মড়ার উপরে খাঁড়ার ঘা-এর মতো দাতব্যের সরকারি অনুরোধ ফের গিলতে হল কলকাতা পুরসভাকে। দু’-পাঁচ হাজার নয়, দশ লক্ষ টাকার!
আর্থিক সঙ্কটে জেরবার পুরসভায় ‘অনাবশ্যক’ নানা খাতে ঢালাও খরচ নিয়ে ইতিমধ্যে প্রশ্ন উঠেছে। মেয়র পরিষদের একাধিক বৈঠকে জলযোগের বিপুল বিল মেটাতে, টাউন হলে মুখ্যমন্ত্রীর বৈঠক কিংবা সরকারি হরেক সভা-অনুষ্ঠানের আয়োজন-ভোজনের পিছনে পুর-তহবিল খরচের বাহুল্য দেখে পুরসভার অর্থ-কর্তাদেরই চোখ কপালে। এরই মধ্যে রাজ্য তথ্য দফতরের ‘আবদার’ মেটাতে আরও দশ লক্ষ টাকার বোঝা চাপল পুরসভার ঘাড়ে। পুর-সূত্রের খবর: তথ্য দফতরের একটি চিঠির ভিত্তিতে রবীন্দ্রজয়ন্তী পালনের জন্য সরকারি অনুদানপুষ্ট একটি সংস্থাকে ওই অর্থ মঞ্জুর করেছেন পুর-কর্তৃপক্ষ।
কোষাগারের টানাটানিতে যেখানে নাগরিক পরিষেবা উন্নয়নের কাজ ব্যাহত হচ্ছে, সেখানে এ জাতীয় অনুষ্ঠানের জন্য পুর-অর্থ ব্যয়ের যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে পুরসভার অন্দরে। এ বার কলকাতা চলচ্চিত্র উৎসবের জন্য ২৫ লক্ষ টাকা দেওয়া নিয়েও শুরু হয়েছে বিতর্ক। পুর-প্রশাসনের এক পদস্থ কর্তা বলছেন, “ওয়েভার স্কিমে প্রচুর আয় হয়েছে। তাই এখন রোজ টাকার জন্য চাপ আসছে।” অনেকটা ‘বাধ্য’ হয়ে সকলের আবদার মেটাতে হচ্ছে বলে আক্ষেপ করেছেন ওই কর্তা।
নিছক ‘আবদার’ হলে তা মানার বাধ্যবাধকতা থাকবে কেন?
বস্তুত মহাকরণ থেকে চাপ এলে পুরসভাকে যে এ ভাবে ‘দানছত্র’ খুলতেই হবে, তা স্বীকার করে নিয়েছেন এক পুর-কর্তা। পুরমহলের একাংশের মতে, কর্তৃপক্ষের আচরণও ইঙ্গিত দিচ্ছে যে, মহাকরণের ওই সব নির্দেশ ফেরানোর ক্ষমতা তাঁদের নেই। যে কারণে খরচ বাঁচাতে মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়ের প্রথম নজর পড়েছে পরিষদ বৈঠকের ‘ঢালাও’ জলযোগে। গত কয়েকটি বৈঠকে বড়জোর ২০ জন থাকলেও খাবারের প্যাকেট এসেছিল ৮০-৯০ জনের জন্য! প্যাকেটপিছু ২৫০-৩৮০ টাকা দরে।
মেয়র এ বার জানতে চেয়েছেন, কেন এত জনের জন্য খাবার এসেছে। বুধবার তিনি বলেন, “জানাই ছিল না যে, মেয়র পরিষদের বৈঠকে এ ভাবে খরচ হতো! এর সঙ্গে পুরসভার কিছু কর্মী জড়িত কি না, সেটা দেখতে হবে।” শোভনবাবু জানাচ্ছেন, “এ দিন অফিসে এসেই সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মীদের ডেকে বলে দিয়েছি, ভবিষ্যতে এমন খরচ যেন আর না হয়। আগের বৈঠকে কী ভাবে টাকা খরচ হয়েছে, তা-ও যাচাই করতে বলেছি।”
কিন্তু বিভিন্ন সরকারি অনুষ্ঠানের ব্যয়ভার কি পুরসভা বহন করে যাবে? কিংবা সরকারি অনুরোধে কোনও সংস্থাকে রবীন্দ্রজয়ন্তী পালন খাতে টাকা দিয়ে যাবে? মেয়র মন্তব্য করতে না চাইলেও তাঁর ঘনিষ্ঠ এক তৃণমূল কাউন্সিলরের মন্তব্য, “এ সব তো অনুরোধ নয়, আদেশ! মানতেই হবে। মহাকরণকেই ঠিক করতে হবে, এ ধরনের আদেশ তারা পাঠাবে কি না।”
এ দিকে এ বার টাউন হলে চার দিনের জন্য রবীন্দ্রজয়ন্তী পালন করেছে পুরসভা। তাতে ফুলের বিল পঞ্চাশ হাজার টাকা। এ দিন পুর-সচিবালয় থেকে খোঁজ নিয়ে দেখা গিয়েছে, ফুলের অধিকাংশই ছিল প্লাস্টিকের। এক কর্মী বলেন, “প্রতি অনুষ্ঠানে ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে তাই ব্যবহার করা হয়। প্রতি বারই নতুন করে দাম চাপানো হয়। এ বারও হয়েছে।” মেয়র অবশ্য আশ্বাস দিচ্ছেন, “যা হওয়ার হয়ে গিয়েছে। দেখা হচ্ছে, যেন আর এ সব না হয়।” |