নাগাড়ে ৯ দিন ধরে বিদ্যুৎ বিপর্যয়ের জেরে অসম জুড়ে শুরু হয়েছে আন্দোলন। বিদ্যুৎমন্ত্রী, মুখ্যমন্ত্রীর কুশপুতুল পুড়ছে। গরমে হাঁসফাঁস গুয়াহাটিতে টানা ১৫-২০ ঘণ্টা ধরে চলছে লোডশেডিং। আজ, সাংবাদিক সম্মেলন করে মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গগৈ বলেন, “এতদিন ধরে অসহ্য অবস্থা চলতে থাকলে মানুষের ধৈর্যের বাঁধ ভাঙতে বাধ্য। আন্দোলন তো হবেই। রাজ্যের ব্যাপক বিদ্যুৎ ঘাটতি চলছে। আশা করা যায়, আগামিকাল বিকেলের মধ্যে পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি ঘটবে, সেই চেষ্টাই চালানো হচ্ছে।”
চলতি মাসের৩ তারিখে বিন্নাগুড়ি-বঙ্গাইগাঁও বিদ্যুৎবাহী লাইনের দু’টি টাওয়ার ঝড়বৃষ্টিতে ক্ষতিগ্রস্থ হয়। সেই থেকেই সমস্যার সূত্রপাত। পশ্চিমবঙ্গ থেকে সাড়ে তিনশো মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেনা হত। দু’টি বড় টাওয়ার বিকল হওয়ায় এখন ২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেনা যাচ্ছে। পরিস্থিতি সরেজমিনে দেখতে ঘটনাস্থলে ঘুরে পশ্চিমবঙ্গ গিয়েছেন বিদ্যুৎমন্ত্রী প্রদ্যোৎ বরদলৈ। মুখ্যমন্ত্রী জানান, প্রয়োজনের তুলনায় বৃষ্টি কম হওয়ায় জলবিদ্যুতের উৎপাদনও কম। রাজ্য জুড়ে আগে ৫০০ মেগাওয়ট বিদ্যুৎ উৎপাদন হত, এখন হচ্ছে মাত্র ১২০ মেগাওয়ট। |
অগত্যা ভরসা সেই মোমবাতিই। ছবি: উজ্জ্বল দেব |
দৈনন্দিন চাহিদা আড়াইশো থেকে সাড়ে চারশো মেগাওয়াট। মুখ্যমন্ত্রীর আক্ষেপ, গ্যাসের অভাবে ১০০ মেগাওয়াটের গ্যাস বিদ্যুৎ প্রকল্পের কাজ দশ বছর পরেও শেষ হয়নি। তিনি হিসাব দেন, রাজ্যে ২০০১ সালে বিদ্যুতের মোট চাহিদা ছিল ৫৮০ মেগাওয়াট। উৎপাদন হত ১৮০ মেগাওয়ট। ২০১২ সালে চাহিদা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১১৫০ মেগাওয়ট। অথচ উৎপাদন বেড়েছে গড়ে মাত্র ১২০ মেগাওয়ট। তাই, টাওয়ার দু’টি মেরামতির পরে পরিস্থিতির খানিকটা উন্নতি হলেও লোডশেডিং কিন্তু আপাতত থাকবেই।
মাওবাদী প্রসঙ্গে। অসমে মাওবাদী ঘাঁটি নিয়ে গগৈয়ের বক্তব্য, “উজানি অসমের সব জেলায় মাওবাদীরা ঘাঁটি বানিয়েছে। অনেক আগে থেকেই এ কথা আমি বলে আসছি। রাজ্যের সব সংগ্রামপন্থী জঙ্গিরাই মাওবাদীদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছে। পরেশ বরুয়া যে ভাবে খোলাখুলি মাওবাদী হত্যার নিন্দা করেছেন, তাতে মাওবাদীদের প্রতি তাদের সমর্থন স্পষ্ট। এনএসসিএনও নাগাল্যান্ড ও মায়ানমারে মাওদের প্রশিক্ষণ দিচ্ছে। এই জন্যই আমি এসসিটিসির প্রতি সমর্থন জানিয়েছি।” বাংলাদেশ ও মায়ানমারকে সঙ্গে নিয়ে মাওবাদী ও উত্তর-পূর্বের জঙ্গি দমনের জন্য ফের এনসিটিসির পক্ষে সওয়াল করেন গগৈ। সেই সঙ্গে, মাওবাদী প্রভাবিত রাজ্যের জন্য কেন্দ্র যে বিশেষ প্রকল্পগুলি চালু করেছে, অসমেও সেই সব প্রকল্প চালু করার দাবি জানান মুখ্যমন্ত্রী।
পরবর্তী মুখ্যমন্ত্রী বাছাই প্রসঙ্গ উড়িয়ে দিয়ে গগৈ বলেন, “এখনই মুখ্যমন্ত্রীর পদ ছাড়ার কোনও ইচ্ছা নেই। অনেক কাজ করা বাকি। দু-একজন বিধায়ক সমালোচনা করতে পারে। সেটাই সুস্থ গণতন্ত্র। মানুষ ও দল এখনও আমার সঙ্গেই আছেন।” |