সেরার সেরা অভিজিৎ বিনায়ক, সারা জীবনের পুরস্কার সুনীলকে
ন্ধুগণ, দেশবাসীগণ, আমার কথা শুনুন। দারিদ্র দূর করার কোনও চালু ব্রহ্মাস্ত্র নেই। গরিবেরা বরং তাদের নিজেদের জীবনের অভিজ্ঞতা থেকে অনেক সিদ্ধান্ত নেয়। সেই সিদ্ধান্তের পদ্ধতি আমাদের শিখতে হবে...
শেক্সপিয়রের নাটকের মতো এই কথাটাই তাঁর ৩০০ পৃষ্ঠার বই ‘পুওর ইকনমিক্স’-এ তিনি বারংবার বলেছেন। এবং দুনিয়াকে চমকে দিয়েছেন।
এশিয়া, আফ্রিকা, লাতিন আমেরিকার ১৮টি দেশে গরিবদের নিয়ে বিচিত্র সব অভিজ্ঞতা তাঁর। মরক্কোর এক গরিব পরিবার, দু’বেলা ঠিকঠাক খাওয়া জোটে না। বাঙালি অর্থনীতিবিদের প্রশ্ন: আর একটু বেশি টাকা পেলে কী করবেন? উত্তর এল, ‘আর একটু সুস্বাদু খাবার কিনব।’ কথাবার্তার মধ্যেই তরুণ গবেষকের চোখে পড়ল, কুঁড়েঘরে রাখা একটি টিভি সেট। রোজ চাষবাস বা শ্রমিকের কাজ থাকে না, ফলে সময় কাটাতে গরিবের ঘরে টিভি-টি একান্ত প্রয়োজনীয়। টিভি থাকলে সামাজিক উৎসব, অনুষ্ঠানের পিছনে গরিবেরা কম খরচ করেন।
অভিজিৎ বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাতে ‘সেরার সেরা বাঙালি’র সম্মান
স্মারক তুলে দিচ্ছেন আনন্দবাজার সংস্থার প্রধান সম্পাদক অভীক সরকার।
ভারতের অভিজ্ঞতাই বা কম কীসে? রাজস্থানের গ্রামে এক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা টীকা দেওয়ার পরিকল্পনা নিয়েছে। কিন্তু কিছুতেই সেটি সফল হচ্ছে না, সাড়া মিলছে না। বাঙালি অর্থনীতিবিদের পরামর্শ, যারা টীকা নিতে আসবে, সবাইকে ডাল দেওয়া হোক। স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাটি অবাক। ডালের সঙ্গে টীকার কী সম্পর্ক? কিন্তু সে বার টীকাদান হইহই করে সফল। প্রমাণ হয়ে গেল, শুধু ‘জনস্বাস্থ্য’ গোছের বড় বড় কথা বলে গরিবদের বোঝা যায় না।
এই ‘পুওর ইকনমিক্স’-এর লেখক অভিজিৎ বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায়ই ২০১২ সালের ‘সেরার সেরা’ বাঙালি। শুক্রবার সন্ধ্যাতেও পুরস্কার নিয়ে সায়েন্স সিটি অডিটোরিয়ামে দর্শকদের বলছিলেন, “বইটা মোটেই অর্থনীতির বই-এর মতো কঠিন নয়। পড়ে দেখবেন।”
কয়েক মাস আগে অর্থনীতিবিদদের এক আসরে অবশ্য আরও সাঙ্ঘাতিক কথা বলেছিলেন। বইয়ের মূল বক্তব্য কী, জিজ্ঞেস করা হয়েছিল তাঁকে। প্রেসিডেন্সি কলেজের অর্থনীতির প্রবাদপ্রতিম অধ্যাপক দীপক বন্দ্যোপাধ্যায় এবং অধ্যাপক নির্মলা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পুত্র অভিজিতের সটান উত্তর ছিল, ‘মূল বক্তব্য একটাই। আমার কোনও বক্তব্য নেই।’ কোনও তাত্ত্বিক মডেল, সংখ্যাসারণির দরকার নেই। অভিজিৎ বুঝিয়ে দিয়েছেন, দারিদ্র দূর করার পরিকল্পনা করতে গেলে দরিদ্রদের কথা শোনাটাই সবচেয়ে জরুরি।
সারা জীবনের অবদানের জন্য স্বীকৃতি পেলেন সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়।
এমআইটি-র অধ্যাপক অভিজিৎ গরিবের জীবনের কথা শুনিয়েছেন। আর পঞ্চাশের দশকে ‘কৃত্তিবাস’ যুগ থেকে যিনি বাঙালিকে বারে বারেই শুনিয়েছেন অমোঘ প্রার্থনা, ‘হে জীবন, সুস্থির জীবন, তুমি রাগী স্ত্রীলোকের হাতে কখনও দিও না ফলিডল’। কবিতার মধ্যে দিয়েই জানিয়েছেন, ‘নীরার অসুখ হলে কলকাতার সবাই বড় দুঃখে থাকে।’ সেই সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়-ই সম্মানিত হলেন ‘সেরা বাঙালি’র ‘লাইফটাইম’ সম্মানে। অভিজিৎ এবং সুনীল... দুই প্রজন্মের দুই সেরার হাতেই পুরস্কার তুলে দিলেন আনন্দবাজার পত্রিকার প্রধান সম্পাদক অভীক সরকার।
‘সেরার সেরা’ ও ‘লাইফটাইম’ সম্মানে সম্মানিত দু’জনকে নিয়ে সিনেমা, খেলা, শিল্পকলা, ব্যবসা ইত্যাদি বিভিন্ন ক্ষেত্রে সম্মানিত হলেন ১৩ জন বাঙালি। তেরোর গেরোয় আটকে যাওয়া বা অশুভ সংখ্যার ব্যাপার নয়, প্রধান সম্পাদকের আফশোস ছিল অন্যত্র। ‘‘বাঙালির মধ্যে কৃতীর সংখ্যা এবং কৃতীর মধ্যে বাঙালির সংখ্যা দুটিই অত্যন্ত কম... বছরে যে ক’টা বাংলা সিনেমা হিট হয়, তার চেয়েও কম।’’

শুক্রবার সায়েন্স সিটি প্রেক্ষাগৃহে দেশকল্যাণ চৌধুরীর তোলা ছবি।
 
 
 


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.