রঙ্গচিত্র ‘ফরওয়ার্ড’ করে অপরাধই করেছিলেন অধ্যাপক, বললেন মুখ্যমন্ত্রী
কার্টুন-কাণ্ড আবার উস্কে দিলেন মমতা
প্রায় বিস্মৃতির আড়ালেই চলে গিয়েছিল যে কার্টুন কাণ্ড, তাকে আবার সামনে নিয়ে এলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শুক্রবার দলের নেতা-কর্মীদের সামনে তিনি স্পষ্ট জানান, তাঁর সঙ্গে দীনেশ ত্রিবেদী ও মুকুল রায়কে নিয়ে তৈরি রঙ্গচিত্রটি ই-মেলে ‘ফরওয়ার্ড’ করে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক অম্বিকেশ মহাপাত্র ‘অপরাধ’ই করেছিলেন।
কেন অপরাধ, তা ব্যাখ্যা করতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী তথা রাজ্যের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জানিয়েছেন, ওই ব্যঙ্গচিত্রের মাধ্যমে পরোক্ষে তাঁকে ‘খুনি’ বলা হয়েছিল। সে কারণেই বিষয়টি ‘সাইবার অপরাধে’র পর্যায়ভুক্ত। ওই অধ্যাপককে যখন
অম্বিকেশ মহাপাত্র
গ্রেফতার করা হয়, তখনও কারণ হিসেবে এই যুক্তি দেখিয়েছিল তৃণমূলের একাংশ। এ দিন তৃণমূলের রাজ্য সভাপতি নির্বাচনের মঞ্চে মমতা বলেন, “কার্টুন চিত্র করে চরিত্রহননের চেষ্টা হয়েছিল। আমার ও মুকুলের ছবি দিয়ে লেখা হয়েছিল, ভ্যানিশ! অর্থাৎ খুন করার কথা বলা হয়েছিল। ওটা আবার কার্টুন নাকি! ওটা সাইবার ক্রাইম।”
মাসখানেক আগে ওই রঙ্গচিত্র-কাণ্ডে অম্বিকেশবাবুকে গ্রেফতার করায় বিতর্কের মুখে পড়েছিল রাজ্য সরকার। গ্রেফতারের বিষয়টি তাঁর ‘অজ্ঞাতে’ই হয়েছিল বলে তখন ঘনিষ্ঠমহলে দাবি করেন মুখ্যমন্ত্রী। অভিযোগ, স্থানীয় তৃণমূলের লোক বলে পরিচিত কয়েক জন ওই অধ্যাপককে হেনস্থাও করে। জনমতের চাপে হেনস্থাকারীরা পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণ করে এবং জামিনও পেয়ে যায়। তার পর ঘটনাটি ধীরে ধীরে পিছনের সারিতে চলে গিয়েছিল। কিন্তু এ দিন মমতা আবার তাকে ‘খুঁচিয়ে’ তুললেন বলেই তৃণমূলের একাংশের বক্তব্য। এর জেরে বিষয়টি নিয়ে নতুন করে বিতর্ক শুরু হল বলে প্রশাসনিক মহলের অভিমত। মমতা এ দিন সরাসরিই বলেন, “অন্যের ই-মেল ব্যবহার করে এক অধ্যাপক ওই কাজ করেছিলেন বলে শুনেছি। অন্যের ই-মেল ব্যবহার করে এই ধরনের চরিত্রহননের চেষ্টা যে অন্যায়, তা কি অধ্যাপক জানেন না!”
রঙ্গচিত্রে তাঁর ও মুকুলের ছবিটি ‘ডি-কম্পোজড’ (যার অর্থ ‘পচাগলা’) বলে মন্তব্য করেন মুখ্যমন্ত্রী। মঞ্চের তৃণমূল নেতারা নেত্রীকে বলার চেষ্টা করেন, ছবিটি ‘সুপার-ইম্পোজ’ করা। কিন্তু নেত্রী তাঁদের থামিয়ে ছবিটিকে ‘ডি-কম্পোজড’ বলেই উল্লেখ করেন। যার ব্যাখ্যায় তৃণমূলের এক শীর্ষ নেতা জানাচ্ছেন, ছবিটি ‘কুরুচিকর’ বোঝাতে গিয়েই মুখ্যমন্ত্রী ওই শব্দটি ব্যবহার করেছেন।
অম্বিকেশবাবু জানিয়েছিলেন, ওই রঙ্গচিত্র পাঠিয়ে মমতা বা মুকুলকে ‘অসম্মান’ করতে চাননি। তা সত্ত্বেও তাঁকে গ্রেফতার করা হয়। ঘটনার প্রতিবাদে সরব হন বিভিন্ন কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-অধ্যাপক এবং মমতাপন্থী বিশিষ্টজনদের একাংশ। তখনও মমতা বলেন, “রিকশাওয়ালা অন্যায় করলে অন্যায়। আর অধ্যাপক অন্যায় করলে অন্যায় নয়? আইন সকলের জন্য এক!” এ দিন মমতা বুঝিয়ে দিলেন, তিনি সেই অবস্থান থেকে এক চুলও সরেননি।
সিপিএমের মদতে বেশ কিছু সংগঠন ই-মেল, এসএমএস পাঠিয়েও মানুষকে ‘বিভ্রান্ত’ করার চেষ্টা করছে বলে অভিযোগ মুখ্যমন্ত্রীর। তাঁর বক্তব্য, “কিছু সংগঠন অন্য সংগঠনের নামে ই-মেল পাঠাচ্ছে। এর পিছনে সিপিএমের মদত রয়েছে। মানুষের কাছে অনুরোধ, দয়া করে এ সব ই-মেল এবং এসএমএস বিশ্বাস করবেন না।” সংগঠনগুলি ‘গণতন্ত্র-বিরোধী’ বলে দাবি করে মমতার মন্তব্য, “সংগঠনগুলি গণতন্ত্র মানে না। ভোট দেয় না। আবার ই-মেল, এসএমএসের মাধ্যমে গণতন্ত্রের কথা বলে!”
নতুন সরকারের উন্নয়ন-কাজ ব্যাহত করতে সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটেও সচেষ্ট সিপিএম, এই অভিযোগ করে মমতা হুঁশিয়ারি দেন, “এ বার ফেসবুকেই সিপিএমের মোকাবিলা করব!” সরকারকে ‘বিপাকে’ ফেলার চেষ্টা থেকে বিরত থাকতে অনুরোধ করে তিনি বলেন, “ক্ষমতায় এসে বিরোধীদের আক্রমণ করিনি। ওদের অফিসে গিয়েও কিছু বলিনি।” সিঙ্গুর আন্দোলনের সময় বামফ্রন্ট সরকার তাঁকে বিধানসভায় ঢুকতে বাধা দিয়েছিল। প্রতিবাদে বিধানসভায় তৃণমূলের বিধায়করা ভাঙচুর চালান। পরে ওই বিধায়কদের বেতনও কাটা হয়েছিল জানিয়ে মমতা বলেন, তৃণমূল তার বদলা নেয়নি। বরং বিরোধীদের কাছে মমতার অনুরোধ, “উন্নয়নে বাধা দেবেন না। গায়ে জ্বালা করলে (নতুন সরকারকে ক্ষমতায় দেখে) গঙ্গায় স্নান করুন!”
 
 
 


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.