|
|
|
|
ভোটার জানে কে আলেয়া |
আসছে পুরভোট। ফিরছে রাজনীতির লড়াই। কিন্তু কেমন আছে দুর্গাপুর?
ওয়ার্ডে ঘুরে-ঘুরে খোঁজ নিচ্ছে আনন্দবাজার। আজ ওয়ার্ড ৪৩।
সুব্রত সীট |
নিন্দুকেরা বলছে বলুক। নিজের কীর্তি নিয়ে কোনও সংশয়ই নেই তাঁর।
তাঁর দল, সিপিএম হয়তো ততটা নিশ্চিন্ত নয়। বিদায়ী মেয়র পারিষদদের মধ্যে যাঁদের এ বার আর টিকিট দেওয়া হয়নি, তাঁদের তালিকাতেই রয়েছে তাঁর নাম।
তবু তিনি, মেয়র পারিষদ (সাধারণ স্বাস্থ্য পরিষেবা) তথা ৪৩ নম্বর ওয়ার্ডের এক দশকের সিপিএম কাউন্সিলর অমিতাভ চট্টোপাধ্যায় ‘অকুতোভয়’। তাঁর দাবি, এত ভাল কাজ তিনি করেছেন যে তাতে খুশি হয়ে ভোটারেরা নতুন প্রার্থীকেও দু’হাত উপুড় করে ভোট দেবেন।
বিরোধী নেতা আর বাসিন্দাদের একাংশের অবশ্য তাঁর বিশ্বাসে তেমন ভরসা নেই। তাঁদের জিজ্ঞাসা, ওয়ার্ড জুড়ে এত সমস্যা। তার পরেও অতটা নিশ্চিত হন কি করে?
ন’ডিহা, আনন্দপুর, ভৈরবপুর, নারায়ণপুর, দক্ষিণায়ন, উত্তরায়ণ, সারদাপল্লি, বেলতলা, শ্যামপুর গ্রাম, আদর্শপল্লি, নিমতলা, বাউরিপাড়া, রায়ডাঙা, রবীন্দ্রপল্লির এ ও সি ব্লক, অরবিন্দপল্লি, সুকান্তপল্লি, হো চি মিন পল্লি। কাউন্সিলরের দাবি, ৪৩ নম্বর ওয়ার্ডে প্রায় ৯৫ শতাংশ উন্নয়ন হয়েছে। তাঁর কথায়, “বিএসইউপি প্রকল্পে চারশো বাড়ি হয়েছে। পিচ ও কংক্রিটের রাস্তা হয়েছে ১০ কিলোমিটার। প্রায় ৩৫ লক্ষ টাকা ব্যয়ে রায়ডাঙার দু’টি বড় কালভার্ট সংস্কার করা হয়েছে। ৫টি অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রগড়া হয়েছে। দু’টি উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রের সংস্কার করা হয়েছে। ৪টি শিশু উদ্যান তৈরির কাজ সম্পূর্ণ। দু’টির কাজ চলছে। এলাকায় বেশ কয়েকটি স্কুলে পড়ুয়াদের জন্য ছোট পার্ক গড়া হয়েছে। নারায়ণপুর, ভৈরবপুর, ন’ডিহা ও রায়ডাঙায় চারটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নতুন গৃহনির্মাণ ও সংস্কারের অনেকটা কাজ হয়েছে।” |
|
৪৩ নম্বরে রাস্তা জুড়ে জঞ্জালের পাহাড়। ছবি: বিকাশ মশান। |
তালিকা এখানেই শেষ নয়। তিনি জানান, ৩৮০ জন বিধবা ভাতা, ১০ জন প্রতিবন্ধী ভাতা পয়েছেন। দুর্ঘটনায় পরিবারের একমাত্র রোজগেরে সদস্যের মৃত্যুজনিত জাতীয় প্রকল্পে ২৫টি পরিবার এককালীন ১০ হাজার টাকা করে অনুদান পেয়েছে। শ্যামপুর গ্রামে পুকুর সংস্কার ও ঘাট নির্মাণ করা হয়েছে। একশো দিনের প্রকল্পে শ্মশান সংস্কার, জঙ্গল পরিষ্কার, রাস্তার দু’ধারে পড়ে থাকা বালি সরানো, কুয়ো ও নলকূপের সংস্কার করা হয়েছে। তাঁর আক্ষেপ, “ওয়ার্ডের সর্বত্র বিদ্যুৎ পৌঁছেছে। শুধু রেলের জায়গা বলে রায়ডাঙার রেলপাড় বস্তির ৩০টি ঘরে তা দেওয়া সম্ভব হয়নি।”
