বীরভূমের নলহাটির পুরভোট নিয়ে ‘মর্যাদার লড়াই’য়ে নামছে প্রদেশ কংগ্রেস। এবং কংগ্রেসের শীর্ষনেতৃত্বের ‘অনুমোদন’ সাপেক্ষেই ওই সিদ্ধান্ত।
প্রসঙ্গত, নলহাটির কংগ্রেস বিধায়ক কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী তথা কংগ্রেসের বর্ষীয়ান নেতা প্রণব মুখোপাধ্যায়ের পুত্র অভিজিৎ। পুরভোটের আগে থেকেই সেখানে জোট ভেঙে গিয়েছে এবং জোটের দুই শরিক কংগ্রেস-তৃণমূলের সম্পর্কও যথেষ্ট ‘তিক্ত’।
সেই প্রেক্ষিতেই এই সিদ্ধান্ত। আপাতত কংগ্রেস মনে করছে, নলহাটি পুরসভায় সব আসনে শুধু প্রার্থী দেওয়া নয়, বরং সেখানে যত বেশি সম্ভব আসনে জিততে হবে। সেই মর্মে রাজ্য কংগ্রেসের সব নেতাকে বার্তা দেওয়া হয়েছে। এমনকী, কংগ্রেসের প্রার্থীরা কোনও ‘প্ররোচনায়’ পা-দিয়ে শেষ মুহূর্তে যেন মনোনয়ন প্রত্যাহার করে না-নেন, সে ব্যাপারেও রাজ্য নেতাদের ‘সতর্ক’ করা হয়েছে। প্রয়োজনে মনোনয়ন প্রত্যাহারের শেষদিন পর্যন্ত দলের ১৫ জন প্রার্থীকে কোনও গোপন জায়গায় রাখার কথাও ভাবা হচ্ছে।
কংগ্রেসের এক শীর্ষনেতার কথায়, “কংগ্রেসের প্রার্থীদের ভাঙানোর চেষ্টার আশঙ্কা রয়েছে। মনোনয়ন প্রত্যাহারের শেষ দিন আচমকা কোনও প্রার্থী সেই পথে হাঁটলে দলের মুখ পুড়বে। কংগ্রেসের মূল লক্ষ্য, দলীয় প্রতীকে যত বেশি সম্ভব প্রার্থীকে জিতিয়ে আনা। জয়ী কংগ্রেস প্রার্থী পরে শিবির বদলালে অন্য ব্যাপার। সেই সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যায় না।” প্রসঙ্গত, নলহাটি পুরভোটের প্রচারে ইতিমধ্যেই গিয়েছেন বহরমপুরের সাংসদ অধীর চৌধুরী। এর পর দুই সাংসদ দীপা দাশমুন্সি ও মৌসম বেনজির নুর, রাজ্যের সেচমন্ত্রী মানস ভুইয়াঁ ও প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি প্রদীপ ভট্টাচার্যও সেখানে প্রচারে যাবেন।
কংগ্রেস ইতিমধ্যেই অভিযোগ করেছে, পুরভোটে মনোনয়ন প্রত্যাহারের জন্য তৃণমূল চাপ দিচ্ছে। পূর্ব মেদিনীপুরের পাঁশকুড়া, হলদিয়ার পাশাপাশি বর্ধমানের দুর্গাপুরেও এই অভিযোগ উঠেছে। যদিও তৃণমূল নেতৃত্বের দাবি, “জনসমর্থন না থাকায় মিথ্যা অভিযোগ করছে বিরোধীরা।”
বুধবার সকালে পাঁশকুড়ায় কংগ্রেসের এক মহিলা প্রার্থীর স্বামীকে হুমকি দেওয়ার পাশাপাশি মারধর করার অভিযোগ ওঠে স্থানীয় তৃণমূল সমর্থকদের বিরুদ্ধে। হলদিয়ায় দলীয় নির্বাচনী এজেন্ট মনোজ পাণ্ডে ও জেলা নেতৃত্বকে নিয়ে প্রদেশ কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক মায়া ঘোষ এ দিন পূর্ব মেদিনীপুরের পুলিশ সুপারের সঙ্গে দেখা করেন। সোমবারই মনোজকে মারধর ও ‘অপহরণে’র অভিযোগ উঠেছিল তৃণমূলের বিরুদ্ধে।
