|
|
|
|
নিজের ঘরেই স্কুলছাত্র খুন শহরে |
নিজস্ব সংবাদদাতা • মেদিনীপুর |
বাড়ির মধ্যে ঢুকে এক কিশোরকে খুন করে পালিয়ে গেল দুষ্কৃতীরা। শুক্রবার বিকেলে এই ঘটনায় চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে মেদিনীপুর শহরের বরিশাল কলোনিতে। নিহত অভিষেক নাগের (১৩) দেহে অজস্র আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। ছুরি বা চপার জাতীয় কিছু দিয়ে তাকে মারা হয়েছে বলে প্রাথমিক তদন্তে পুলিশের অনুমান। ঘটনা ঘিরে রহস্যও তৈরি হয়েছে। ঠিক কী কারণে এই খুন, তা স্পষ্ট নয়। জেলা পুলিশ সুপার সুনীল চৌধুরী বলেন, “খুনের তদন্ত শুরু হয়েছে। সব দিকই খতিয়ে দেখা হচ্ছে।”
শহরে এ ভাবে কিশোর খুনের ঘটনা সাম্প্রতিককালে ঘটেনি। স্থানীয় ও পুলিশ সূত্রে খবর, রোজকার মতোই শুক্রবার দুপুরে নিজের ঘরে শুয়েছিল অভিষেক। বিকেলে পরিবারের এক সদস্য তার ঘরে ঢুকে আঁতকে ওঠেন। চিৎকার জুড়ে দেন। দেখেন, রক্তাক্ত অবস্থায় বিছানায় পড়ে রয়েছে অভিষেকের দেহ। অষ্টম শ্রেণির ছাত্র অভিষেক এলাকায় সকলেরই ‘প্রিয়’ ছিল। বাবা প্রবীর নাগ মেদিনীপুর পুরসভার কর্মচারী। দুই ছেলের মধ্যে অভিষেকই ছোট। দাদা অভিরূপ দ্বাদশ শ্রেণিতে পড়ে। পরে রক্তাক্ত অবস্থায় ওই কিশোরকে উদ্ধার করে মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে আসা হলে সেখানেই তার মৃত্যু হয়। অভিষেকের দুই হাতেরই শিরা কাটা ছিল।
শহরের জনবহুল এলাকাতেই বাড়ি অভিষেকদের। যৌথ পরিবার। তারই মধ্যে কী করে দষ্কৃতীরা এসে খুন করে পালিয়ে গেল, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। প্রাথমিক তদন্তে পুলিশের অনুমান, দুষ্কৃতীরা বাড়ির পিছন দিক দিয়ে এসেছিল। পরে সীমানা পাঁচিল টপকে পিছন দিক দিয়েই পালিয়ে যায়। কিন্তু ওই কিশোর কী কারণে খুন হল, তা স্পষ্ট নয়। পুলিশের একাংশের ধারণা, দুষ্কৃতীরা চুরির জন্যই বাড়িতে ঢুকেছিল। পরে অভিষেক তাদের চিনে ফেলায় তাকে ‘খতম’ করে দেওয়া হয়। তবে ঘটনার পিছনে অন্য কারণও উড়িয়ে দিচ্ছে না পুলিশ।
খবর পেয়ে বিকেলে ঘটনাস্থলে পৌঁছন ডিএসপি (ডি এন্ড টি) রুপান্তর সেনগুপ্ত, কোতয়ালি থানার আইসি জয়দীপ বন্দ্যোপাধ্যায়। পৌঁছন মেদিনীপুর পুরসভার পুরপ্রধান প্রণব বসু, উপ- পুরপ্রধান এরশাদ আলি প্রমুখ। বাড়ির থেকে কিছু নমুনা সংগ্রহ করে পুলিশ। পরিবারের লোকজনদের সঙ্গে কথা বলে ঘটনার আগে-পরের পরিস্থিতি জেনে নেন তদন্তকারী পুলিশ অফিসারেরা। স্থানীয়রা পুলিশ কুকুর এনে তদন্তের দাবি জানান।
এই ঘটনার জেরে গোটা এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে। প্রবীরবাবুর বাড়ির অদূরেই বাড়ি স্থানীয় কাউন্সিলর দেবী চক্রবর্তীর। খবর পেয়ে তিনিও ঘটনাস্থলে আসেন। কাউন্সিলরের কথায়, “শহরের বুকে এমন ঘটনা, ভাবতেই পারছি না। |
|
অভিষেকের শোকস্তব্ধ বাবা-মা। ছবি: রামপ্রসাদ সাউ। |
গত মার্চেই মেদিনীপুর শহরের জুগনুতলায় বাড়ির মধ্যেই এক বৃদ্ধা খুন হন। সন্ধেয় বাড়ি ফিরে এসে তাঁর ছেলে দেখেন, মা রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে রয়েছে। ঘটনার তদন্তে নেমে অবশ্য রহস্য উন্মোচন করে পুলিশ। জানা যায়, ঘটনার মাস দুয়েক আগে খুনিরা ওই বাড়িতে রঙের কাজ করেছিল। তারা প্রায় সকলেই মাদকাসক্ত। নেশার টাকার জোগাড় করতেই ডাকাতির পরিকল্পনা করেছিল তারা। সেইমতো ঘটনার দিন দুপুরে ওই বাড়ির পাঁচিল ডিঙিয়ে ভেতরে ঢোকে। বৃদ্ধাকে চেয়ারে দড়ি দিয়ে বেঁধে প্রায় ৭০ হাজার টাকা, দু’টি মোবাইল, টিভি, জুতো নিয়ে পালায়। কিন্তু দুষ্কৃতীদের মধ্যে একজনকে চিনে ফেলেন বৃদ্ধা। তারপরই তাঁকে খুন করা হয়। এ দিন বরিশাল কলোনির ঘটনার পিছনে এমন কিছু রয়েছে কি না, তা জানার চেষ্টা করছে পুলিশ। |
|
|
|
|
|