আসানসোল রানিগঞ্জ খনি অঞ্চলের বাসিন্দাদের পুনর্বাসনের জন্য সমীক্ষার কাজ ৩১ মে’র মধ্যে শেষ করে ফেলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে জেলা প্রশাসন। সমীক্ষা শেষ হলেই ক্ষতিগ্রস্তদের দেওয়া হবে সচিত্র পরিচয়-পত্র। যদিও প্রশ্ন উঠেছে, পুনর্বাসনের জন্য তিন বছর আগে টাকা অনুমোদন হয়েছে। সেই কাজে এত সময় লাগছে কেন।
এডিডিএ সূত্রে জানা গিয়েছে, আসানসোল-রানিগঞ্জ খনি এলাকার ১৩৯টি অঞ্চলকে ‘ধস কবলিত’ বলে চিহ্নিত করা হয়েছে। এ সব অঞ্চলে প্রায় ৩৫ হাজার পরিবারের বাস। জেলা প্রশাসন সূত্রে জানানো হয়েছে, রাজ্য সরকারের তরফে ‘ধস কবলিত’ অঞ্চলগুলির বাসিন্দাদের পুনর্বাসন সংক্রান্ত যাবতীয় দায়িত্ব এডিডিএকে দেওয়া হয়েছে। সেই কাজ কতদূর এগিয়েছে, তা জানতে সম্প্রতি আসানসোলে একটি উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক করেন জেলাশাসক ওঙ্কার সিংহ মিনা। জেলাশাসক জানান, সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকে ৩১ মে-র মধ্যে সমীক্ষার কাজ শেষ করতে বলা হয়েছে। তিনি বলেন, “দ্রুত গতিতে সমীক্ষার কাজ চলছে। তা শেষ হলেই ক্ষতিগ্রস্তদের সচিত্র পরিচয়-পত্র বানিয়ে দেওয়া হবে।” এডিডিএ সূত্রে জানানো হয়েছে, এর প্রায় ২৬ হাজার পরিবারে সমীক্ষার কাজ হয়েছে। বাকি আরও ১০ হাজার পরিবারের সমীক্ষা নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যেই শেষ করা হবে।
এডিডিএ সূত্রে জানা গিয়েছে, ‘ধস কবলিত’ এলাকাগুলির পুনর্বাসনের জন্য যাবতীয় অর্থ যোগাচ্ছে কয়লা মন্ত্রক। ২০০৯ সালের জুন মাসে কেন্দ্রীয় ক্যাবিনেট থেকে প্রায় ২৬১০ কোটি টাকা অনুমোদন করা হয়। পরিকল্পনা অনুযায়ী, ওই টাকা ছয় ভাগে খরচ করার কথা। যেমন, ধস কবলিতদের সমীক্ষা ও তাঁদের জমি-বাড়ির মূল্যায়ণ, ক্ষতিগ্রস্তদের সচিত্র পরিচয়-পত্র তৈরি ও তা দেওয়ার ব্যবস্থা করা। এছাড়াও রয়েছে নতুন শহরতলি বানানোর জন্য জমি অধিগ্রহণ, বসবাসের ন্যূনতম সুবিধাযুক্ত শহরতলির গোড়াপত্তন ও উন্নয়ন, ক্ষতিগ্রস্ত বাসিন্দাদের ক্ষতিপূরণ ও তাঁদের নিরাপদ জায়গায় সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার খরচ।
কিন্তু ইতিমধ্যেই প্রশ্ন উঠেছে, তিন বছর আগে পুনর্বাসনের জন্য অর্থ অনুমোদিত হওয়া সত্ত্বেও পুনর্বাসনের কাজে এত দেরি হচ্ছে কেন? এডিডিএ-র চেয়ারম্যান তাপস বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “বাম আমলে ওই টাকা অনুমোদিত হয়। তখন এডিডিএ-র কাজে গতি ছিল না। আমরা ক্ষমতায় এসে কাজে গতি এনেছি। দ্রুত কাজ শেষ হবে।” তাপসবাবু জানান, এখনও পর্যন্ত কোল ইন্ডিয়ার কাছ থেকে প্রায় ১৬০ কোটি টাকা মিলেছে। সমীক্ষার কাজের পাশাপাশি ইতিমধ্যেই প্রায় ১৬ হাজার ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সচিত্র পরিচয়-পত্র বানানো হয়ে গিয়েছে। ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসন দেওয়ার জন্য দু’টি ‘অত্যাধুনিক শহরতলি’ বানানোর জন্য সালানপুরের বনজেমাহারিতে ১৩০০ একর ও বারাবনির গোরান্ডিতে ২৩০০ একর জমিও চিহ্নিত করা হয়েছে বলে দাবি তাপসবাবুর। যদিও এডিডিএ কর্তৃপক্ষ জানান, ২০০৬ সালে তৈরি পুনর্বাসন সংক্রান্ত ‘মাস্টার প্ল্যানে’ জনসংখ্যার যে হিসাব দেওয়া হয়েছিল, তা অনেকটাই বেড়েছে। ফলে সমীক্ষার কাজটিতে দেরি হচ্ছে।
এ দিকে, পুনর্বাসন দেওয়া হলেও রানিগঞ্জ শহর ছাড়তে রাজি নন এলাকার ব্যবসায়ীরা। এডিডিএ জানিয়েছে, রানিগঞ্জে প্রায় ২৫টি ‘ধস প্রবণ’ অঞ্চলের মধ্যে বাজার এলাকার বেশ কিছুটা অংশ রয়েছে। ব্যবসায়ীদের দাবি, প্রযুক্তি ব্যবহার করে রক্ষা করা হোক শহরকে। ভূগর্ভে কংক্রিটের ‘পিলার’ তুলে ধস আটকানোর ব্যবস্থা করুক প্রশাসন। রানিগঞ্জের চেম্বার অব কমার্সের সম্পাদক রাজেন্দ্র প্রসাদ খেতানের অভিযোগ, শতাধিক বছরের পুরনো এই বাণিজ্যকেন্দ্রের স্থায়ীকরণের কোনও উদ্যোগ নিচ্ছে না প্রশাসন। তিনি বলেন, “আমরা ব্যবসা গুটিয়ে এখান থেকে অন্যত্র যাব না। আমাদের এই ক্ষতিপূরণ সরকার করতে পারবে না।” |