|
|
|
|
পুরুলিয়া সদর হাসপাতাল |
তলপেটে কাটারি, অস্ত্রোপচারে বাঁচল ছাত্র |
নিজস্ব সংবাদদাতা • পুরুলিয়া |
তলপেটে ঢুকে রয়েছে আট ইঞ্চি লম্বা কাটারি। ওই অবস্থাতেই কেটে গিয়েছে ঘণ্টা পাঁচেক। যন্ত্রণা সহ্য করে যাচ্ছে বছর তেরোর ছেলেটা।
|
হাসপাতালে মুকেশ। |
পুরুলিয়া সদর হাসপাতালে মঙ্গলবার যখন নিয়ে আসা হয় মুকেশ কৈবর্তকে, তখন ওই দৃশ্য দেখে আঁতকে উঠেছিলেন অনেকেই। সদর হাসপাতাল কিন্তু তাকে ‘রেফার’ করেনি। ঝুঁকিপূর্ণ ও জটিল অস্ত্রোপচার করে মুকেশের তলপেট থেকে কাটারি বার করেছেন সদর হাসপাতালের তিন শল্যচিকিৎসকআশিস কপাট, ফিরোজ চৌধুরী ও পবন মণ্ডল। সঙ্গে ছিলেন এক অ্যানাস্থেটিস্ট ও চার জন নাস। সীমিত পরিকাঠামো নিয়ে জেলা হাসপাতালের ক্ষেত্রে যে অস্ত্রোপচার যথেষ্ট কৃতিত্বের বলেই মনে করছেন রাজ্যের স্বাস্থ্য-কর্তারা। তাঁদের কথায়, “হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ঝুঁকি না নিয়ে ছেলেটাকে কলকাতায় রেফার করতেই পারতেন। এর থেকেও কত সামান্য ঘটনায় রেফার করে দেওয়া হয়। কিন্তু পুরুলিয়া সদর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ যে কাজ করেছেন, তা সত্যিই প্রশংসার দাবি রাখে।”
মুকেশের বাড়ি পুরুলিয়ারই রঘুনাথপুর থানার ডুমুরকোলা গ্রামে। এ দিন সকালে বন্ধুদের সঙ্গে তাল পাড়তে গিয়েছিল স্থানীয় হাইস্কুলের সপ্তম শ্রেণির ছাত্র মুকেশ। সেই সময়েই আঁকশির ডগায় লাগানো ওই কাটারি গাছের উপর থেকে পড়ে ঢুকে যায় মুকেশের তলপেটে। তাকে প্রথমে নিয়ে যাওয়া হয় রঘুনাথপুর হাসপাতালে। সেখানে শল্যচিকিৎসক না থাকায় রেফার করা হয় সদর হাসপাতালে। তখনই অস্ত্রোপচার করার সিদ্ধান্ত নেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। হাসপাতাল সূত্রের খবর, এ ধরনের অস্ত্রোপচারে একাধিক শল্যচিকিৎসকের প্রয়োজন হয়। এ দিন এক সঙ্গে সকলেই ছিলেন বলে সুবিধা হয়েছে।
|
অস্ত্রোপচারের পরে সেই কাটারি। |
বিকেল ৩টে নাগাদ মুকেশকে নিয়ে যাওয়া হয় ওটিতে। এক ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে অস্ত্রোপচার করে তার পেট থেকে কাটারিটি বের করতে সমর্থ হন শল্যচিকিৎসকেরা। পবন মণ্ডল জানান, বাঁকানো কাটারিটি পুরোটাই ওই কিশোরের বাঁ দিকের তলপেটে ঢুকে মূত্রথলির পাশ দিয়ে পায়ের দিকে চলে গিয়েছিল। খাদ্যনালি ও রক্তসংবহন নালিগুলিতে ক্ষত হলেও তা মারাত্মক হয়নি। পবনবাবুর কথায়, “ওই কিশোরের অবস্থা স্থিতিশীল।” সদর হাসপাতালের সুপার স্বপন সরকার বলেন, “দীর্ঘ পঁচিশ বছর এই হাসপাতালে রয়েছি। আমার অভিজ্ঞতায় এই ধরনের জটিল অস্ত্রোপচার এখানে প্রথম হল।”
মুকেশের জেঠু লালমোহন কৈবর্ত বলছেন, “চিকিৎসকেরা ঝুঁকি না নিলে ছেলেটাকে হয়তো ফিরেই পেতাম না!” |
ছবি: সুজিত মাহাতো |
|
|
|
|
|