|
|
|
|
কেন এত শিশু ‘রেফার’, তদন্তের মুখে হাসপাতাল |
পারিজাত বন্দ্যোপাধ্যায় • কলকাতা |
তিন দিনে আট অসুস্থ শিশু রেফার! অধিকাংশই সদ্যোজাত। আর সেই রেফার করা নিয়েই এক জেলা হাসপাতালের সঙ্গে খোদ স্বাস্থ্যভবনের লড়াই শুরু হয়েছে! এত রেফার হওয়ায় ক্ষুব্ধ রাজ্যের স্বাস্থ্যকর্তারা। আবার জেলা হাসপাতালের বক্তব্য, অসুস্থ শিশুর এত চাপ যে, রেফার করা ছাড়া উপায় নেই। শিশুদের কিছু হলে বাড়ির লোকেরা কি চিকিৎসকদের ছেড়ে কথা বলবেন?
দু’তরফের এই চাপানউতোরে অবশ্যম্ভাবী যে প্রশ্নটা উঠছে, তা হল, জেলা হাসপাতালের পরিকাঠামোর পুরোপুরি উন্নতি না করেই রেফারে রাশ টানা কতটা বাস্তবসম্মত।
নদিয়ার কৃষ্ণনগর জেলা হাসপাতাল থেকে গত শনিবার ১টি, রবিবার ৫টি ও সোমবার আরও ২টি শিশুকে কলকাতায় রেফার করা হয়। এদের মধ্যে ৫টি-ই সদ্যোজাত। এই আট শিশুর মধ্যে নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজেই এসেছে ৬টি শিশু। এদের কারও খিঁচুনি রয়েছে, কারও জন্ডিস, ব্রঙ্কো নিউমোনিয়া, সেপসিস বা মেনিনজাইটিস হয়েছে। অথচ, জেলা হাসপাতাল থেকে গুরুতর অসুস্থ শিশুদের কথায়-কথায় কলকাতার মেডিক্যাল কলেজগুলিতে রেফারের উপরে কড়া নিষেধাজ্ঞা রয়েছে খোদ মুখ্যমন্ত্রী তথা স্বাস্থ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। তার উপর কৃষ্ণনগর জেলা হাসপাতালে ‘সিক নিওনেটাল কেয়ার ইউনিট’ (এসএনসিইউ) রয়েছে। ফলে কৃষ্ণনগর থেকে যেখানে সবচেয়ে বেশি শিশু রেফার হয়ে আসছিল, সেই নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজ থেকে অভিযোগ করা হয়েছিল স্বাস্থ্য দফতরে। স্বাস্থ্যকর্তারা খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন, আরও জনা দশেক শিশুকে রেফারের তোড়জোড় চলছে কৃষ্ণনগর থেকে। তড়িঘড়ি নির্দেশ দিয়ে তা আটকানো হয়েছে। এসএনসিইউ বিষয়ে নজরদারিতে গঠিত স্বাস্থ্য দফতরের বিশেষজ্ঞ কমিটির চেয়ারম্যান ত্রিদিব বন্দ্যোপাধ্যায়ের এ ব্যাপারে তদন্ত শুরুর নির্দেশ দেন।
এখানেই প্রশ্ন উঠেছে, জেলার স্বাস্থ্য পরিষেবার মূল সমস্যার সমাধান না করে রেফারের ‘অপরাধ’-এ তদন্ত বোর্ড বসানো বা শাস্তি দেওয়া কতটা যুক্তিযুক্ত? স্রেফ গোঁসা হয়ে বা জেলার সমালোচনা করে স্বাস্থ্যভবনের কিছু শীর্ষকর্তা কি নিজেদের কাজ দেখানোর চেষ্টা করছেন?
কৃষ্ণনগর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, অসুস্থ সদ্যোজাতদের জন্য ১০ শয্যার এসএনসিইউ থাকলেও গোটা জেলায় ওই একটিই ইউনিট। এমনকী কোনও ‘সিক নিওনেটাল স্টেবিলাইজিং ওয়ার্ড’ও অন্য কোথাও খোলা হয়নি। জেলা হাসপাতাল থেকে ৩ কিলোমিটার দূরে শক্তিনগর হাসপাতালে একটি নিওনেটাল ইউনিট খোলা হয়েছিল। সেটিও জেলা হাসপাতালে স্থানান্তরিত হচ্ছে বলে আপাতত বন্ধ।
এ দিকে গোটা জেলা থেকে অসুস্থ শিশুরা অনবরত ভর্তির জন্য আসছে। তারা কোথায় থাকবে? সুপার কাজল মণ্ডল বলেন, “সোমবারও এসএনসিইউয়ে ১০টি এবং বাইরে ২৬টি শিশু ভর্তি ছিল। অধিকাংশেরই শারীরিক অবস্থা খারাপ। কিছু দিন আগে এ রকম দু’টি অসুস্থ শিশু মারা যাওয়ায় বাড়ির লোক বিক্ষোভ দেখান। তাঁরা জানতে চেয়েছিলেন, এসএনসিইউয়ে যখন জায়গা নেই, তখন কেন কলকাতায় রেফার করা হল না?” সুপারের প্রশ্ন, “আমরা কোন দিকে যাব? বাড়ির লোকের কথা শুনব, নাকি স্বাস্থ্য দফতরের? এসএনসিইউ-য়ে জায়গা নেই দেখেও কি গুরুতর অসুস্থদের প্রাণের ঝুঁকি রেখে সাধারণ ওয়ার্ডে ভর্তি করে নেব?”
ত্রিদিববাবুর অবশ্য দাবি, “কৃষ্ণনগরে মোটেই এই মুহূর্তে নবজাতক রোগীর চাপ নেই। তা ছাড়া সেখানকার পরিকাঠামোও যথেষ্ট ভাল। আসলে সব হাসপাতালের বাহানা! একটি শিশুর মৃত্যু নিয়ে গোলমাল হলেই ডাক্তারেরা আর দায়িত্ব নিতে চাইছেন না। এটা চলবে না। রেফার হয়ে কলকাতায় আসতে-আসতে বাচ্চাগুলোর অবস্থা আরও খারাপ হচ্ছে। দরকার পড়লে শাস্তি দিয়ে এই প্রবণতা আটকাতে হবে।” |
(সহ প্রতিবেদন: সুস্মিত হালদার) |
|
|
|
|
|