রাস্তা সারানো ও অবৈধ ভ্যান চলাচল বন্ধের দাবিতে ধর্মঘটে নেমেও প্রশাসনের আশ্বাসে তা তুলে নিয়েছিলেন বাস মালিকেরা। কিন্তু দেড় মাস পেরিয়ে গেলেও রাস্তা সংস্কার হয়নি। মহকুমাশাসককে চিঠি দিয়ে প্রশাসনের দেওয়া ‘আশ্বাস’ পূরণের আবেদন জানাল ‘কাটোয়া বাস ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন’। চিঠির প্রতিলিপি পাঠানো হয়েছে বর্ধমানের আঞ্চলিক পরিবহণ দফতর, কাটোয়ার কংগ্রেস বিধায়ক ও পুলিশের কাছেও।
কাটোয়া থেকে ছাতনি পর্যন্ত এসটিকেকে রোডের ১৯ কিলোমিটার অংশ রীতিমতো বেহাল। কাটোয়া থেকে টিকরখাঁজি গ্রাম পর্যন্ত রাস্তায় চলাচল করা দায়। রাস্তার দু’পাশ বসে যাওয়া ছাড়াও মাঝে মাঝেই রয়েছে বড় বড় খানাখন্দ। বাস মালিকদের সংগঠনের সভাপতি নারায়ণচন্দ্র সেন জানান, রাস্তা সংস্কারের দাবিতে গত ৩ ও ৪ এপ্রিল সংগঠনের তরফে বাস চালানো বন্ধ রাখা হয়। শুধু রাস্তা সংস্কার নয়, অবৈধ ভাবে যাত্রী পরিবহণকারী মোটরচালিত ভ্যান বন্ধের দাবিও জানানো হয়েছিল সংগঠনের পক্ষ থেকে। নারায়ণচন্দ্রবাবু বলেন, “দু’দিন আমরা বাস বন্ধ রেখেছিলাম। প্রশাসনের কর্তারা আমাদের সঙ্গে বসে দ্রুত দাবিপূরণের আশ্বাস দিয়েছিলেন। সেই আশ্বাস পূরণ হয়নি। |
কাটোয়া মহকুমাশাসককে লেখা চিঠিতে ওই সংগঠনের তরফে অভিযোগ জানানো হয়েছে, তাঁদের আন্দোলনের জেরে পুলিশ মাত্র এক দিন অবৈধ ভ্যান ধরপাকড় করে। তার পর থেকে পুলিশ নিশ্চুপ। অবৈধ মোটর ভ্যানগুলি যাত্রী নিয়ে অবাধে যাতায়াত করছে। বাস মালিক সংগঠনের আরও অভিযোগ, যে সব মোটর ভ্যান আটক করা হয়েছিল, সেগুলির মালিকদের সঙ্গে ‘রফা’ করে পুলিশ ভ্যানগুলি ছেড়ে দেয়। তার ফলে যাত্রী নিয়ে ভ্যানগুলি অবাধেই যাতায়াত করছে। কাটোয়ার মহকুমাশাসক দেবীপ্রসাদ করণম অবশ্য বলেন, “আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী আটক করা ভ্যানগুলিকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।”
ওই রাস্তা দিয়ে নিত্য যাতায়াত করেন কাটোয়া শহরের বাসিন্দা কৌশিক সাহা, বিদিশা রায়েরা। তাঁদের কথায়, “বাস কাটোয়া ছাড়ার পরেই দুলতে শুরু করে। মনে হয় এ বার বোধহয় উল্টে গেল!” বাসকর্মীরা জানান, ওই রাস্তায় প্রতি দিনই বাস খারাপ হচ্ছে। যন্ত্রাংশ ভেঙে যাচ্ছে। তার ফলে এসটিকেকে রোডে নিয়মিত যানজট হয়। মহকুমাশাসক জানান, ওই রাস্তা সংস্কারের জন্য প্রায় ৩২ কোটি টাকার একটি প্রকল্প রাজ্য সরকারের কাছে জমা দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু সেই প্রকল্পের অনুমোদন মেলেনি।
ওই রাস্তা সংস্কারের অনুমোদন না মিললেও কাটোয়া-বোলপুর রোডে নিরোল থেকে ফুটিসাঁকো পর্যন্ত নতুন ভাবে রাস্তা তৈরির জন্য প্রায় পাঁচ কোটি টাকার অনুমোদন পেয়েছে পূর্ত দফতর। কিন্তু সেখানে এখনও কাজ শুরু হয়নি। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, বাস বা কোনও গাড়ি গেলে ধুলোয় এলাকা ঢেকে যায়। বাসকর্মীদের অভিযোগ, এসটিকেকে রোডের মতো ওই রাস্তাতেও ‘তাপ্পি’ মেরে কাজ করছে পূর্ত দফতর। দিন কয়েক যেতে না যেতেই ফের গর্ত তৈরি হচ্ছে। কাটোয়ার কংগ্রেস বিধায়ক রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায় বলেন, “বর্ষার আগে ওই দু’টি রাস্তা চলাচলের উপযুক্ত না হলে সমস্যা আরও বাড়বে।”
পূর্ত দফতরের রামজীবনপুরের সহকারী ইঞ্জিনিয়ার নির্মল মণ্ডল বলেন, “আপাতত আমরা যানবাহন চলাচলের জন্য সংস্কার করে দিচ্ছি। তার পরে ওই রাস্তা খুঁড়ে নতুন ভাবে তৈরি করা হবে। তার জন্য বছরখানেক সময় লাগবে।” |