শিল্প নিয়ে কতশত কথা, গড়কমলপুর সেই ধুঁকছে
শিল্পায়ন, পুঁজির সংস্থান নিয়ে নিত্যই আলোচনা রাজ্য-রাজনীতিতে। প্রদীপের নীচে অন্ধকারের মতোই বাংলার সাবেক শিল্পগুলির দুর্দশা নিয়ে অবশ্য বিশেষ হেলদোল দেখা যায় না কোনও স্তরেই। হয়তো বা পছন্দের মাপকাঠিও বদলে গিয়েছে দিনে দিনে। স্বদেশি আন্দোলনের অন্যতম স্নায়ুকেন্দ্র মহিষাদলের কাঁসা-পিতল শিল্পের আজ ঘোর দুর্দিন। পরিবর্তিত দিনকালে কাঁসা-পিতলের বাসন-কোসনের স্থান নিয়েছে স্টিলের বা হাল আমলে ফাইবারের থালাবাটি। আর কপাল পুড়েছে মহিষাদলের গড়কমলপুরে কাঁসা-পিতল শিল্পের সঙ্গে যুক্ত কারিগরদের।
গড়কমলপুরের ১৫টি কারিগর-পরিবার এখন তাই বিকল্প খুঁজছে। এলাকার অনেক বাড়িতে এখনও রয়েছে হস্তচালিত কিছু সাবেক মেশিন। সাইকেলের টিউবের ভাল্ভ, দস্তা, সীসা, কোককয়লা আর পিতলের সঙ্গে বংশ পরম্পরায় সম্পর্ক কারিগর পরিবারগুলির। কিছু দিন আগে পর্যন্তও বিয়ে, নানা সামাজিক অনুষ্ঠান, পুজোয় কাঁসা-পিতলের বাসন-সরঞ্জামের একটা চাহিদা ছিল। সে সবের ব্যবহার দিন দিন কমেছে। এ দিকে পুরনো শিল্পের কাঁচামালেরও দাম বেড়েছে। অন্য দিকে, বাজারে কদর বেড়েছে স্টিল-ফাইবারের সরঞ্জামের। প্রতিযোগিতার দৌড়ে ক্রমেই পিছিয়ে পড়েছে কাঁসা-পিতল শিল্প।
দুর্দশায় কাঁসাশিল্পীরা। ছবি: আরিফ ইকবাল খান।
এই শিল্পের সঙ্গে দীর্ঘ দিন যুক্ত মানিক রানা বলেন, “এখনও আমরা শিল্পটা বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টা করছি। জিনিসপত্রের দাম যে হারে দিনদিন বাড়ছে! তাতে এ ভাবে কত দিন আর চলবে, জানি না।” এই পেশার সঙ্গে যুক্ত মহিষাদল বাজারের এক ব্যবসায়ী গোকুলচন্দ্র রানার কথায়, “কাঁসা-পিতলের বাসনের চাহিদা কমে গিয়েছে। তবে মূর্তি, কুলোর চাহিদা এখনও রয়েছে। বাসনের ব্যাপারে এখন স্টিলের সঙ্গে পাল্লা দেওয়া শক্ত।” তিনিই জানান, মাসে কাঁসা-পিতলের বাসনের এখন যা বিক্রি, দশ বছর আগেও তা ছিল দশ গুণ।
এ শিল্পে আর লাভ নেই বুঝে কারিগর পরিবারের বর্তমান প্রজন্মও এখন অন্য পেশায় মন দিচ্ছে। আগে যেখানে এই গ্রামের অন্তত ৫০টি পরিবার যুক্ত ছিল এই পেশায়, এখন সেটাই কমে হয়েছে ১৫। তারাই কোনও রকমে টিকিয়ে রেখেছে সাবেক শিল্প। মাটির ছাঁচে গ্লাস বানাতে বানাতে শিল্পী রবীন্দ্রনাথ রানা বললেন, “আগে কত মহাজন এসে ঘর থেকে বাসন নিয়ে যেত। কিন্তু এখন বাজারে গিয়ে বিক্রি করলেও কেউ তেমন নিতে চায় না। বিক্রিই হয় না, তাই বানাইও কম। আগে যেখানে ৪০ কেজি কাঁচামাল ব্যবহার হত, কমতে কমতে এখন অর্ধেকের নীচে নেমে এসেছে। এই অবস্থায় চার-পাঁচ জন কারিগরের মজুরি বহন করাও কঠিন।” এলাকারই মহাদেব মাইতির বক্তব্য, “ঋণে এখন আর সরকারি ভর্তুকিও পাওয়া যায় না। বাড়ির নতুন ছেলে-মেয়েরা এই পেশায় উন্নতির সম্ভাবনা দেখতে না পেয়ে অন্য কাজে চলে যাচ্ছে। সরকার যদি না ভাবে, বাংলার এই সাবেক শিল্পের বেঁচে থাকাই শক্ত।”
সরকারি কোনও সহায়তা বা উৎসাহ-প্রকল্পই নেই বলে কারিগরদের অভিযোগ। তবে পূর্ব মেদিনীপুর জেলা শিল্পকেন্দ্রের এক আধিকারিকের বক্তব্য, এই শিল্প বাঁচিয়ে রাখা দরকার মনে করেই শিল্পকেন্দ্রের কর্মীরা ওই এলাকায় গিয়ে শিল্পীদের পরিচয়পত্র যাচাই করেছেন। যাতে শিল্পীরা আবেদনের মাধ্যমে সর্বাধিক ২ লক্ষ টাকা পর্যন্ত ব্যাঙ্ক ঋণ পান, সে ব্যাপারেও শিল্পকেন্দ্রের তরফে যথাসম্ভব সহায়তার চেষ্টা করা হবে।
কিন্তু বাজার না বাড়লে, বৈচিত্রের পথ-সন্ধান দিয়ে নতুনতর সরঞ্জামের উৎপাদনে উৎসাহ না জোগালেকাঁসা-পিতল শিল্পের ভবিষ্যৎ নিয়ে অনিশ্চয়তা থাকছেই।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.