বিচারককে চিঠি বন্দির... মাওবাদী সাজিয়েছে
সিআইডি, স্বেচ্ছামৃত্যু চাই
দেশের আইনে আত্মহত্যার চেষ্টা শাস্তিযোগ্য। নাগরিককে নিষ্কৃতি-মৃত্যু বা স্বেচ্ছামৃত্যুর অধিকার দেওয়া উচিত কি না, সেই বিতর্কও দীর্ঘদিনের। এরই মধ্যে সিআইডি-র বিরুদ্ধে দমনমূলক চক্রান্তের অভিযোগ এনে স্বেচ্ছামৃত্যু বরণের জন্য আদালতের অনুমতি চাইলেন মাওবাদী অভিযোগে ধৃত এক বিচারাধীন বন্দি।
আলিপুরে দশম ফাস্ট ট্র্যাক কোর্টের বিচারককে সম্বোধন করে ওই বন্দি ১৯ এপ্রিল আলিপুর সেন্ট্রাল জেল থেকে একটি চিঠি লেখেন। বুধবার ওই আদালতে মামলার শুনানির সময়েই চিঠিটি খোলা হয়। সিদ্ধার্থ মণ্ডল নামে যে-বিচারাধীন বন্দি নিজের হাতে চিঠিটি লিখেছেন, মাওবাদী অভিযোগে তাঁকে ধরা হয় ২০১০ সালের ২৮ জুন। ওই দিন দক্ষিণ শহরতলির বিষ্ণুপুর থানা এলাকায় মধুসূদন মণ্ডল, শচীন ঘোষাল ও সঞ্জয় মণ্ডলের সঙ্গে সিদ্ধার্থবাবুকে গ্রেফতার করে সিআইডি। পরে ধরা পড়েন রাধেশ্যাম দাস নামে অন্য এক অভিযুক্ত। পাঁচ জনের বিরুদ্ধেই ‘আনলফুল অ্যাক্টিভিটিজ প্রিভেনশন অ্যাক্ট’ (ইউএপিএ) বা বেআইনি কার্যকলাপ প্রতিরোধ আইনে মামলা করার সঙ্গে সঙ্গে দেশদ্রোহেরও অভিযোগ আনা হয়। সেই মামলায় ইতিমধ্যে চার্জশিটও পেশ করেছে পুলিশ। তার মধ্যেই ওই বন্দি চিঠি লেখায় এ দিন চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়।
এ দিন জেল-হাজত থেকে পাঁচ বিচারাধীন বন্দিকে হাজির করানো হয় বিচারক মির রাশিদ আলির এজলাসে। শুনানির শুরুতেই সিদ্ধার্থবাবুর লেখা চিঠির প্রতি বিচারকের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন সরকারি আইনজীবী নবকুমার ঘোষ। চিঠিতে সিদ্ধার্থবাবুর বক্তব্যের সার কথা, ২০১০ সালের ২৮ জুন থেকে জেলের অন্ধকারে রয়েছি। সংবিধান-বিরোধী কোনও কাজ করিনি। আমাকে মাওবাদী সাজিয়েছে সিআইডি। বেশ কিছু সাদা কাগজ ও মাওবাদী পত্রপত্রিকায় সই করিয়ে নিয়েছে। সিআইডি-র হেফাজতে ২৬ দিন থেকে মনে হয়েছে, সিআইডি হচ্ছে পশ্চিমবাংলায় মাওবাদীদের আঁতুড়ঘর। মাওবাদীদের বিরুদ্ধে ইউএপিএ প্রয়োগ করে তাদের পচিয়ে মারছে সিআইডি। আমার বাড়িতে ৮৫ এবং ৭৫ বছরের বাবা-মা, স্ত্রী, দুই নাবালক ছেলে আছে। এখন তারা অর্ধাহারে, অনাহারে দিন কাটাচ্ছে। সিআইডি যে-ভাবে পরিশ্রম করে মাথা খাটিয়ে মিথ্যা মামলা সাজাচ্ছে, সেখানে মুক্তি তো স্বপ্ন মাত্র! আমি সরকারের চোখে অপরাধী। অথচ বিচারকের সামনে আমি সত্য কথা বলতে পারব না। তার জন্য এক জন উকিল ধরতে হবে। ঠিকমতো পয়সা দিতে না-পারলে আমার সওয়ালও সেই রকমই হবে!
আদালত এর আগেই সিদ্ধার্থবাবু এবং তাঁর সঙ্গে মাওবাদী অভিযোগে ধরা পড়া অন্য চার জনকে রাজনৈতিক বন্দির মর্যাদা দিয়েছে। সেই অনুযায়ী জেলে বিশেষ সুযোগ-সুবিধা পান তাঁরা। সিদ্ধার্থবাবুর চিন্তা নিজের অসহায় পরিবারের জন্য। তিনি লিখেছেন: আমি যত দিন জীবিত অবস্থায় জেলে থাকব, তত দিন পরিবার আমার মুক্তির চেষ্টা চালিয়ে যাবে। এ ভাবে সর্বস্বান্ত হয়ে তিলে তিলে মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যাবে সকলেই। দু’বছর কোর্টে যাওয়া-আসাই সার হচ্ছে। মুক্তির কোনও দিশা নেই। তাই আমি সব দিক বিবেচনা করে নিজে এই মানসিক নরকযন্ত্রণা থেকে মুক্তি পেতে এবং পরিবারের সকলকে মুক্তি দিতে স্বেচ্ছামৃত্যু বরণ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। যে-হেতু আইন আমকে রাজনৈতিক বন্দির মর্যাদা দিয়েছে, তাই এই মানসিক নরকযন্ত্রণা থেকে অব্যাহতি পেতে স্বেচ্ছামৃত্যু বরণে অনুমতি দেওয়ার জন্য আইনের কাছেই আবেদন জানাচ্ছি। আমার এই আবেদন সত্বর মঞ্জুর করে আমাকে এবং আমার পরিবারকে মানসিক যন্ত্রণা এবং আর্থিক টানাটানি থেকে মুক্তি দিলে চিরকৃতজ্ঞ থাকব। সরকারি আইনজীবী যখন চিঠি পড়ে শোনাচ্ছিলেন, তখন লোহার জাল দেওয়া আসামির কাঠগড়ায় অভিযুক্তদের মধ্যে দাঁড়িয়ে ছিলেন সিদ্ধার্থবাবুও। অভিযুক্তদের আইনজীবী শুভাশিস রায়ও হাজির ছিলেন। তবে অসুস্থতার কারণে তিনি এ দিন সওয়াল করেননি। চিঠি পড়া শেষ করে নববাবু আদালতে আর্জি জানান, চিঠিটি যেন গ্রহণ করা না-হয়। তবে চিঠিটিকে মামলার নথির অন্তর্ভুক্ত করতে অনুরোধ জানান তিনি। এই ব্যাপারে শুনানির দিন ধার্য হয়েছে ৩১ মে। ওই দিন জেল-হাজত থেকে অভিযুক্তদের ফের আদালতে হাজির করানোর নির্দেশও দেওয়া হয়।
 
 
 


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.