ফের তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে ছাত্র-সংঘর্ষ সিটি কলেজে
সুরেন্দ্রনাথের পর এবার সিটি কলেজে (মেন) তৃণমূল ছাত্র পরিষদের দুই গোষ্ঠীর মধ্যে গোলমাল বাধল। সুরেন্দ্রনাথের অধ্যক্ষ চিঠি লিখে হস্তক্ষেপ চেয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। সিটি কলেজের অধ্যক্ষ নিরাপত্তা চেয়ে দ্বারস্থ হয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুর। ঘটনাচক্রে, মন্ত্রী হওয়ার আগে ব্রাত্য ওই কলেজেই শিক্ষকতা করতেন।
পুলিশ জানায়, গত কয়েক সপ্তাহ যাবৎ আমহার্স্ট স্ট্রিট সিটি কলেজে ছাত্র সংঘর্ষের ঘটনা লেগে রয়েছে। দু’এক বার তা কলেজ চত্বর ছেড়ে রাস্তাতেও নেমে এসেছে। বুধবার দুপুর দেড়টা নাগাদ ফের গণ্ডগোল বাধে। কলেজের সামনের রাস্তায় ইট, কাচের বোতল ছোড়াছুড়ি শুরু হয়। বেশ কিছুক্ষণ আমহার্স্ট স্ট্রিট এলাকায় যান চলাচলও ব্যাহত হয়। পরে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি আয়ত্তে আনে। তবে ওই ঘটনায় কাউকে গ্রেফতার করা হয়নি। ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, কলেজের আশপাশে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে আধলা ইট, ভাঙা বোতল। কলেজের গেটে মোতায়েন পুলিশ।
গণ্ডগোলের পরে কলেজের ভেতরে পুলিশি পাহারায় থাকা টিএমসিপি সমর্থকেরা।
দরজায় ঝোলানো তালা। বুধবার। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক
আজ, বৃহস্পতিবার অবশ্য কলেজ খোলা থাকছে বলেই জানিয়েছেন অধ্যক্ষ মুকুলকান্তি মান্না। তিনি আরও জানান, আজ কলেজের নিরাপত্তার বিষয়ে পরিচালন সমিতির বৈঠক হবে। ঘটনার পরই কলেজের অধ্যক্ষ শিক্ষামন্ত্রীর দফতরে ফোন করে বিষয়টিতে হস্তক্ষেপের আর্জি জানিয়েছিলেন। অধ্যক্ষ বলেন, “সকাল থেকেই কলেজে তৃণমূল সমর্থক দু’দলের মধ্যে একটা উত্তেজক পরিস্থিতি ছিল। হাতে লাঠিসোটা নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছিল কয়েক জন। তা দেখেই মন্ত্রীর হস্তক্ষেপের আর্জি জানিয়ে শিক্ষা দফতরে ফোন করি।” অধ্যক্ষের ফোনের প্রেক্ষিতে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে এক অনুষ্ঠানে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, “সিটি কলেজ সরকারি কলেজ নয়। তাই তা সরকারের আওতায় পড়ে না। কলেজের অধ্যক্ষ আমায় নয়, আমার দফতরে ফোন করেছিলেন।” সিটি কলেজের ঘটনার বিষয়ে তাঁর কাছে ‘স্পষ্ট খবর’ নেই বলেও মন্ত্রীর দাবি।
তবে সিটি কলেজের গোলমালের পিছনে শাসক দলের রাজনৈতিক ক্ষমতা দখলের লড়াই রয়েছে বলেই কলেজের শিক্ষকদের একাংশের অভিমত। তাঁদের কথায়, “দীর্ঘদিন ধরেই কলেজে ছাত্রদের দু’টি বিবদমান গোষ্ঠী রয়েছে। একটি তৃণমূল সাংসদ সোমেন মিত্রের অনুগামী। অন্যটি কংগ্রেস নেতা প্রদীপ ঘোষের পুত্র সজল ঘোষের। সম্প্রতি সজল কংগ্রেস ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দেওয়ায় তা গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের রূপ নিয়েছে।” বস্তুত, এ দিন গোলমালের পর এক দল তৃণমূল ছাত্র পরিষদ সদস্য সজলের নামে স্লোগান দিয়ে মিছিলও বের করেন।
