রূপায়ণ ভট্টাচার্য • মুম্বই |
কমলা রংয়ের বিখ্যাত যে জার্সির ফুটবল দর্শন ছড়িয়ে পড়েছে বার্সেলোনা থেকে মিউনিখ, সেই ডাচ ফুটবলের দ্বারস্থ হচ্ছে ভারতীয় ফুটবল। পঁচাত্তর বছরে পা দিয়ে। রাইনাস মিশেলস, জোহান ক্রুয়েফ, লুই ফান গল, খুস হিডিঙ্ক, ফ্রাঙ্ক রাইকার্ডদের উত্তরসূরি কোচদেরই এ বার দেখা যাবে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে।
সচিন তেন্ডুলকরের শহর এই ইঙ্গিতই দিয়ে গেল শুক্রবার।
ওরলির সাড়া ফেলা সমুদ্র সেতু যেখানে শেষ হয়েছে, তার সামান্য দূরে গাওস্কর-বেঙ্গসরকর-ওয়াড়েকরদের ফ্ল্যাটবাড়ি ‘স্পোর্টসফিল্ড’। তার দু’তিনটে বাড়ি পরে এক ক্লাবে ফিফা-এআইএফএফের প্রথম অ্যাকাডেমির উদ্বোধনেই স্পষ্ট হয়ে উঠল ভারতীয় ফুটবলে নতুন সেতুর ছবি। নেদারল্যান্ডসের ক্রীড়ামন্ত্রী এডিথ শিপার্সের উপস্থিতি অন্য মাত্রা দিয়ে গেল অনুষ্ঠানে। নয়াদিল্লির নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ে সেন্টার ফর পলিটিক্যাল স্টাডিজে পড়াশোনা করা ডাচ মন্ত্রীর সঙ্গে ছিলেন ফেডারেশনের সঙ্গী ডাচ সংস্থা অরেঞ্জ স্পোর্টস ফোরামের কর্তারা। সেখানেই মহিলা মন্ত্রীর ঘোষণা, “ভবিষ্যতে ভারতে ডাচ কোচ দরকার হলে ডাচ সরকার সাহায্য করবে। আশা করি, ভারত অনূধর্ব ১৭ বিশ্বকাপ করলে ভারত বনাম নেদারল্যান্ডস খেলা হবে।” |
মঞ্চ থেকে নেমে আসার পরে ভিড়ের মধ্যে মন্ত্রীর পরবর্তী মন্তব্য আরও তাৎপর্যপূর্ণ, “প্রয়োজনে পিএসভি আইন্দোভেন, আয়াখস আমস্টারডামের মতো ক্লাবও সাহায্য করবে ভারতীয় ফুটবলকে।” তাঁর ঘোষণার আগেই অবশ্য জাতীয় দলের ডাচ টেকনিক্যাল ডিরেক্টর রব বানের হাত ধরে ডাচ কোচেরা আসতে শুরু করে দিয়েছেন ভারতে। অরেঞ্জ সংস্থাও আইন্দোভেনকে কাজে লাগানোর আশ্বাস দিয়েছে। নবি মুম্বইয়ের অ্যাগ্নেল স্কুলে ফেডারেশনের অ্যাকাডেমির কোচ অস্ট্রেলিয়ান পাপাস। তিনিও ডাচ কোচ জান ভের্সলেজেনের কাছে থেকে শিক্ষা নিয়েছেন। পৈলান অ্যারোজ প্রধান অপূর্ব সাহা এসেছিলেন অনুষ্ঠানে। বললেন, ডাচ কোচ আনা হচ্ছে তাঁদের দলের জন্যও। ফেডারেশন কর্তারা জাতীয় কোচ আনার দায়িত্ব ছেড়ে দিয়েছেন রব বানের উপর। বান যা ইঙ্গিত দিলেন, তাতে ডাচ কোচই আসবেন। যদি অন্য দেশেরও হন, তা হলে ডাচ শিক্ষায় শিক্ষিত হবেন পাপাসের মতো। “সুপারস্টার হয়তো হবে না, কিন্তু মাঝারি মানের তারকা হতেই পারে ভারতের কোচ,” বানের ব্যাখা।
ডাচদের ফুটবল দর্শনটা ঠিক কী? ডাচ মন্ত্রী ও কনসাল জেনারেলের পাশে দাঁড়িয়ে রব বানের উত্তর,“যা মশলা হাতে রয়েছে, সেখান থেকে পুরোপুরি সেরাটা তুলে আনা।”
ওই নীতি থেকেই শীর্ণকায় ভদ্রলোকের পরের লক্ষ্য, ফুটবলার তুলতে প্রতি রাজ্যে এক জন টিডি, চিফ স্কাউট এবং ডেভেলপমেন্ট অফিসার চান। প্রেসিডেন্ট প্রফুল্ল পটেল, সচিব কুশল দাসদেরও সেটাই লক্ষ্য আপাতত যুব বিশ্বকাপের কথা ভেবে একেবারে তৃণমূল স্তর থেকে ফুটবলার তুলে আনা। আইপিএলের জনপ্রিয়তা ফেডারেশনের দুই বড়কর্তাকে প্রভাবিত করছে না। পটেল আই লিগের থেকেও জোর দিচ্ছেন অ্যাকাডেমিকে। নবি মুম্বইয়ের পরের অ্যাকাডেমি জংশন বেঙ্গালুরু। নতুন অ্যাকাডেমির কোচ আকিল আনসারি, মুম্বই ফুটবলের সি ই ও হেনরি মেনেজেসরা অনুষ্ঠানে ছিলেন অ্যাকাডেমির কিশোর ফুটবলারদের নিয়ে। সামান্য দূরে দেখা যাচ্ছে আরব সাগরের ঢেউ। মনে হল, অ্যাকাডেমির ঢেউ গুনতে চান ফেডারেশন কর্তারা।
আই লিগের তা হলে কী হবে? এ বারও কি বাংলা-গোয়া-মুম্বই লিগ হয়েই থাকবে? উত্তর, হ্যা।ঁ আইএমজি-র কর্তারা এখনও লিগের পরিকাঠামো বদল নিয়ে কিছুই বলছেন না। এ দিন অনুষ্ঠানের শেষে সাংবাদিকরা তাঁদের প্রতিনিধিকে প্রশ্ন করলে প্রায় পালালেন। ক্লাবগুলোর দাবি মেনে সভা যে কবে হবে, তা নিয়ে ছবিটা স্পষ্ট নয়। প্রফুল্ল পটেল লিগ নিয়ে বললেন, “এ বার হবে না। তবে পরের বার দুটো নতুন দল আই লিগে নেওয়ার জন্য চেষ্টা করবই। অনেক কর্পোরেট আগ্রহী ফুটবলে। আমরা অবশ্য প্লেয়ারদের টাকা বেঁধে দিতে চাই না।” ওএনজিসি, এয়ার ইন্ডিয়ার মতো অফিস দলকে আর এক বছর সময় দেওয়া হচ্ছে। এর মধ্যে পরিকাঠামো না করতে পারলে, পথ দেখতে বলা হবে।
এ সব ছাপিয়ে অবশ্য ফেডারেশন কর্তাদের মাথায় এখন অ্যাকাডেমি, যুব বিশ্বকাপ এবং অবশ্যই ডাচ কোচিং দর্শন। |