এক দশকের টানা লোকসানের পরে লাভের মুখ দেখল হিমূল। গত বছরের নভেম্বরেও যেখানে হিমূলের প্রতি মাসে লোকসান ছিল প্রায় ২৪ লক্ষ টাকা। সেখানে এপ্রিলে হিমূল লাভ করেছে ১ লক্ষ ৮ হাজার টাকা। শুক্রবার ওয়েস্ট বেঙ্গল মিল্ক ফেডারেশনের চেয়ারম্যান তারক বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপস্থিতিতে মাটিগাড়া নকশালবাড়ির বিধায়ক শঙ্কর মালাকার, হিমূলের কর্মী, আধিকারিক এবং বিভিন্ন দুগ্ধ সমবায় গোষ্ঠীর সদস্যদের উপস্থিতিতে এই লাভের হিসাব পেশ করা হয়। ওয়েস্ট বেঙ্গল মিল্ক ফেডারেশনের চেয়ারম্যান বলেন, “রাজ্য সরকার মাত্র কয়েক মাসে হিমূলকে লাভের মুখ দেখিয়েছে। এ বার আমাদের কাজ হল আগামী তিন মাসের মধ্যে হিমূলের নিয়ন্ত্রণাধীন সমস্ত দুগ্ধ সমবায় গোষ্ঠীকে চাঙা করে শক্ত মাটিতে দাঁড় করানো।” সিটু অনুমোদিত ডেয়ারি ফার্ম মজদুর ইউনিয়ন অবশ্য হিমূল কর্তৃপক্ষের এই বক্তব্যের সঙ্গে একমত নয়। সংগঠনের সম্পাদক বিজয় প্রধান বলেন, “কিসের লাভ? শ্রমিকদের বকেয়া, ইনক্রিমেন্ট আটকে রেখে উনি হিমূলকে লাভ দেখিয়ে রাজ্য সরকারের চোখে ভাল হওয়ার চেষ্টা করছেন। ১৪ মে’র পরে এই ব্যাপারে আন্দোলনে নামা হবে। তবে সমবায়গুলি সক্রিয় করে দুধের জোগানো সম্ভব হলে স্বাগত জানাব।” হিমূল সূত্রে জানা গিয়েছে, লোকসানে চলা সংস্থাটিকে লাভের মুখ দেখাতে বর্তমান রাজ্য সরকার গত নভেম্বরের শেষে শিলিগুড়ির অতিরিক্ত জেলাশাসক রজত সাইনিকে অতিরিক্ত কার্যনির্বাহী পদে নিয়োগ করে। তিনি দায়িত্ব নেওয়ার পরে প্রথমেই হিমূলের কর্মসংস্কৃতি বদলে দেন। নিয়মে কর্মীদের অফিসে আসা, ভেঙে পড়া দুগ্ধ সমবায় গোষ্ঠীকে চাঙা করে দুধের জোগান বাড়ানোর কাজে নামেন। পাশাপাশি, রাজ্য সরকারের দেওয়া ৮ কোটি টাকা দিয়ে সমবায় সমিতিরগুলিকে বকেয়া মেটানোর কাজে নামেন। তাতে দুধের জোগান বাড়ে। পাশাপাশি অতিরিক্ত জেলাশাসক বিদ্যুতে চলা হিমূলের খরচ বাঁচাতে নতুন একটি বয়লার বসান, যেটিতে তুষ জ্বালানি হিসাবে ব্যবহার হয়। তার ফলে হিমূলের বিদ্যুতের বিলে মাসে উদ্বৃত্ত্ব হয় প্রায় ৭-৮ লক্ষ টাকা। ওয়েস্ট বেঙ্গল মিল্ক ফেডারেশনের চেয়ারম্যান বলেন, “অতিরিক্ত জেলাশাসক হিমূলে দারুণ কাজ করেছেন। এই পদ্ধতিতেই এগোতে হবে।” হিমূলের দুধ যাতে জলপাইগুড়ি শহরে এবং ঘি কলকাতার বাজারে বিক্রি করা যায় সেই ব্যাপারেও পরিকল্পনা হয়েছে বলে জানিয়েছেন ওয়েস্ট বেঙ্গল মিল্ক ফেডারেশনের চেয়ারম্যান। প্রসঙ্গত হিমূলের নিয়ন্ত্রণে পাহাড় ও সমতল মিলিয়ে ২২১টি গোষ্ঠী রয়েছে। তার মধ্যে এখন ১১৭টি গোষ্ঠী খুঁড়িয়ে চললেও বাকিগুলি কার্যত নিস্ক্রিয় রয়েছে। ফলে হিমূলের দুধের জোগান এখনও যথেষ্ঠ নয়। পাহাড় থেকে প্রতিদিন গড়ে প্রায় আড়াই হাজার লিটার এবং সমতল থেকে সাড়ে ১৩ হাজার লিটার দুধের সরবরাহ হচ্ছে। সমস্ত সমবায় গোষ্ঠী ফের সক্রিয় করা গেলে দুধের জোগান প্রায় দ্বিগুণ হবে বলে আশা করছেন ওয়েস্ট বেঙ্গল মিল্ক ফেডারেশনের চেয়ারম্যান। তিনি বলেন, “দুধের জোগান বাড়ানো সম্ভব হলেই হিমূলকে লাভজনক সংস্থা হিসাবে পাকাপাকি ভাবে দাঁড় করানো সম্ভব। সেজন্যই সমবায় গোষ্ঠীগুলি সক্রিয় করার পাশাপাশি নতুন গোষ্ঠী তৈরির নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ২০০৯ সালের পরে নিস্ক্রিয় হয়ে থাকা জেলা দুগ্ধ সমবায় বোর্ডকেও তার পরে সক্রিয় করা হবে।” তারকবাবু জানান, এদিনের বৈঠকে মাটিগাড়া নকশালবাড়ির বিধায়ক হিমূলে স্থায়ী ম্যানেজিং ডিরেক্টর চেয়েছেন। সেই ব্যাপারেও ভাবনাচিন্তা করা হচ্ছে। যে সমস্ত কর্মী স্বেচ্ছাবসর চান, তাঁদের বিষয়েও চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে বলে তিনি জানান। হিমূলের বেহাল দশার সুযোগ নিয়ে সম্প্রতি গুজরাটের একটি সংস্থা উত্তরবঙ্গে ব্যবসা বাড়ানোর কাজে নেমেছে। লাভের মুখ দেখার পরে এ বার হিমূল কর্তারা ওই সংস্থাটির সঙ্গে পাল্লা দেওয়ার পরিকল্পনা নিয়েছেন। এই কাজে তৈরি হয়েছে ২০ সেকেন্ডের একটি বিজ্ঞাপনও। হিমূলের মুখ্য কার্যনির্বাহী আধিকারিক তথা অতিরিক্ত জেলাশাসক রজত সাইনি বলেন, “মানুষ যাতে ফের হিমূলের উপরে ভরসা রাখতে পারেন সেজন্য ওই বিজ্ঞাপন তৈরি করা হয়েছে। ২০ মে’র মধ্যে সেটি প্রকাশ করা হবে।” |