তৃণমূল সূত্রের খবর, গোলমাল মূলত সোমেন-গোষ্ঠী এবং সোমেন-বিরোধী গোষ্ঠীর। দীর্ঘদিন শিয়ালদহের বিধায়ক ছিলেন সোমেনবাবু। তাঁর বাড়িও ওই কলেজের খুব কাছে। ফলে ওই কলেজে সবসময়েই তাঁর ‘প্রভাব’ ছিল। আপাতত সোমেনবাবু ডায়মন্ডহারবারের সাংসদ। থাকেনও অন্যত্র। সেই ‘সুযোগে’ সোমেন-বিরোধী গোষ্ঠী ওই কলেজের ‘দখল’ নিতে সক্রিয় হয়েছে বলে শাসকদলের একাংশ জানাচ্ছে। সজলকে তৃণমূলে নিয়ে যাওয়াও সেই কারণে। সজলের পিছনে তৃণমূলের ‘প্রভাবশালী’ নেতাদের একাংশের মদত রয়েছে বলেও দলীয় সূত্রের খবর। গোটা বিষয়টিতে সোমেনবাবু যথেষ্ট ‘বিরক্ত’। তিনি মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে চান। তাঁর ঘনিষ্ঠ সূত্রের খবর, ইতিমধ্যেই তিনি মুখ্যমন্ত্রীর সাক্ষাৎপ্রার্থী হয়েছেন।
ঘটনাস্থলে হাজির তৃণমূল ছাত্র পরিষদের নেতারা গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের কথা মানতে নারাজ। তাঁদের দাবি, ‘বহিরাগত দুষ্কৃতী’ ঠেকাতে ছাত্র-ছাত্রীরা প্রতিবাদে নেমেছেন। কিন্তু সেই ‘দুষ্কৃতী’ কারা, জানাতে পারেননি কেউই। ছাত্রদের ‘প্রতিবাদে’ কেন ইট ও বোতল-বৃষ্টি হল, তারও উত্তর মেলেনি। ঘটনাস্থলে তৃণমূল ছাত্র পরিষদের সাধারণ সম্পাদক সুজিত সামের দাবি, “বহিরাগত দুষ্কৃতীরা কলেজে শান্তি নষ্ট করছে। আমরা তৃণমূল ছাত্র পরিষদের হয়ে প্রতিবাদ করছি।”
তবে পুলিশের একাংশের বক্তব্য, এ দিন কলেজ চত্বরে যাদের দেখা গিয়েছে, তারা অনেকেই ‘ছাত্র’ নয়। ঘটনাস্থলেই এক পুলিশ অফিসার বলেন, “ঘটনার সময় আমহার্স্ট স্ট্রিট এবং সংলগ্ন এলাকার বেশ কয়েক জন তৃণমূল সমর্থককে দেখা গিয়েছে।” দিন কয়েক আগেই তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের জেরে ক্লাস বন্ধ করে দিয়েছিলেন সুরেন্দ্রনাথ কলেজ কর্তৃপক্ষ। পরে মুখ্যমন্ত্রীর হস্তক্ষেপে ‘অচলাবস্থা’ কাটে। কিন্তু তা সত্ত্বেও কলেজ-দখল নিয়ে তৃণমূলের গোষ্ঠীবিবাদ মেটেনি।
গত কয়েক মাসে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে লাগাতার অশান্তির ঘটনাকে ‘বিক্ষিপ্ত’ বলে মনে করেন শিক্ষামন্ত্রী। তিনি বলেন, “রাজ্যে ৬০০টি কলেজ রয়েছে। তার মধ্যে দু’-একটিতে সংঘর্ষের ঘটনা বিক্ষিপ্ত।” গোলমালের দায় তিনি চাপিয়েছেন পূর্বতন সরকারের উপরেই। মন্ত্রীর কথায়, “৩৪ বছরের যে জঞ্জাল রয়েছে, তা সরানো কি সহজ কথা! তবে শিক্ষাক্ষেত্রে অশান্তি কমাতে সকলকেই সংযত হতে হবে। আমি সমস্ত মাধ্যমকে সংযত হতে বলব।”
 
 
 


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.