বাঙালি তারুণ্যের ধারকেও সেরার সম্মান
তারুণ্যকে সম্মান জানানো এমনিতে বাঙালির চলতি হাওয়ায় নেই। ‘সেরা বাঙালি’ কিন্তু সেই পুরস্কার, যেখানে থেকে থেকেই ঝিলিক দিল তারুণ্য।
অনুষ্ঠানের শুরুতে আনন্দবাজার পত্রিকার প্রধান সম্পাদক অভীক সরকার বলেছিলেন, ‘‘অবস্থা এমনই দাঁড়িয়েছে যে কৃতী বাঙালিকে সম্মান জানাতে চাইলে অন্ততপক্ষে দেড়শো বছর পিছিয়ে যেতে হয়।’’ কৃতীদের সংখ্যাল্পতাই তার কারণ। আর, এই স্বল্প সংখ্যার কারণেই ‘সেরা বাঙালি’-তে কৃতীরা এসেছেন বিভিন্ন বয়ঃসীমা থেকে। কেউ সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের মতো প্রবীণ, পরিচিত। কেউ বা অভিজিত বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতো তরুণ। বাকি পুরস্কারপ্রাপকদের মধ্যে বিজ্ঞানী সুশান্ত দত্তগুপ্ত, শিল্পী লালুপ্রসাদ সাউ, বিজ্ঞানী সুমন্ত্র চট্টোপাধ্যায়, শিল্পপতি বিনায়ক চট্টোপাধ্যায়কে বাদ দিলে বেশির ভাগই তরুণ।
পুরস্কৃত ১৩ জনের মধ্যে চার জনই সিনেমার। এবং সেখানে তরুণ ব্রিগেডেরই জয়জয়কার। সেরা অভিনেতা: ‘কহানি’র বব বিশ্বাস ওরফে শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়। সেরা পরিচালক: ‘অটোগ্রাফ’ ও ‘বাইশে শ্রাবণ’খ্যাত সৃজিৎ মুখোপাধ্যায়। সেরা সুরকার: অনুপম রায়। প্রেসিডেন্সি কলেজের ক্যান্টিনে গিটার নিয়ে মেতে থাকতেন যে অনুপম, তাঁর হাত ধরেই বাংলা সিনেমার দর্শক এবং শ্রোতা পেয়েছে আজকের জীবনের সুর: ‘আমাকে আমার মতো থাকতে দাও’ থেকে ‘গভীরে যাও।’ এই তিনের পর বছরের সেরা আবিষ্কারও এল সিনেমা-জগৎ থেকে। ‘ভূতের ভবিষ্যৎ’ ছবির পরিচালক অনীক দত্ত। তাঁদের হাতে পুরস্কার তুলে দিতে মঞ্চে উঠছেন প্রসেনজিত-অঞ্জন দত্তের সঙ্গে দেব, শ্রাবন্তী, জিৎ-এর মতো নবীনরাও।
হৃদমাঝারে...
সেরা বাঙালি ২০১২ অনুষ্ঠানে সৃজিত মুখোপাধ্যায়, শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়, অনীক দত্ত, অনুপম রায়,
সুশান্ত দত্তগুপ্ত, সুমন্ত্র চট্টোপাধ্যায়, অভিজিৎ বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায়, অভীক সরকার, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়,
লালুপ্রসাদ সাউ, সাকিব আল হাসান, মনোজ তিওয়ারি, রুচিরা গুপ্ত এবং বিনায়ক চট্টোপাধ্যায়।
সায়েন্স সিটি প্রেক্ষাগৃহে। ছবি: দেশকল্যাণ চৌধুরী
সিনেমায় চার জন, খেলায় দু’জন। দু’জনই ক্রিকেট থেকে এবং ‘কলকাতা নাইট রাইডার্স’ থেকে। মনোজ তিওয়ারি যে ভাবে রঞ্জিতে বাংলাকে জিতিয়েছেন, ‘সেরা বাঙালি’ হওয়া শুধু সময়ের অপেক্ষা ছিল। মনোজ নিজেও এ দিন পুরস্কার তুলে দিলেন আর এক ‘সেরা বাঙালি’র হাতে। বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের সাকিব উল হাসান। তিস্তার জল নিয়ে চুক্তি হওয়ার ঢের আগে শুক্রবার সায়েন্স সিটি অডিটোরিয়ামে কাঁটাতার ভেঙে মিশে গেল দুই বাংলা।
