শরিকি চাপে বৈঠকের সিদ্ধান্ত নিল সিপিএম |
নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা |
বামফ্রন্ট নিয়ে বামফ্রন্ট ডাকছে সিপিএম।
বামফ্রন্ট পরিচালনা নিয়ে শরিকদের একাংশের ক্ষোভ ছিল বহুদিনের। কিন্তু ক্ষমতায় থাকাকালীন সিপিএমের ‘দাদাগিরি’ মেনে নিতে একপ্রকার বাধ্য হত তারা। কিন্তু ক্ষমতাচ্যুতির পর শরিকদের মতামতকে ‘মূল্য’ দিতেই হচ্ছে তাদের। ঠিক হয়েছে, বামফ্রন্ট পরিচালনার বিষয়ে শরিকদের সঙ্গে আলাদা বৈঠকে বসবে সিপিএম। যে সিদ্ধান্ত থেকে স্পষ্ট, ‘সঙ্কটসময়ে’ ক্ষমতাচ্যুত সিপিএম শরিকি ঐক্য ধরে রাখতে মরিয়া।
বুধবার বামফ্রন্টের বৈঠকে ফ্রন্ট চেয়ারম্যান তথা সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক বিমান বসু এবং দলের সম্পাদকমণ্ডলীর অন্যতম সদস্য মদন ঘোষের সামনেই আরএসপি-র রাজ্য সম্পাদক ক্ষিতি গোস্বামী বলেন, সিপিএম নেতাদের ৩৪ বছরের রাজ্য শাসনের ‘হ্যাং-ওভার’ এখনও কাটেনি। ফলে বামফ্রন্ট পরিচালনায় জেলা ও রাজ্যের ক্ষেত্রে কিছু ‘অসুবিধা’ হচ্ছে। সিপিএমের বিভিন্ন নেতার কথায় সামগ্রিক ভাবে বামফ্রন্ট অসুবিধায় পড়ছে। কী ভাবে বামফ্রন্ট পরিচালনা করা উচিত, তা নিয়ে আলোচনা দরকার। ক্ষিতিবাবুর বক্তব্য সমর্থন করেন সিপিআইয়ের রাজ্য সম্পাদক মঞ্জুকুমার মজুমদার এবং ফরওয়ার্ড ব্লকের নরেন চট্টোপাধ্যায়। শরিক নেতাদের কথা শুনে বিমানবাবু বলেন, এ ব্যাপারে একটি পৃথক বামফ্রন্টের বৈঠক ডাকা হবে। তখন সব দলের পক্ষ থেকে সেখানে ফ্রন্ট পরিচালনা নিয়ে প্রস্তাব দেওয়া যেতে পারে।
ফ্রন্ট পরিচালনা নিয়ে সিপিএমের মদনবাবুর সঙ্গে বৈঠকে শরিক নেতাদের খানিকটা ‘মতানৈক্য’ও হয়। তার প্রেক্ষিতেই বামফ্রন্ট নিয়ে বামফ্রন্টের বৈঠক ডাকার সিদ্ধান্ত হয়। বস্তুত, দলের রাজ্য সম্মেলন থেকে বাম শরিক সিপিআই প্রস্তাব নিয়েছিল, বামফ্রন্টের চেয়ারম্যান পদের অবলুপ্তি ঘটিয়ে শরিক দলের থেকে কাউকে ফ্রন্টের ‘আহ্বায়ক’ করা হোক। সিপিআইয়ের আরও প্রস্তাব ছিল, বামফ্রন্টের সদর দফতর আলিমুদ্দিনের বদলে অন্য কোথাও হোক। এমনকী, ঘুরিয়ে ফিরিয়ে বিভিন্ন শরিক দলের অফিসেও ফ্রন্টের দফতর করা যেতে পারে। ফ্রন্ট সূত্রের খবর, মূলত সেই প্রস্তাব ‘রূপায়ণে’র দিকে লক্ষ্য রেখেই ক্ষিতিবাবুকে সমর্থন করেন মঞ্জুবাবু। এ দিন শরিক নেতারা আরও বলেন, যে ভাবে জ্যোতি বসু বামফ্রন্টকে একটি ‘পরিবার’ হিসাবে পরিচালনা করার কথা বলতেন, বিমানবাবুও তাই করেন। কিন্তু অনেক সিপিএম নেতাই সে পথে চলেন না। ফলে বামফ্রন্টগত ভাবে কর্মসূচি নিলেও তা রূপায়ণে কিছু ‘বাস্তব সমস্যা’ দেখা দেয়। শরিক নেতাদের বক্তব্য, সিপিএমের দলীয় সমাবেশ ‘সফল’ করতে তাদের নেতা-কর্মীদের যে উৎসাহ দেখা যায়, বামফ্রন্টের সমাবেশ সফল করতে অনেক সময়েই তা থাকে না। বামফ্রন্টের সভায় বক্তার তালিকা বা মঞ্চে বসার ক্ষেত্রে অনেক সময় শরিক নেতাদের প্রাপ্য মর্যাদাও দেওয়া হয় না।
সিপিএমের মদনবাবু বলেন, একই কথা শরিকদের ক্ষেত্রে অনেক সময়ে সত্য। অনেক সময়ে শরিক দলের নেতাদের কথাতেও সিপিএমকে ‘বিপাকে’ পড়তে হয়। কেবল তাই নয়, শরিক নেতাদের নিজেদের দলীয় সভায় ভিড় হলেও সামগ্রিক বামফ্রন্টের সভা সফল করতে শরিক দলের নেতা-কর্মীদের তেমন ‘সক্রিয়’ হতে দেখা যায় না। এর পরেই বামফ্রন্ট পরিচালনা নিয়ে বৈঠকের সিদ্ধান্ত হয়। |