো ছবি দেখতে এসেছিলেন...
মৃণাল: হ্যাঁ সেদিন দেখেছিলাম, ‘দ্য ট্রি অফ লাইফ’। কম কথা, অল্প চরিত্র নিয়ে কাজ। পরিচালক টেরেন্স মালিক। প্রায় ঘরের ভেতর তৈরি আমেরিকায় তোলা ছবি। ছবি দেখে মুগ্ধ হয়ে কান ফেস্টিভ্যালের চেয়ারম্যান জিল জ্যাকবকে লিখেছিলাম, “আমি মৃণাল সেন। মৃণাল। ফ্রম ক্যালকাটা। মাই এলডোরাডো। ৮৮-তম জন্মদিনকে পেছনে ফেলে ৮৯-তম বছরের সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে এবং অচিরেই ৯০-এ পৌঁছবার মুখে আজও একই রকম তারুণ্যে ভরপুর। কান চলচ্চিত্র উৎসবের বিচারকমণ্ডলীর যাঁরা এই ‘ট্রি অফ লাইফ’ ছবিটিকে প্রথম পুরস্কারে ভূষিত করেছেন তাঁদের প্রতি আমার শুভেচ্ছা রইল।” সিনেমার ভাষাটাকেই ভেঙেচুরে পাল্টে দিয়েছে মালিক। এখনকার ছবি হওয়া উচিত এই রকম। |
|
কলকাতার জাতীয় গ্রন্থাগারে এক অনুষ্ঠানে সত্যজিত্ রায়ের সঙ্গে। ফাইল চিত্র |
পত্রিকা: এক সময় আপনি কম বাজেটে ছবি করার কথা বলতেন। এখন তো জানেন বাংলা কমার্শিয়াল ছবিতে একটা গানের দৃশ্য শুট করতে লোকে ভেনিস যাচ্ছে?
মৃণাল: আমাকেই তো গত দশ বছরে কত লোক বলেছে, “মৃণালদা আপনি যা খুশি তাই করুন। আমি টাকা নিয়ে রেডি”। আমাকে ব্যাঙ্ক থেকে টেলিফোন করে বলেছে, “পাঁচ কোটি টাকা দেব ছবি করুন।” আমি বলেছি পাঁচ কোটিতে আমি ছ’ খানা ছবি হেসে খেলে বানিয়ে দেব।
পত্রিকা: কলকাতা আপনার প্রিয়তম শহর। কিন্তু আপনার জন্ম ফরিদপুরে। অথচ সেখানকার গল্প আসেনি আপনার ছবিতে। আপনার বন্ধু ঋত্বিক ঘটক কিন্তু তাঁর ছবিতে দেশভাগের যন্ত্রণা থেকে বেরোতেই পারলেন না...
মৃণাল: কলকাতায় যখন আসি তখন এই শহরটা ভয়ঙ্কর মনে হয়েছিল। তার পর আস্তে আস্তে শহরটাকে ভালবেসে ফেললাম। ৪৯ বছর বাদে যখন ফরিদপুরে গেলাম তখন কষ্ট হয়েছিল। মনে পড়েছিল আমাদের সবচেয়ে ছোট বোন রেবার কথা। সে পাঁচ বছর বয়সে বাড়ির পুকুরে ডুবে মারা গিয়েছিল। কবি জসীমউদ্দিন ছিলেন আমার বড়দার বন্ধু। জসীমদা ছিলেন রেবারও খুব বন্ধু। রেবার সঙ্গে তার অনেক গল্প হত। সে নাকি জসীমদাকে বলেছিল কেমন করে ফুল ফোটে, কখন ফুল ফোটে এসব এক দিন রাত জেগে বসে দেখবে। পুরনো দিনের এই সব কথা ভেবে খুব কান্না পেয়েছিল। কিন্তু আমি মানুষটাই তাৎক্ষণিক। আবার যখন কলকাতায় ফিরে এলাম তখন আমি কলকাতার লোক হয়ে গেলাম।
পত্রিকা: এই চরৈবেতির মন্ত্র নিয়ে আপনি যে সব ছবি করেছেন, তার সব যে দারুণ চলেছে এমন তো বলা যায় না। সেই তুলনায় সত্যজিৎ রায় বা ঋত্বিক ঘটকের ছবি বেশি চলেছে...
