রাস্তার উপর ভেঙে পড়ছে চাঙড়। খসে পড়েছে পলেস্তারা। বৃষ্টি পড়লে জল জমে যায় ছাদে। প্রায় তিন দিন ধরে সেই জমা জল ছাদ থেকে চুঁইয়ে পড়ে রাস্তায়। এমনই অবস্থা দাঁইহাটের টাউনহলের। ভবনটির সংস্কার দাবি করে স্থানীয় সমাজবাটি পাড়ার বাসিন্দারা চিঠি দিয়েছেন দাঁইহাট পুরসভাকে। কংগ্রেসের পুরপ্রধান সন্তোষ দাস বলেন, “টাউন হল দ্রুত সংস্কার করার জন্য পুরবোর্ড ২ লক্ষ টাকা অনুমোদন করেছে। এছাড়াও বিধায়ক উন্নয়ন তহবিল থেকে রাজ্য সরকারের কাছে টাকা চেয়ে আবেদন করা হয়েছে।”
পুরসভা ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, আটের দশকের মাঝামাঝি দাঁইহাট পুরসভা সমাজবাটি পাড়ায় টাউন হল তৈরি করে। ঠিক ছিল, এলাকাবাসীর সংস্কৃতি চর্চার কাজে ব্যবহৃত হবে টাউন হলটি। কিন্তু নিয়মিত আয়ের পথ খোলা রাখার জন্য পরবর্তী সময়ে কলকাতার একটি সিনেমা পরিবেশক সংস্থাকে হলটি ভাড়া দেওয়া হয়। কিন্তু হলের পাশেই একটি প্রাথমিক স্কুল থাকায় স্থানীয় বাসিন্দারা সিনেমা দেখানো বন্ধ করার জন্য আবেদন করেন বর্ধমানের তৎকালীন জেলাশাসকের কাছে। তার ভিত্তিতে জেলাশাসক সিনেমা হলের লাইসেন্স বাতিল করে দেন। ওই সংস্থা এর পর আদালতের দ্বারস্থ হয়। দীর্ঘদিন ধরে মামলা চলার পর বিষয়টির নিষ্পত্তি হয়। |
পুরসভা সূত্রে খবর, বেশ কয়েক বছর ধরে মামলা চলায় টাউন হল রক্ষণাবেক্ষণের জন্য কোনও ব্যবস্থা করেনি পুরসভা। তত দিনে বিদ্যুতের বিল বেশ কয়েক হাজার টাকা বাকি পড়ে গিয়েছে। ফলে বিদ্যুৎ সংযোগও ছিন্ন হয়ে যায়। স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, ওই ভবনে কোনও অনুষ্ঠান হলে বাইরে থেকে জেনারেটর ভাড়া করে অথবা ‘হুকিং’ করে বিদ্যুতের ব্যবস্থা করা হয়। তাই টাউন হল থেকে কার্যত পুরসভার কোনও আয় নেই।
সমাজবাটি পাড়ার বাসিন্দা সুশীল অগ্রবাল, বিমল দাসদের আশঙ্কা, “জনবহুল এলাকায় অবস্থিত টাউন হলটির কাছেই একটি প্রাথমিক ও একটি উচ্চ মাধ্যমিক স্কুল রয়েছে। এই স্কুলগুলির পড়ুয়ারা টাউন হলের নীচেই খেলা করে। যে ভাবে চাঙড় খসে পড়ছে তাতে যে কোনও সময়ে বিপদ হতে পারে।” স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে ভগ্নপ্রায় দশা টাউন হলটির। ঢালাইয়ের চাঙড় ভেঙে পড়েছে। বিপজ্জনক অবস্থায় ঝুলছে লোহার শিক।
পুর এলাকার ইঞ্জিনিয়রদের দাবি, অবৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে টাউন হলটি তৈরি করা হয়েছে। তাই হেলে পড়েছে ঝুল বারান্দাটি। যে কোনও সময়ে সেটি ভেঙে পড়তে পারে। টাউন হলের পাশেই বাস সুশান্ত ভট্টাচার্য, কুমোদ সরকারদের। তাঁদের কথায়, “এক দিন বৃষ্টি হলেই ছাদে জল জমে যায়। তিন দিন ধরে সেই জল পড়ে। রাস্তা দিয়ে যাতায়াত করা যায় না।” তাঁদের অভিযোগ, পুর কর্তৃপক্ষ এই ব্যাপারে ‘নীরব’। বারবার জানানো সত্ত্বেও ন্যূনতম ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
টাউন হলের পাশেই বাড়ি দাঁইহাটের প্রাক্তন সিপিএম উপ-পুরপ্রধান প্রদীপ রায়ের। তিনি জানান, বিগত বাম সরকারের পুরমন্ত্রী অশোক ভট্টাচার্য দাঁইহাটে এসেছিলেন। তাঁর নির্দেশ মতো ৯ লক্ষ টাকার একটি প্রকল্প রাজ্য সরকারের পুরদফতরে পাঠানো হয়। কিন্তু সেই প্রকল্প অনুমোদন করেনি বাম সরকার।” প্রদেশ কংগ্রেস সদস্য রাধানাথ ভট্টাচার্য বলেন, “টাউন হল সংস্কারের জন্য পুরসভার পাশাপাশি দলীয়ভাবে প্রচেষ্টা চালিয়েছি আমরা।” |