বাইশ গজে দাঁড়িয়ে শুধু একটা স্টাম্প। চার-পাঁচ পা দৌড়ে এসে লেগস্পিনগুলো পড়ছে নির্ভুল নিশানায়। একমাত্র স্টাম্পটা ধসে যাচ্ছে বারবার। বিশেষ কোনও অভিব্যক্তি নেই। নতুন হেয়ারস্টাইলটা একটু ঠিক করে নিচ্ছেন। আবার ফিরে যাচ্ছেন রান আপে।
মিনিট কুড়ি পর কিট থেকে হেলমেট বেরোল। ডান হাতে তিনটে ব্যাট নিয়ে পরিচিত ভঙ্গিতে লঘু পায়ে নেটে ঢুকে পড়ল সাড়ে পাঁচ ফিটের চেহারাটা। ঘড়ি বলছে দুপুর পৌনে তিনটে। কাঠফাটা রোদে রীতিমতো ঘাম ঝরছে ইডেনে তাঁকে দেখতে আসা শ’খানেক ভক্তের। কিন্তু তিনি নির্বিকার। একসঙ্গে ডেকে নিলেন তিন জন স্পিনারকে। এক জন বাঁ-হাতি। এক জন লেগ স্পিনার। এক জন অফ স্পিনার। মিনিট দু’য়েক তাঁদের দেখে নেওয়া। তার পর হাইকোর্ট প্রান্তের বাউন্ডারি তাক করে নিয়ম করে ‘স্টেপ আউট’।
পিচ দেখছেন। জাতীয় দলের প্রাক্তন রবিন সিংহের সঙ্গে জরুরি আলোচনা সারছেন। টিমমেট কায়রন পোলার্ডের ব্যাটিং দেখতে দাঁড়িয়ে পড়ছেন নেটের ধারে। ঊনচল্লিশেও ক্রিকেট মাঠে এক মুহূর্ত দাঁড়ানোর সময় নেই সচিন রমেশ তেন্ডুলকরের। |
একটু চাপেও আছেন কি? আইপিএলে সবে তাঁর ব্যাট রানের মুখ দেখেছে। দিন কয়েক আগে ধোনির চেন্নাইয়ের বিরুদ্ধে এসেছে চলতি টুর্নামেন্টে তাঁর সর্বোচ্চ স্কোর। ৪৪ বলে ৭৪। কিন্তু টিম যে স্বস্তিতে নেই। চেন্নাই ম্যাচ শেষ বলে জিতলে কী হবে, বেঙ্গালুরু ম্যাচেই সহ্য করতে হয়েছে গেইলের শাসন। লিগ টেবিলে এই মুহূর্তে চারে মুম্বই ইন্ডিয়ান্স। রাতে গেইলরাই তাদের তিন থেকে চারে নামিয়ে দিয়ে গেলেন। ১২ ম্যাচে সচিনদের পয়েন্ট ১৪। ঘাড়ের কাছে নিঃশ্বাস ফেলছে সিএসকে। আরসিবি। এই গরমেও শিরদাঁড়া দিয়ে হিমেল স্রোত বয়ে যাওয়ার মতো অঙ্ক। টেনশন। এক চুলের এ-দিক ও-দিক মানেই প্লে-অফ রিংয়ের বাইরে।
মহানায়কের নিজের বিড়ম্বনাও বা কম কী? এক দিকে সুনীল নারিন নামের ক্যারিবিয়ান ধাঁধার উত্তর খুঁজে বার করা। নেটে তিন ধরনের স্পিনার কেন আমদানি, ইডেনের মালিও বলে দেবে। সঙ্গে জুড়ে যাচ্ছে শনিবাসরীয় দুপুরকে ঘিরে উত্তুঙ্গ আবেগ। মিনিটে-মিনিটে যা বাড়ছে। স্বাভাবিক। শততম আন্তর্জাতিক সেঞ্চুরির পরে এই প্রথম ইডেনে নামছেন সচিন। আগের দিন প্র্যাক্টিস শেষ করে টিমবাস বেরিয়ে গেল। সচিন থেকে গেলেন। কেন? সিএবি কর্তারা আসছেন। সঙ্গে সংবর্ধনার নিমন্ত্রণ। যা ঘিরে নিত্য নতুন প্ল্যানের আমদানি। হেলিকপ্টার বাদ, ঢুকেছে জিপ। মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে ইডেনে চক্কর দিতে হবে।
এবং শনিবারের ম্যাচ যত সচিন-কেন্দ্রিক হয়ে পড়ছে, লাভ তত যেন কেকেআরের। টিমের এক সদস্য সন্ধেয় বলে দিলেন, ‘সচিন-শো’ নিয়ে যত ব্যস্ততা বাড়বে, তত চাপে পড়বে মুম্বই। লিটল মাস্টারের জন্য ‘মারণাস্ত্র’-ও নাকি বেছে ফেলা শেষ নাইটদের। সুনীল নারিন। যাঁকে নিয়ে বলা হচ্ছে, খুব শিগগির ‘নাসা’ বসবে নারিনের স্পিন-রহস্য উদ্ঘাটনে! আইপিএলে ৯ ম্যাচে ১৫ উইকেট ইতিমধ্যে ঝুলিতে। কৃপণতার দিক থেকে দ্বিতীয়। ওভার পিছু সাড়ে পাঁচেরও কম রান! মুম্বইয়ের রোহিত শর্মা যতই বলুন, “নারিনের ওষুধ বার করতে বসব আমাদের টিমের ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান ক্রিকেটারদের সঙ্গে,” চিঁড়ে কিন্তু ভিজছে না। কেকেআর শিবির মনে করছে, নারিনকে সামলাতে সৌরভ পারেননি। সচিনও পারবেন না। ‘আননোন ফ্যাক্টর’ বলে।
অদ্ভুত শোনাতে পারে। মুম্বইয়ের বিরুদ্ধে নামার আগে নিজ-টিমের এমন আত্মবিশ্বাস কবে দেখেছে শহর? ইডেনে জয়ের অনুপাত তো ঝুঁকে মুম্বইয়ের দিকে। ২:১। গত বারের বিয়োগান্ত দৃশ্য তো আজও ভোলা যায়নি। শেষ ওভারে ২১ দরকার ছিল মুম্বইয়ের। বালাজিে ক তুলোধোনা করে ফ্র্যাঙ্কলিন তোলেন ২৩!
ঘাতক ফ্র্যাঙ্কলিন শনিবারও আছেন। থাকতে পারেন ঘায়েল বালাজিও। কিন্তু কোনও এক জাদুমন্ত্রে পালটে গিয়েছে পুরনো অবস্থান। চলতি আইপিএলে সফলতম বাঙালি ক্রিকেটার দেবব্রত দাস বলছিলেন, “ওরা এক ম্যাচ হেরেছে। এক ধাপ নীচে। আমরা দিল্লিকে হারিয়েছি। এক ধাপ উপরে। আরও উঠব।” আরও এক ধাপ ওঠা মানে এক নম্বর। দিল্লির হাত থেকে তাজ ফিরে পাওয়া। প্লে অফের টিকিট। এর মাঝে কেকেআরে খারাপ খবর, এ দিন প্র্যাক্টিসে ছুরি দিয়ে ব্যাট চাঁছতে গিয়ে ব্রেন্ডন ম্যাকালামের হাত কেটে যাওয়া। সেলাই পড়েছে। আজ সম্ভবত দলে নেই। ঢুকছেন হয়তো সাকিব।
কিন্তু টিম যখন আত্মবিশ্বাসের এভারেস্টে, একটা ম্যাকালামে কতটুকই বা এসে যায়? |