মৃণাল: যখন দেখেছি ছবি চলছে না মনে মনে কত বার কোল্যাপ্স করেছি তার ঠিক নেই। কিন্তু আমার চিন্তাভাবনা আটকে যায়নি। বদলায়ওনি। তা ছাড়া সত্যজিৎ রায়, ঋত্বিক ঘটকের ছবিও যে দারুণ চলেছে তা নয়। এক ধরনের রুচিশীল মানুষ তাঁদের ছবির দর্শক এইটুকু বলা যায়। বৃহত্তর জনসংখ্যার কাছে তাঁদের ছবি পৌঁছেছে এটা বলা যায় না।
পত্রিকা: এই রকম এক জন অসাধারণ অভিনেত্রী সংসার নিয়ে ব্যস্ত থাকতেন এটা বলাটা তো এক ধরনের মেল শভিনিজম...
মৃণাল: (ঈষৎ বিরক্ত) ওসব মেল শভিনিজম-টিজম ছেঁদো কথা। আমার ক্ষেত্রে বর্তায় না। আজ যদি গীতা অন্য কোথাও অভিনয় করত জানি অসাধারণ অভিনয় করত। আমার কি আর গর্ব হত না, এই ভেবে যে আমি এত বড় একজন অভিনেত্রীর স্বামী। কিন্তু করল না, সংসারে জড়িয়ে রইল, আমি কী করতে পারি? তা হলে আমি তো নিজের ছবিতেই নিতাম না। ‘একদিন প্রতিদিন’-এ প্রথম মায়ের চরিত্রটা তৃপ্তি মিত্রর করার কথা ছিল। শেষমেশ গীতা করে। গীতার অভিনয় দেখে তৃপ্তি ওকে বলেছিলেন, “ভালই হয়েছে এ ছবিতে কাজ না করে। তা না হলে এক জন অসামান্য অভিনেত্রীর অভিনয় আমার দেখা হত না।” গীতাকে নিয়ে একটা বইও বেরিয়েছে। সেখানে রবীন্দ্র ভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য চিন্ময় গুহ লিখছেন, “...গীতার সমকক্ষ অভিনেত্রী আর যদি কেউ থেকে থাকেন সেই সময় তিনি ‘পথের পাঁচালী’ আর ‘অপরাজিত’-র করুণা বন্দ্যোপাধ্যায়।” গীতার তো গৌতম ঘোষের ছবিতে কাজ করার কথা ছিল। নিজের সময়াভাবে করতে পারেনি। এ রকম আরও দু’য়েক জন পরিচালকের ছবির কাজ ও ফিরিয়ে দিয়েছে। কেন ফিরিয়েছে সেটা গীতাই ভাল বলতে পারবে। কোনও বারই আমি কোনও বাধা দিইনি।
পত্রিকা: আপনাদের ধারায় অনুপ্রাণিত যাঁরাঅনীক, কৌশিক, মৈনাক, কমলেশ্বর, সৃজিতওঁদের ছবি দেখতে এখন দিন, দিন ভিড় বাড়ছে। এই সময়ে দাঁড়িয়ে, মনে হয় না, এখন যদি একটা ‘মৃগয়া’ বা ‘খারিজ’ হত, আরও মানুষ দেখত?
মৃণাল: ভাল লাগত নিশ্চয়ই। এই তো কয়েক দিন আগে বারো ক্লাসের একটি মেয়ে এসে বলল, তারা একটা বই বের করেছে। সেখানে মূল প্রবক্তা হিসেবে আমাকে কিছু বলতে হবে বা লিখতে হবে। আমি তাকে জিজ্ঞেস করলাম, “তুমি আমার ছবি দেখেছ?” সে বলল, “দেখেছি। সব ছবিই। তবে ডিভিডিতে”। এ রকম শুনলে ভাল লাগে তো বটেই।
পত্রিকা: সত্যজিৎ রায় বনাম মৃণাল সেন। আপনারা পরস্পরের ছবির সমালোচনা করেছেন সংবাদপত্রে। আসলে সম্পর্কটা ঠিক কেমন ছিল?
