রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে ‘ফেসবুক’-এ তরজা শুরু হয়েছে দুই বিধায়কের। একজন শাসক জোটের বড় শরিক তৃণমূলের বিধায়ক রবীন্দ্রনাথ ঘোষ। অন্যজন বিরোধী শিবির ফরওয়ার্ড ব্লকের কোচবিহারের জেলা সম্পাদক উদয়ন গুহ। দুজনের রাজনৈতিক অবস্থান বিপরীত মেরুর হলেও সামাজিক বন্ধুত্বের ওয়েবসাইট ফেসবুকে তাঁরা পরষ্পরের ‘বন্ধুও’। লড়াইয়ের বিষয় কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ। লড়াইয়ের সূত্রপাত রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৫১তম জন্মদিনের আগের রাতে। সোমবার গভীর রাতে ফরওয়ার্ড ব্লকের কোচবিহার জেলা সম্পাদক ফেসবুকে রাজ্য সরকারের রবীন্দ্র জয়ন্তী পালনকে কটাক্ষ করে লিখেছিলেন মন্তব্য। কটাক্ষ মিশ্রিত সেই বক্তব্য দেখে তৃণমুল বিধায়ক রবীন্দ্রনাথবাবু পাল্টা কটাক্ষ করেন উদয়নবাবুকে। সেই শুরু। মঙ্গলবার বিকেলও তরজা অব্যাহত। রাজ্য সরকারের নির্দেশে বিভিন্ন থানায় রবীন্দ্রনাথের ছবিতে মালা দিয়ে, গান চালিয়ে, আলো জ্বালিয়ে রবীন্দ্র জয়ন্তী পালন চলছে। কোচবিহারের দিনহাটা থানার দুইপুলিশ কর্মীর সঙ্গে স্থানীয় বাসিন্দাদের সম্প্রতি গোলমাল বাঁধে। অভিযোগ ছিল, গোলমালের সময়ে দুই পুলিশকর্মীই মদ্যপ ছিলেন। সেই প্রেক্ষাপটে সোমবার গভীর রাতে উদয়নবাবু ফেসবুকে লেখেন, ‘আগামীকাল রবীন্দ্রনাথের প্রথম প্রয়াণ দিবস। আগামীকাল সরকারি পয়সা খরচ করে থানায় তাঁরাই (অভিযুক্ত পুলিশ কর্মীরা) রবীন্দ্র জয়ন্তী পালন করবে। ‘কাঁদো বাঙালি কাঁদো।’ জেলারই সহ-বিধায়কের এ হেন কটাক্ষ মেনে নিতে না পেরে রবীন্দ্রনাথবাবু পাল্টা লিখেছেন, ‘ঘুমন্ত মানুষকে জাগানো যায়, কিন্তু যে জেগে ঘুমায় তাকে জাগানো যায় না।’ এমনই মন্তব্য পাল্টা মন্তব্যে সোমবার গভীর রাত পর্যন্ত ফেসবুকে দুই বিধায়কের তরজা চলে। মঙ্গলবার সকালে দুই বিধায়ককেই তাঁদের মন্তব্য নিয়ে প্রশ্ন করা হলে নিজেদের মতো ব্যাখ্যা দিয়েছেন। উদয়নবাবু বলেন, “যে পুলিশ মদ খেয়ে তোলা তুলতে যায়, তারাই যখন বিশ্বকবির ছবিতে মালা দেন, তখনই বাঙালির অন্তরে রবীন্দ্রনাথের প্রয়াণ হয়ে যায়।” পক্ষান্তরে, রবীন্দ্রনাথবাবু বলেন, “গত ৩৪ বছর পুলিশকে নিরপেক্ষ ভাবে কাজ করতে দেয়নি বামপন্থীরা। এখন পরিবর্তন এসেছে। পুলিশ নিরপেক্ষ। তাই গায়ে জ্বালা ধরেছে। দু’একজন পুলিশ কর্মীর বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠলেই সমগ্র পুলিশ ব্যবস্থা খারাপ হয়ে যায় না। শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষেরাই থানায় রবীন্দ্রজয়ন্তী পালনকে বাহবা দিয়েছেন। পুলিশের কী রবীন্দ্র চর্চা বা বিশ্বকবিকে শ্রদ্ধা জানানোর অধিকার থাকবে না!” সোমবার রাতের সেই তরজার জের গড়িয়েছে মঙ্গলবার দুপুরেও। উদয়নবাবু ফেসবুকের দেওয়ালে রবীন্দ্রনাথের ছবি ‘পোস্ট’ করে প্রণাম জানিয়ে জন্মজয়ন্তীর শ্রদ্ধা জানান দুপুরে। কিছু পরে সেই ছবির নীচে দাঁড়িয়ে বিধায়ক রবীন্দ্রনাথবাবুর সংক্ষিপ্ত মন্তব্য, “দেরিতে হলেও সম্বিত ফেরায় আমরা খুশি।” |