|
|
|
|
|
|
পূর্ব কলকাতা
|
উঠছে প্রশ্ন |
‘বিবর্ণ’ গ্রিন |
কাজল গুপ্ত |
বিধাননগর কমিশনারেট লেখা সবুজ জ্যাকেট। সঙ্গী শুধু সাইকেল। ব্লকের মধ্যে দিন-রাত ঘুরে বেড়াচ্ছেন এক দল যুবক।
এঁরাই গ্রিন পুলিশ। অপরাধ নিয়ন্ত্রণ, নজরদারি ও তথ্য সংগ্রহে বিধাননগর পুলিশ প্রশাসনের নতুন দাওয়াই এই গ্রিন পুলিশ। পাশাপাশি এঁরা যান নিয়ন্ত্রণের কাজও করছেন।
বাসিন্দাদের অভিযোগ, গ্রিন পুলিশ কার্যত নিধিরাম সর্দার। তথ্য সংগ্রহ ও নজরদারির জন্য প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ নেই। পাশাপাশি, এঁরা স্থানীয় নন। ফলে বিধাননগর সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা নেই। গ্রিন পুলিশের সঙ্গে ব্লক কমিটি ও পুরপ্রশাসনেরও যোগাযোগের বড়ই অভাব। ফলে কাজ হচ্ছে না। পুলিশের অবশ্য দাবি, গ্রিন পুলিশ যথেষ্ট সক্রিয়। নজরদারি বেড়েছে। অপরাধ কমছে।
|
|
এ বছরের গোড়াতেই চালু হয় বিধাননগর কমিশনারেট। কিন্তু পর্যাপ্ত সংখ্যক পুলিশকর্মীর অভাবে, নজরদারি, যান নিয়ন্ত্রণে সহায়তা ও কর্মসংস্থানের জন্য পরীক্ষামূলক ভাবে প্রায় ১৫০ জন যুবককে গ্রিন পুলিশ হিসেবে নিয়োগ করা হয়। নূন্যতম যোগ্যতা মাধ্যমিক। দেওয়া হয় সাইকেল। মোবাইলের খরচ নিজস্ব। উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগণা, বিধাননগরের সংযুক্ত এলাকা এবং আশপাশের এলাকা থেকে এই গ্রিন পুলিশ নিয়োগ করা হয়েছে। মৌখিক পরীক্ষার মাধ্যমে তাঁদের নিয়োগ করা হয়েছে বলে পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে।
কেমন করে নজরদারি চালায় গ্রিন পুলিশ?
দু’-তিনটি ব্লক পিছু তিনটি শিফটে দু’জন গ্রিন পুলিশ সাইকেলে করে ব্লকের ভিতরে ও বাইরে নজরদারির কাজ করছে বলে দাবি পুলিশের। পাশাপাশি যান নিয়ন্ত্রণেরও কাজ করছে গ্রিন পুলিশ। অভিযোগ, গ্রিন পুলিশের সংখ্যা পর্যাপ্ত নয়। সর্বত্র নজরদারি হয় না। সাইকেলে করে সর্বত্র দ্রুত পৌঁছনোও সম্ভব নয়। বিধাননগরে পার্কগুলিতে সন্ধ্যা থেকে অনেক বহিরাগত যাতায়াত করে। আগে মোটরবাইকে করে পুলিশ নজর রাখত। কিন্তু এই গ্রিন পুলিশকে বহিরাগতরা গুরুত্ব দেন না। বাসিন্দাদের দাবি, গ্রিন পুলিশের পাশাপাশি পুলিশের নজরদারিও প্রয়োজন।
পুলিশের দাবি, কমিশনারেট হওয়ার পরে অপরাধ কমেছে। কিন্তু বাসিন্দাদের দাবি, অপরাধ কমছে না। এডি ব্লকের সাম্প্রতিক ডাকাতি তারই প্রমাণ। এই ঘটনার ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে আরও দু’টি ব্লকের দু’টি বাড়িতে চুরির ঘটনাও ঘটেছে। বিএ ব্লকের বাসিন্দা অমিতাভ মজুমদার বলেন, “সরকারি অর্থের অপচয় ও পণ্ডশ্রম ছাড়া কিছুই হচ্ছে না। এঁদের যথাযথ প্রশিক্ষণ নেই। দিশাহীন ভাবে সাইকেল নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। এতে লাভ হবে না।” |
|
এফই ব্লকের আবাসিক কমিটির সম্পাদক মানস ঘোষ বলেন, “ব্লকের নিজস্ব নিরাপত্তারক্ষী দিয়ে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ঠিকমতো কাজ হচ্ছে না। পাশাপাশি খরচও অনেক বেড়েছে। অনেক ব্লক কমিটিই নিরাপত্তারক্ষী রাখা বন্ধ করে দিয়েছে। ফলে গ্রিন পুলিশই এখন ভরসা। তবে গ্রিন পুলিশের সংখ্যা বাড়ানোর প্রয়োজন।” ৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর তৃণমূলের অনিন্দ্য চট্টোপাধ্যায় বলেন, “পুলিশকে অতিরিক্ত সহায়তা দিতে পরীক্ষামূলক ভাবে গ্রিন পুলিশ পথে নামানো হয়েছে। আগের থেকে অবশ্যই নজরদারি বেড়েছে। তবে অসামরিক প্রতিরক্ষা বাহিনীর কায়দায় প্রশিক্ষণ প্রয়োজন।”
বিধাননগর কমিশনারেটের ডিসি (সদর) সুব্রত বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “যান নিয়ন্ত্রণের কাজের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। গ্রিন পুলিশ কর্মীদের আমরাই প্রশিক্ষণ দিয়েছি। তাঁদের কাজের উপরও নজরদারি রাখা হয়।” বিধাননগরের পুলিশ কমিশনার রাজীব কুমার বলেন, “গ্রিন পুলিশ কাজে নজর রাখা হচ্ছে। গ্রিন পুলিশ যথেষ্ট সক্রিয়।” তাঁর দাবি, তিনি নিজে রাতে নজরদারি চালিয়ে দেখেছেন যে গ্রিন পুলিশ কাজ করছে।
|
ছবি: শুভাশিস ভট্টাচার্য |
|
|
|
|
|