মৃণাল: একবার আমার কান ফেস্টিভ্যালে যাবার কথা। বিজয়া রায় ফোন করে বললেন, “গীতা, ও (সত্যজিৎ রায়) এখন লন্ডনে। কানে যাবে একটা প্রাইজ নিতে। সঙ্গে কোনও স্যুট-ট্যুট নেই। থ্রি পিসও পরে না। একটা পাজামা পঞ্জাবী পাঠাচ্ছি। মৃণালবাবুর মনে নাও থাকতে পারে। তুমি একটু মনে করে দিয়ে দেবে?” আমরা সেই পোশাক নিয়ে কানে পৌঁছলাম। জিনিসটি মানিকবাবুর হাতে দিয়ে জিজ্ঞাসা করলাম এত ঢোলা পায়জামা পরেন কী করে? উনি বললেন, “ও আমার হয়ে যাবে!” আর একবার আমি মুম্বই থেকে গুজরাত যাচ্ছি। ‘ভুবন সোম’ এর শু্যটিং। মানিকবাবুকে বললাম, গীতা একটা প্যাকেট পাঠাবে। আপনি তো মুম্বই আসছেন। নিয়ে আসতে পারবেন? তো সেই প্যাকেট নিয়ে মানিকবাবু মুম্বই এলেন। হোটেলে ডেকে আমার হাতে দিলেন। ওঁর সামনেই প্যাকেট খুললাম। বেরিয়ে এল কয়েক জোড়া গোঁফ। সেই গোঁফ যা আমি শেখর চট্টোপাধ্যায়কে ‘ভুবন সোম’ এ পরাব। তাই দেখে মানিকবাবু অবাক...বললেন, “বলেন কী, শেষ পর্যন্ত আমাকে দিয়ে গোঁফ আনালেন। আমি ভাবলাম টাকা পয়সা হবে। কত যত্ন করে নিয়ে এলাম”... সম্পর্ক মানে এই রকমই।
পত্রিকা: এত দিনে অনেক পরিবর্তনই তো দেখলেন...
মৃণাল: (উত্তেজিত) পরিবর্তন বলতে যদি রাজনৈতিক হয়, কোনও কথাই বলব না।
পত্রিকা: আপনি কি এখন নিরপেক্ষ?
মৃণাল: (আরও উত্তেজিত) নিরপেক্ষ কেন হব? আমার স্ট্যান্ড ব্যক্তিগত। আমার পক্ষপাতিত্ব নিজের কাছে।
পত্রিকা: আর কী কী আছে যেখানে আপনার ব্যক্তিগত স্ট্যান্ড এমন প্রবল?
মৃণাল: যেমন এই জন্মদিনের বয়সটা।
পত্রিকা: মানে? আগে নেওয়া ইন্টারভিউয়ে বলেছিলেন আপনি নীললোহিতের মতো ২৭-য়েই আছেন।
মৃণাল: এখন বলছি ২০। ‘কলকাতা ’৭১’-এ যে ছেলেটা পুলিশের তাড়া খেয়ে সরু গলি থেকে বড় রাস্তা থেকে গ্রাম জঙ্গল পার হয়ে ছুটছিল তার বয়স ছিল ২০। সেই ত্রাহি দৌড়ের সময় নেপথ্য কণ্ঠে শোনা যাচ্ছিল কতগুলো কথা:
“আমার বয়স কুড়ি
কুড়ি বছর বয়স নিয়ে
আমি আজও হেঁটে চলেছি
হাজার বছর ধরে
দারিদ্র্য মালিন্য
আর মৃত্যুর ভিড় ঠেলে....হাঁটছি।”
এই কথা তো আমারই। তা হলে আমার বয়স তো কুড়িই হল। (হাসি) |
|
|
|
|
|