শিক্ষাজগতে সেরা বাঙালি: সুশান্ত দত্তগুপ্ত। ১৯৭৭ সালে ‘ইয়ং সায়েন্টিস্ট’ পদক, পদার্থবিজ্ঞানে কৃতী গবেষক, এখন বিশ্বভারতীর উপাচার্য। তবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের দেওয়া নম্বর আর মূল্যায়নে কী বা আসে যায়? স্কুলের পরীক্ষায় জীবনবিজ্ঞানে যিনি একদা ১০০-য় ১৩ পেয়েছিলেন, সেই সুমন্ত্র চট্টোপাধ্যায় এখন বেঙ্গালুরুর ‘ন্যাশনাল সেন্টার ফর বায়োলজিকাল সায়েন্সেস’-এর গবেষক। মানুষ কেন কিছু জিনিস স্মৃতিতে রাখতে পারে, বাকিগুলি ভুলে যায় তার কারণ বার করায় ব্যস্ত তিনি। মঞ্চে তাঁকে দেখে সকলেরই প্রায় এক উপলব্ধি, পরীক্ষার গণ্ডি ছাপিয়ে জীবন আরও, আরও বড়।
সেরা শিল্পীর পুরস্কার যিনি পেলেন, ঘটনাচক্রে তিনিও বিশ্বভারতীর কলাভবনেরই অধ্যাপক ছিলেন। সিউড়ির সন্তান লালুপ্রসাদ সাউ! তাঁর টেম্পেরা, গুয়াশের কাজে, এচিং আর লিথোগ্রাফে বারে বারেই মুগ্ধ হয়েছেন শিল্পরসিকরা।
সেরা শিল্পপতি: ‘ফিডব্যাক ভেঞ্চার্স’-এর বিনায়ক চট্টোপাধ্যায়। চাকরি ছেড়ে ব্যবসার ঝুঁকিতে নেমেছিলেন। বাঙালি কেন ব্যবসাকে ধান্দা বা ফন্দিবাজি মনে করে? আশাবাদী বিনায়ক মঞ্চে জানালেন, আগে বাঙালি মা-বাবা ছেলে ব্যবসা করবে শুনলে আঁতকে উঠতেন। গুজরাতি বা চেট্টিয়ারদের মধ্যে এমন ছিল না। কিন্তু এখন বাঙালিরাও বদলাচ্ছে। সেই সঙ্গে জ্ঞান-চর্চায় বাঙালির কদর আজও অম্লান। কিছুক্ষণ আগে বিজ্ঞানী সুমন্ত্রবাবু বলছিলেন ‘বেঙ্গালুরুর ল্যাবগুলিতে বাঙালি ছাত্রছাত্রীদের আলাদা সম্মান’। শিল্পপতি এবং বিজ্ঞানী দু’জনেই বদলে যাওয়া-না যাওয়া তারুণ্যের নীরব ইশারা দেখিয়ে গেলেন এ দিনের অনুষ্ঠানে।
১৩ জনের মধ্যে এক মাত্র মহিলা: রুচিরা গুপ্ত। শিশু এবং নারীপাচার নিয়ে তাঁর তথ্যচিত্র ইতিমধ্যেই নানা জায়গায় সাড়া ফেলেছে। হোয়াইট হাউস থেকে রাষ্ট্রপুঞ্জ নানা জায়গাতেই মনোযোগ দিয়ে শোনা হয়েছে তাঁর অভিজ্ঞতা। পাচার হয়ে যাওয়া যে মেয়েদের নিয়ে রুচিরার সংগ্রাম, তাদেরই এক জন ফতেমা উঠে এলেন মঞ্চে। রুচিরার হাতে তিনিই তুলে দিলেন সেরা বাঙালির পুরস্কার!
ওই ছবিটাই অনুষ্ঠানের উজ্জ্বল উদ্ধার। তেরো জন সেরার মধ্যে মাত্র এক জন মহিলা। এবং তাঁর হাতে পুরস্কার তুলে দিচ্ছেন পাচার হয়ে আসা এক নারী।
সেরা অনুষ্ঠান এ রকমই হয়ে থাকে!
 
 
 


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.