আবার উল্টো দিকে ঘুরল শিল্পের চাকা। মাত্র পাঁচ মাসের মাথায়।
গত ২০১১ সালের অক্টোবরে এক ধাক্কায় সরাসরি ৫% কমে গিয়েছিল শিল্পোৎপাদন। সেই ইতিহাসেরই পুনরাবৃত্তি দেখল ২০১২-র মার্চ। শুক্রবার প্রকাশিত সরকারি পরিসংখ্যান অনুসারে এ বার উৎপাদন কমলো ৩.৫%। যার অর্থ, বৃদ্ধির হার কমা নয়, সঙ্কুচিত হল শিল্পোৎপাদনই। অর্থাৎ উৎপাদন বৃদ্ধির হার নেমে গেল শূন্যের ৩.৫% নীচে। এটা অর্থনীতির মন্দাক্রান্ত হওয়ার লক্ষণ বলেই মনে করছে উদ্বিগ্ন শিল্পমহল। হতাশ কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী প্রণব মুখোপাধ্যায়ও। আর, টাকার নজিরবিহীন পতনে শঙ্কিত শেয়ার বাজারে শিল্পোৎপাদন কমার খবর ডেকে আনল সেনসেক্সের আরও ১২৭ পয়েন্ট পতন। ডলারে টাকার দাম বৃহস্পতিবার ৪২ পয়সা বাড়লেও শুক্রবার তা ফের ২১ পয়সা পড়ে যায়। দিনের শেষে ১ ডলারের দাম দাঁড়ায় ৫৩.৬৩/৬৪ টাকা।
এক বছর আগে শিল্প বৃদ্ধির হার ছিল যথেষ্ট বেশি, ৯.৪%। এমনকী ফেব্রুয়ারি মাসেও উৎপাদন বেড়েছিল ৪.১% হারে। আর গোটা ২০১১-’১২ অর্থবর্ষের হিসেবেও শিল্পোৎপাদন বৃদ্ধির হার যৎসামানা, ২.৮%। যেখানে এর আগের ২০১০-’১১ আর্থিক বছরে তা ছিল ৮.২%। অর্থবর্ষে
শিল্প বৃদ্ধি তলানিতে নেমে আসায় আর্থিক বৃদ্ধির পূর্বাভাসও ৬.৯% থেকে কমিয়ে আনা হবে বলে সরকারি সূত্রের ইঙ্গিত।
শিল্পে নতুন লগ্নি না-আসার প্রভাব যেখানে সবচেয়ে বেশি পড়ে, সেই মূলধনী পণ্য ক্ষেত্রে সেন্ট্রাল স্ট্যাটিসটিক্যাল অর্গানাইজেশন প্রকাশিত এই পরিসংখ্যান অনুসারে মার্চে উৎপাদন কমেছে ২১.৩%। গত বছরে উৎপাদন বেড়েছিল ১৪.৫%। সার্বিক ভাবে কারখানার উৎপাদন কমেছে ৪.৪%। শিল্পোৎপাদন বৃদ্ধির হার হিসেবের ক্ষেত্রে এর গুরুত্ব ৭৫%। এর জন্য মূলত রফতানি কমা, দেশে যথেষ্ট চাহিদা না-থাকা, কাঁচামালের অত্যধিক দাম এবং চড়া সুদকেই দায়ী করেছে শিল্পমহল। গত বছরে এ ক্ষেত্রে উৎপাদন বেড়েছিল ১১%। খননে উৎপাদন কমেছে ১.৩%। গত বছরের বৃদ্ধি ০.৪%। ভোগ্যপণ্য উৎপাদন বাড়লেও তা নামমাত্র ০.৭%। এ ক্ষেত্রেও গত বছর উৎপাদন বেড়েছে ১৩.২% হারে।
অর্থমন্ত্রী প্রণব মুখোপাধ্যায় মন্তব্য করেছেন, বিশ্ব জুড়ে চাহিদা কমা ও দেশে শিল্পে লগ্নি ঢিমেতালে চলার প্রভাবই পড়েছে শিল্পোৎপাদনের পরিসংখ্যানে। তিনি বলেন, “রিজার্ভ ব্যাঙ্ক তার গত বারের ঋণনীতিতেই সুদ কমানোর পথে হাঁটলেও কার্যক্ষেত্রে তা নেমে আসতে আরও কিছুটা সময় লাগবে।”
অবিলম্বে সুদের হার আরও কমানোর দাবি অবশ্য তুলেছে শিল্পমহল। অ্যাসোচ্যাম সেক্রেটারি জেনারেল ডি এস রাওয়াত বলেছেন, মূল্যবৃদ্ধির ঝুঁকি নিয়েও রিজার্ভ ব্যাঙ্কের উচিত সুদ আরও কমিয়ে আনার ব্যবস্থা করা। অর্থনীতিকে মন্দার কবল থেকে বাঁচাতে আর্থিক সংস্কার ত্বরান্বিত করতে কেন্দ্রের কাছে আর্জি জানান তিনি। পাশাপাশি, সিআইআই-এর ডিরেক্টর জেনারেল চন্দ্রজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়ের আশঙ্কা, শিল্পের এই চিত্র অর্থনীতির অনুন্নয়নের দুষ্টচক্রে পড়ার প্রাথমিক লক্ষণ হতে পারে। এই পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসতে বিশ্ব মন্দা সত্ত্বেও দেশের বিপুল বাজার সাহায্য করবে বলে তাঁর আশা। এ জন্য কেন্দ্র এবং রিজার্ভ ব্যাঙ্ককে সমন্বয়ের মাধ্যমে নীতি স্থির করতে হবে বলে তাঁর অভিমত। যোজনা কমিশনের ডেপুটি চেয়ারম্যান মন্টেক সিংহ অহলুওয়ালিয়াও একই সুরে বলেছেন, শিল্পোৎপাদনকে খাদ থেকে টেনে তুলতে হলে দেশে চাহিদা বাড়ানোর উপরেই জোর দিতে হবে। আর্থিক ত্রাণ প্যাকেজ এ ক্ষেত্রে তেমন কাজে দেবে না। |