লোকসানের চাপে ন্যূব্জ এয়ার ইন্ডিয়া’র ঘাড়ে চাপতে চলেছে আরও বোঝা। ধর্মঘটী পাইলটদের কাজে ফেরাতে না-পেরে কর্তৃপক্ষ এ বার বিমান ভাড়া করে চালানোর কথা ভাবছেন। আর্থিক সঙ্কটে ধুঁকতে থাকা সংস্থাটি যদি শুধু যাত্রী-পরিষেবা বজায় রাখার জন্য বিমান ভাড়া করতে বাধ্য হয়, তা হলে ক্ষতির বহর আরও বাড়বে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন এয়ার ইন্ডিয়া’র অফিসারদের একাংশ।
এ দিকে শুক্রবারও এয়ার ইন্ডিয়ার ১২টি উড়ান বাতিল করা হয়েছে। বন্ধ রাখা হয়েছে টিকিট বিক্রি। এবং এ দিন রাতেই আরও ২৫ জন পাইলটকে বরখাস্ত করেছেন কর্তৃপক্ষ। সব মিলিয়ে বরখাস্ত পাইলটের সংখ্যা প্রায় ৭০-এ দাঁড়িয়েছে। অভিযোগ, এয়ার ইন্ডিয়ায় ‘অচলাবস্থা’র ফায়দা লুটতে বেশ কিছু বিমানসংস্থা ২০ শতাংশের মতো যাত্রীভাড়া বাড়িয়ে দিয়েছে। যে ব্যাপারে এ দিন অন্যান্য বিমানসংস্থাকে সতর্ক করেছে ডিজিসিএ।
এ দিন সন্ধ্যায় এক উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকের পরে ভাড়া করা বিমান চালানোর বিষয়ে ভাবনা-চিন্তা শুরু করেছেন এয়ার ইন্ডিয়া কর্তৃপক্ষ। সংস্থা-সূত্রের খবর: দিল্লি-নিউ ইয়র্কের মতো লম্বা রুটে উড়তে পারে, এমন চার-পাঁচটি বিমান বিদেশ থেকে পাইলট-সহ ভাড়া নেওয়ার কথা ভাবা হচ্ছে। বিদেশের বিভিন্ন সংস্থা এ ভাবে পাইলট-সহ বিমান ভাড়া দেয় (পরিভাষায় যাকে বলে ওয়েট লিজ)। এয়ার ইন্ডিয়া কর্তৃপক্ষের দাবি: ভাড়ায় বিমান আনা হলে পাইলটেরা কাজে না-এলেও যাত্রী-পরিষেবা অটুট রাখা যাবে। যদিও তার পিছনে বাড়তি খরচ হবে, যা এই মুহূর্তে সংস্থাটির পক্ষে স্বাস্থ্যকর নয় বলে মনে করছেন কর্তাদের অনেকেই। এক জনের কথায়, “দেখতে হবে, কারা সবচেয়ে কম ভাড়া নেবে।”
পাশাপাশি কাল সোমবার থেকে এগ্জিকিউটিভ পদাধিকারী পাইলটদের দিয়েও বিমান চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন এয়ার ইন্ডিয়া কর্তৃপক্ষ। নিয়মিত উড়ানে না-গেলেও এঁরা বোয়িং ৭৭৭-এর মতো লম্বা রুটের বিমান চালাতেও সক্ষম। সংস্থার এক কর্তার কথায়, “এগ্জিকিউটিভ পাইলটদের দিয়ে বিমান চালানোর নতুন সূচি তৈরি হচ্ছে।” এয়ার ইন্ডিয়া’র সঙ্কট নিয়ে এ দিন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহের সঙ্গে বৈঠক করেন বিমানমন্ত্রী অজিত সিংহ। পরে ধর্মঘটীদের বিরুদ্ধে ‘এসমা’ জারির সম্ভাবনা উড়িয়ে দিয়ে অজিত বলেন, “পাইলটেরা কথা বলতে চাইলে আমি রাজি। তবে আগে ধর্মঘট তুলতে হবে।”
সুপ্রিম কোর্ট কিন্তু ধর্মঘটীদের ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করতে নারাজ। দিল্লি হাইকোর্টের নির্দেশ না-মেনে ধর্মঘটীরা ‘আদালত অবমাননা’ করেছেন, তাই তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আর্জি জানিয়ে কাল শীর্ষ আদালতের দ্বারস্থ হন এয়ার ইন্ডিয়া-কর্তৃপক্ষ। বিচারপতি টি এস ঠাকুরের ডিভিশন বেঞ্চ বলেছে, “ধর্মঘটীরা আদালত অবমাননার মতো কিছুই করেননি। আপনাদের সমস্যা একসঙ্গে বসে আলোচনা করে মিটিয়ে নিন।” সংস্থার এক সূত্রের দাবি, এয়ার ইন্ডিয়ার পাইলটদের একাংশ এখন ধর্মঘট থেকে সরে আসার ‘সম্মানজনক শর্ত’ খুঁজছেন, কাজে ফিরতে চাইছেন বরখাস্ত পাইলটদের অনেকেই। |