রোগী ফেরানো যাবে না। হুটহাট ‘রেফার’-ও চলবে না বলে বারবার নির্দেশ দেওয়া হচ্ছে। তাতেও যে হাসপাতালের ভ্রূক্ষেপ নেই, প্রাণ দিয়ে তা দেখিয়ে দিলেন ঘাড়ে ও শিরদাঁড়ায় চোট পাওয়া এক রোগী।
তিন দিন ধরে খাস কলকাতার চারটি সরকারি হাসপাতালে ঘুরেও কোথাও ঠাঁই পাননি জাহাঙ্গির শেখ (৩৫) নামে ওই রোগী। তার মধ্যে ‘সুপার স্পেশ্যালিটি’ হাসপাতাল এসএসকেএমেই গিয়েছেন তিন-তিন বার। বুধবার রাতে তাঁর মৃত্যু হয় পিজি-তেই। ডাক্তারদের উদাসীনতার জন্যই বিনা চিকিৎসায় জাহাঙ্গিরের মৃত্যু হয়েছে বলে পিজি-চত্বরে দাঁড়িয়ে অভিযোগ করেন তাঁর আত্মীয়স্বজন।
জয়নগরের বাসিন্দা জাহাঙ্গির ভ্যান চালাতেন। আত্মীয়েরা জানান, সোমবার জমির ধান পিঠে বয়ে আনার পথে পা পিছলে পড়ে পিঠে ও ঘাড়ে গুরুতর চোট পান ওই যুবক। স্থানীয় হাসপাতাল জানায়, তাঁর ঘাড়ের হাড় ও শিরদাঁড়ায় চোট লেগেছে। পিজি-তে নিয়ে যেতে হবে। জাহাঙ্গিরের কাকা অহেশ শেখের অভিযোগ, ওই দিন সকাল ১০টা নাগাদ তাঁরা পিজি-তে আসেন। কিন্তু শয্যা নেই বলে জানিয়ে পরীক্ষা না-করেই চিকিৎসকেরা পাঠিয়ে দেন ন্যাশনালে। সেখানেও শয্যা না-থাকায় জাহাঙ্গিরকে পাঠানো হয় বাঙুর হাসপাতালে। কিন্তু বাঙুরও ভর্তি নেয়নি। অগত্যা একবালপুরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে তাঁকে ভর্তি করানো হয়। কিন্তু পরিকাঠামো না-থাকায় বুধবার সকালে জাহাঙ্গিরকে ছেড়ে দেয় তারা। অহেশ বলেন, “ওই হাসপাতাল বলেছিল, শুধু পিজি-তেই এই চিকিৎসা হয়। ফের এ দিন পিজি-তে আসি। কিন্তু চিকিৎসকেরা এক বারও দেখলেন না।” দুপুর পর্যন্ত পিজি-তে অপেক্ষা করে জাহাঙ্গিরকে যাদবপুরের কেপিসি হাসপাতালে নিয়ে যান আত্মীয়েরা। কিন্তু সেখানেও ভর্তি নেওয়া হয়নি। রাত ৯টা নাগাদ তাঁকে নিয়ে পিজি-তে ফিরে আসেন অহেশ। তিনি বলেন, “ডাক্তারদের হাতে-পায়ে ধরে কান্নাকাটি করায় জাহাঙ্গিরকে ভিতরে নিয়ে যেতে বলা হয়। কিন্তু একটু পরেই ডাক্তারেরা জানান, ও মারা গিয়েছে। পিজি যদি প্রথমেই চিকিৎসার ব্যবস্থা করত, ওকে হয়তো এ ভাবে মরতে হত না।”
ওই রোগী তিন বার তাঁর হাসপাতালে এলেও পিজি-র সুপার তমাল ঘোষ নাকি কিছুই জানেন না! বুধবার রাতে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, “এমন কোনও খবর পাইনি। ওই রোগীর আত্মীয়েরা লিখিত ভাবে অভিযোগ করলে অবশ্যই বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হবে।” |