মায়াদেবী বলেন, “মনোজকে অপহরণ ছাড়াও হলদিয়া ও পাঁশকুড়ায় আমাদের প্রার্থীদের হুমকি দেওয়া হচ্ছে। প্রার্থীদের নিরাপত্তার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছি।” পুলিশ সুপার সুকেশ জৈন এই নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি। তবে, জেলা পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই দুই এলাকায় পুলিশি টহলদারি বাড়ানো হয়েছে।
কংগ্রেসের আরও অভিযোগ, এ দিন সকালে পাঁশকুড়ার ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের কংগ্রেস কাউন্সিলর মালেকা বিবির (এ বার ১৬ নম্বর ওয়ার্ডের প্রার্থী) স্বামী শেখ হাফিজুলকে তৃণমূলের লোকেরা ধরে স্ত্রী-র মনোনয়ন তুলে নেওয়ার কথা বলে। রাজি না-হওয়ায় তাঁকে নিগ্রহ করা হয় বলে অভিযোগ। তবে তৃণমূলের পূর্ব মেদিনীপুরের জেলা সাধারণ সম্পাদক মামুদ হোসেন বলেন, “দু’টি পুরসভাতেই সিপিএম এবং কংগ্রেসের জনসমর্থন নেই বললেই চলে। পুরভোটে নিজেদের প্রাসঙ্গিকতা তুলে ধরতে মিথ্যা অভিযোগ করছে ওরা।”
পুরভোট নিয়ে জোটের মধ্যে এই টানাপোড়েনের মাঝে রাজ্য কংগ্রেসও ‘বিভক্ত’। পঞ্চায়েত ভোটের আগে মানসবাবু প্রদেশ সভাপতির দায়িত্ব ফিরে পেতে ইদানিং ‘সক্রিয়’ বলে কংগ্রেস সূত্রেই জানানো হচ্ছে। মঙ্গলবার তিনি কংগ্রেস সভানেত্রী সনিয়া গাঁধীর সঙ্গে দেখা করার পরেই এদিন আবার সনিয়া ও প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহের সঙ্গে দেখা করেন প্রদেশ সভাপতি প্রদীপ ভট্টাচার্য। পরে প্রদীপবাবু বলেন, “রাজ্যে কংগ্রেসকে কী প্রতিকূল পরিস্থিতিতে কাজ করতে হচ্ছে তা কংগ্রেস সভানেত্রীকে জানিয়েছি। এ-ও জানিয়েছি, জোট শরিক তৃণমূল রাজ্যস্তরে কংগ্রেসের প্রতি যে আচরণ করছে, তাতে পুরভোটে একলা চলা ছাড়া উপায় ছিল না।” তাঁর কথায়, “রাজ্য নেতৃত্বকে পুরভোটে ঐক্যবদ্ধ লড়াই করার নির্দেশ দিয়েছেন সনিয়া গাঁধী।”
প্রদেশ সভাপতি পদে পরিবর্তন নিয়ে প্রশ্নের জবাবে প্রদীপবাবু বলেন, “এ বিষয়টি হাইকম্যান্ডের এক্তিয়ারে। পঞ্চায়েত ও পুরভোটের আগে দলে ঐক্য ধরে রাখাই এখন আমার অগ্রাধিকার।” পশ্চিমবঙ্গের দায়িত্বপ্রাপ্ত এআইসিসি-র সাধারণ সম্পাদক শাকিল আহমেদের কথায়, “এখন প্রদীপ ভট্টাচার্য প্রদেশ সভাপতি। ওই পদে বদল নিয়ে এখন কোনও আলোচনা হচ্ছে না।’’ |