হকার-সমস্যা সমাধানের পথ দেখাল কমিটির বৈঠক |
নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা |
হকার-সমস্যা চিহ্নিত হয়েছিল আগেই। হকার নিয়ন্ত্রণ করতে হলে যে ‘জবরদখলকারীদের’ সরাতে হবে, জানা ছিল সেটাও। কিন্তু কোন প্রক্রিয়ায় তা করা যাবে, তা নিয়ে টালবাহানাতেই কেটে গিয়েছে এত দিন। বুধবার রাজ্যের হকার-নীতি তৈরির জন্য গড়া ‘হাই-পাওয়ার কমিটি’র প্রথম বৈঠকে অন্তত সমস্যা সমাধানের একটা দিশা মিলেছে। বৈঠকের পরে পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম জানান, উচ্ছেদ নয়, রাজ্য সরকার হকার-নিয়ন্ত্রণ আইন করতে চলেছে। এর পরে নতুন হকারদের বসতে হলে হকার-নিয়ন্ত্রণ কমিটির কাছে আবেদন করতে হবে। সব দিক বিবেচনা করে কমিটি অনুমতি দেবে বা না করে দেবে। তবে ফুটপাথে যে কোনও নির্মাণ জবরদখল বলে চিহ্নিত হবে। এবং যথাসময়ে ভেঙে দেওয়া হবে। |
মন্ত্রী জানান, এ দিনের বৈঠকে ঠিক হয়েছে গাড়ি চলার রাস্তা (ক্যারেজওয়ে), স্কুল-কলেজ-শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল ও ঐতিহ্যশালী সৌধের সামনে কোনও ভাবেই হকার বসতে দেওয়া হবে না। হকার বসতে পারবে না কোনও রাস্তার মোড়ের ৫০ মিটারের মধ্যে। শহরের মধ্যে একই হকারের একাধিক দোকান থাকতে পারবে না। ইউনিয়নের নামে স্থায়ী ডালার যে ব্যবস্থা চালু রয়েছে, তা রাখতে দেওয়া হবে না। বড় দোকানগুলি তাদের ‘সেকেন্ডস্’ জিনিস বিক্রি করার জন্য দোকানের সামনে হকার বসাতে পারবে না। কোনও জায়গা কারও দখলে থাকলে ফুটপাথের সেই জায়গা ভাড়া নিয়ে অন্যকে বসতে দেওয়ার সুযোগ বন্ধ করা হবে। শহরে হকারশূন্য এলাকা থাকবে। ফিরহাদ জানান, ওই সব দিক খতিয়ে দেখতে সরকার হকার-সুমারি করবে। তাতে যেমন শহরে কত হকার রয়েছেন তা দেখা হবে, তেমনই ইউনিয়নের দখলে কত ডালা, একই হকারের কতগুলি দোকান আছে সেই সবেরও তত্ত্বতালাশ করা হবে।
পুরমন্ত্রী এ দিন আরও জানিয়েছেন, হকার নিয়ে কেন্দ্রীয় আইন তৈরির প্রস্তাবের বিরোধিতা করছে রাজ্য। রাজ্য সরকারের এই সিদ্ধান্তের কথা চিঠি দিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের আবাসন ও শহরের দারিদ্র দূরীকরণ দফতরের (হুপা) মন্ত্রীকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। কেন্দ্রীয় সরকারের আবাসন ও শহরের দারিদ্র দূরীকরণ দফতর থেকে রাজ্যগুলিকে চিঠি দিয়ে জানানো হয়েছিল, কেন্দ্রীয় স্তরে একটি হকার আইন তৈরি করতে চায় তারা। ফিরহাদ জানান, সেই চিঠির উত্তরে রাজ্য সরকার জানিয়ে দিয়েছে, দিল্লির চওড়া রাস্তার উপরে বসা হকারের কথা ভেবে সারা দেশের হকার আইন তৈরি করা যায় না। এমনকী রাজ্য সরকার মনে করে, হকার সমস্যা সমাধানের জন্য রাজ্যও নয়, দায়িত্ব দেওয়া উচিত পুরসভাগুলিকে। যাতে শহরের চরিত্র অনুযায়ী পুরসভাগুলি সিদ্ধান্ত নিতে পারে। কেন্দ্রের ওই চিঠিতে আরও বলা হয়, ১৪ বছর বয়সের কম ও ৬০ বছরের বেশি বয়সী কাউকে হকারি করতে দেওয়া যাবে না। কেন্দ্রের ওই সিদ্ধান্তও মানতে নারাজ রাজ্য সরকার। পুরমন্ত্রী বলেন, “আমরা মনে করি, হকার নিয়ে সমস্যার সমাধান মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে করতে হবে।”
এ দিন ফিরহাদ হাকিম বলেন, “এই সরকারের নীতি হল, পুনর্বাসন না দিয়ে কাউকে উচ্ছেদ করা হবে না। তাই আজ হকার সংক্রান্ত ‘হাই-পাওয়ার কমিটি’র কাছে প্রস্তাব দিয়েছি, দিনের বেলায় অফিস ছুটির পরে বা ছুটির দিনে ‘বিশেষ’ হকারির কথাও বিবেচনা করা হোক।” মন্ত্রী জানান, হকারদের লাইসেন্স বা পরিচয়পত্র দেওয়ার বিষয়টিও ভাবনাচিন্তার মধ্যে রয়েছে। তিনি বলেন, হকার মানেই ঘুরে ঘুরে বা অস্থায়ী ভাবে কোথাও বসে ব্যবসা করা। তাই প্রাথমিক ভাবে পুর দফতর ২৫টি কিয়স্ক তৈরি করে দিচ্ছে কলকাতা পুরসভাকে। শহরের হকারদের তা দিয়ে বসানোর ব্যবস্থা করবে পুরসভা। এর কার্যকারিতা দেখে তবেই পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
পুরমন্ত্রী জানান, হকার নিয়ন্ত্রণ সংক্রান্ত ‘হাই-পাওয়ার কমিটি’তে সর্বস্তরের মানুষ থাকলেও হকার ইউনিয়নের কোনও প্রতিনিধি নেই। যদিও পরবর্তী বৈঠকে হকার ইউনিয়নগুলির সঙ্গে তিনি আলোচনায় বসবেন বলেও জানান ফিরহাদ। |