এয়ার ইন্ডিয়ার উড়ান-সঙ্কটের সুযোগ নিয়ে নিজেদের ব্যবসা বাড়াতে উদ্যোগী হল রেল।
বিমান ভাড়া বেড়ে যাওয়া ও নানা কারণে অনেক উড়ান ঠিকমতো না চলায় এমনিতেই ট্রেনের উচ্চ শ্রেণিতে যাওয়ার প্রবণতা তৈরি হচ্ছে বলে মনে করছে রেল। এখন আবার তার সঙ্গে যোগ হয়েছে এয়ার ইন্ডিয়ার চলতি অচলাবস্থা। যার সুযোগ নিতে গত ক’দিনে বাড়তি ভাড়া নিতে শুরু করেছে অন্য বিমান সংস্থাগুলিও। ফলে বিমানের অনেক যাত্রীই এখন ট্রেনে যেতে চাইছেন। যে কারণে গত ক’দিন ধরে দিল্লি ও মুম্বই শাখায় উচ্চ শ্রেণিতে টিকিটের চাহিদা অনেকটাই বেড়ে গিয়েছে। এই বাড়তি যাত্রীদের কিন্তু নিরাশ করছে না রেল। অতিরিক্ত ব্যবসা করার এই সুযোগ তারা ছাড়তে চায় না।
রেল সূত্রের খবর, দিল্লি ও মুম্বই শাখায় বিভিন্ন ট্রেনে বাড়তি বাতানুকূল কামরা (টু টিয়ার এবং থ্রি টিয়ার) যোগ করা হয়েছে উচ্চ শ্রেণিতে। অপেক্ষমান যাত্রীর তালিকা তাতেও কমছে না। এক রেল কর্তা জানিয়েছেন, “এখন দিল্লি ও মুম্বই দুরন্ত এক্সপ্রেস, পূর্বা এক্সপ্রেস এবং মুম্বই মেলে বাতানুকূল প্রথম শ্রেণির অতিরিক্ত কামরা দেওয়ার কথা চিন্তা করছি।” গ্রীষ্মে পূর্ব ও দক্ষিণ পূর্ব রেল যে সব বিশেষ ট্রেন চালায় সেগুলিতেও বাড়তি বাতানুকূল কামরা জুড়ে দেওয়ার কথা ভাবা হচ্ছে। প্রয়োজনে বিশেষ ট্রেনের সংখ্যাও বাড়ানোর কথা ভাবা হচ্ছে। তবে কত দিন এই উড়ান-সঙ্কট চলবে তার উপরে নির্ভর করছে পুরো পরিকল্পনা।
পূর্ব রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক সমীর গোস্বামী বলেন, “দিল্লিমুখী রাজধানী বা দুরন্তের মত ট্রেনগুলির বাতানুকুল প্রথম শ্রেণিতে আচমকা যাত্রী সংখ্যা বাড়ার প্রথম কারণ হল উড়ান বন্ধ থাকা। রাজধানীর মতো ট্রেনে সাধারণত প্রতি দিন দুই থেকে তিন জন করে যাত্রী প্রথম শ্রেণিতে অপেক্ষমান তালিকায় থাকেন। কিন্তু এখন সেই তালিকায় ২৫ থেকে ৩০ জনের নাম থেকে যাচ্ছে।” দক্ষিণ-পূর্ব রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক সৌমিত্র মজুমদার বলেন, “মুম্বইমুখী দুরন্ত বা এক্সপ্রেস ট্রেনগুলিতে কয়েক দিন ধরে অতিরিক্ত চাপ বেড়েছে। তাই স্পেশ্যাল ট্রেন চালানো হচ্ছে। প্রয়োজনে আরও স্পেশ্যাল ট্রেন দেওয়া হবে।”
এপ্রিল মাসে গত বছরের তুলনায় এ বছর দক্ষিণ-পূর্ব রেলে যাত্রী বেড়েছে সাড়ে ৭ শতাংশ। পূর্ব রেলেও ওই এক মাসে যাত্রী বেড়েছে প্রায় ৬ শতাংশ। ফলে দুই রেলেই আয়ও বেড়েছে প্রায় ১১ শতাংশেরও বেশি।
রেল কর্তাদের দাবি, বিমানের বদলে বহু যাত্রী ট্রেনকে বেছে নেওয়াতেই এটা হয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে ট্রেনের ভাড়া এক টাকাও বাড়েনি। অথচ উড়ানের ভাড়া বেড়েই চলেছে। এখন কলকাতা থেকে দিল্লি পর্যন্ত উড়ানে নুন্যতম ভাড়া ট্রেনের বাতানুকুল প্রথম শ্রেণির ভাড়ার চেয়ে দুই থেকে আড়াই হাজার টাকা বেশি। ফলে এমনিতেই অনেক যাত্রী এখন উড়ান ছেড়ে ট্রেনে যাওয়ার পরিকল্পনা করছেন। তাই রেলের উচ্চ শ্রেণিগুলিতে (বাতানুকুল প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণি) এখন ভিড় লেগেই রয়েছে। তার উপরে উড়ানের এই অচলাবস্থার জন্য চাপ বেড়েছে।
বিমানবন্দর সূত্রে খবর, এয়ার ইন্ডিয়ার আন্তর্দেশীয় উড়ানগুলি অনিয়মিত হয়ে পড়ায় যাত্রীরা কলকাতা থেকে দিল্লি পর্যন্ত ট্রেনে গিয়ে সেখান থেকে বিদেশি সংস্থার উড়ানগুলি ধরার চেষ্টা করছেন। একই ভাবে অনেক যাত্রী আবার মুম্বই পর্যন্ত গিয়ে সেখান থেকে বাইরের উড়ান ধরছেন। আর তার জেরেই দিল্লি ও মুম্বইমুখী ট্রেনগুলিতে উচ্চ শ্রেণিতে আসন সংরক্ষণের তালিকা দীর্ঘ হচ্ছে। |