বিরোধী তৃণমূল নেতা চিত্তরঞ্জন মুখোপাধ্যায়ের গলায় অবশ্য উল্টো সুর। তাঁর অভিযোগ, ওয়ার্ডের বিস্তীর্ণ অংশে পাইপলাইনের মাধ্যমে জলের কোনও সংযোগ দেওয়া হয়নি। প্রধান রাস্তাগুলি সংস্কার হয়নি। মজা পুকুর সংস্কার না হওয়ায় ব্যবহার অনুপযোগী। কালভার্ট ও রাস্তার মধ্যে উচ্চতার সমতার অভাবে যাতায়াত বিভীষিকার সামিল। তিনি বলেন, “সমস্যার কথা কাউন্সিলররকে জানানো হয়েছে। তিনি নির্বিকার।”
একই সুর রবীন্দ্রপল্লির বাসিন্দা দিব্যেন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়ের গলায়ও। তাঁর অভিযোগ, “রবীন্দ্রপল্লির নিকাশি নালার জল বেরোনোর ব্যবস্থা নেই। বেশ কিছু জায়গায় নর্দমা ভাঙা। পাশের ধান জমিতে এ ও সি ব্লকের জল গিয়ে পড়ে। বর্ষাকালে বৃষ্টির জল জমে সাপ, পোকামাকড় আর জোঁকের উপদ্রব বাড়ে। বছর দু’য়েক আগে নির্মিত রাস্তাও ভেঙ্গে গিয়েছে।” শ্যামপুর বাজারের বাসিন্দা অমিতা পান্ডের কথায়, “এই রাস্তা দিয়ে ঢাকা না দিয়েই বালিবোঝাই লরি যাতায়াত করে। বাতাসে বালি ওড়ে। ঝাঁকুনিতে রাস্তাতে বালি পড়ে ছোটখাটো দুর্ঘটনা লেগেই থাকে। কাউন্সিলরকে বলেও কোনও লাভ হয়নি।” শ্যামপুর গ্রামের মন্টু ত্রিবেদী বলেন, “গ্রামের রাস্তার সংস্কার হয়েছে। কিন্তু টেকেনি বেশি দিন। নিকাশি ব্যবস্থা ভাল নয়। নিয়মিত জঞ্জাল সাফাই হয় না।”
নডিহা-আনন্দপুর গ্রামের বাসিন্দা মৃগাঙ্ক বন্দোপাধ্যায় অভিযোগ করেন, বিভিন্ন সরকারি ভাতা বিলিতে স্বজনপোষণ ও অনিয়ম হয়েছে। তাঁর কথায়, “অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মচারীরা বার্ধক্য ভাতা পান। অথচ প্রকৃত প্রাপকেরা বঞ্চিত। বাবা সরকারি চাকরি করেন অথচ ছেলের নামে রয়েছে বিপিএল কার্ড। বিএসইউপি-র বাড়ি বিলিতেও স্বজনপোষণ হয়েছে।” যদিও এ সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন কাউন্সিলর। মৃগাঙ্কবাবুর আরও অভিযোগ, ন’ডিহা-আনন্দপুর, ভৈরবপুর, নারায়ণপুরে জলের পাইপলাইন বসেনি। কাউন্সিলরের সাফাই, “জলের ট্যাঙ্ক নির্মাণের কাজ চলছে। সম্পূর্ণ হলে ওই সব এলাকায় পানীয় জলের সমস্যা মিটে যাবে।”
কংগ্রেস-তৃণমূল জোট ভেস্তে যাওয়ায় অমিতাভবাবুর দল আপাতত কিছুটা স্বস্তিতে। কিন্তু দল যে তাঁকে আর টিকিট দেয়নি, তা তো বিরোধীদের হাতে নাস্তানাবুদ হওয়ার ভয়েই, নয় কি?
অমিতাভবাবু মুচকি হাসছেন। বলছেন, “কোনটা আলো আর কোনটা আলেয়া তা মানুষ জানেন!”
ভোটার কী ভাবছেন, তা কি নেতারা জানেন?
|
ওয়ার্ড ৪৩ |
• বেশ কিছু এলাকায় পাইপ লাইনের মাধ্যমে জলের সংযোগ নেই
• প্রধান রাস্তায় সংস্কারের কোনও কাজ হয়নি
• রবীন্দ্রপল্লির একাংশে বর্ষায় জল জমে সাপ, পোকা ও জোঁকের উপদ্রব |
অমিতাভ চট্টোপাধ্যায়, সিপিএম কাউন্সিলর
আমার ওয়ার্ডে ৯৫ শতাংশ উন্নয়ন হয়েছে।
|
চিত্তরঞ্জন মুখোপাধ্যায়, তৃণমূল নেতা
সমস্যার কথা জেনেও কাউন্সিলর নির্বিকার।
|
|
|
|
|
|
|