বিয়ের আয়োজন সম্পূর্ণ হয়ে গিয়েছিল। হাজির হয়েছিলেন মৌলবীও। গ্রামের লোকেদের নিমন্ত্রণও হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু বিয়ে শুরুর আগে সেখানে গাড়ি নিয়ে হাজির হলেন এলাকার পুলিশ অফিসার ও বিডিও। দু’জন নাবালক ও নাবালিকার বিয়ে দেওয়াটা যে বেআইনি সে কথা ওই দুই সরকারি অফিসার অভিভাবকদের বোঝানোর পরে ভেস্তে গেল বিয়ে। সোমবার রাতে ঘটনাটি ঘটেছে ফালাকাটা থানার পশ্চিম শালকুমার গ্রামে ফালাকাটা থানার পশ্চিম শালকুমার গ্রামে। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, স্কুলে যাওয়ার নাম করে সম্প্রতি প্রতিবেশী দশম শ্রেণির ছাত্রের সঙ্গে পালিয়ে গিয়েছিল অষ্টম শ্রেণির এক ছাত্রী। ওই দিন খোঁজাখুঁজি করে অভিভাবকরা দুজনকে বাড়িতে ফিরিয়ে নিয়ে আসেন। তবে গ্রামের কিছু মাতব্বর অপ্রাপ্তবয়স্ক দুই কিশোর-কিশোরীর বিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দেন। তার পরেই বিয়ের আয়োজন হয়েছিল। খবর পেয়ে ফালাকাটা থানার আইসি ফরিদ হোসেন ও বিডিও সুশান্ত মণ্ডল। টানা দেড় ঘণ্টা ধরে তারা দু’পক্ষের অভিভাবকদের বুঝিয়ে ওই বিয়ে বন্ধ করান। আই সি ফরিদ হোসেন বলেন, “দুই অপ্রাপ্ত বয়সী কিশোর-কিশোরীকে বিয়ে দেওয়া হচ্ছে বলে খবর পেয়ে আমরা ওই গ্রামে যাই। অনেক বুঝিয়ে বিয়েটা এখনকার মত ভেস্তে দেওয়া হয়েছে। নির্দিষ্ট বিয়ের সময়ের আগে তারা ছেলেমেয়েকে বিয়ে দেবেন না বলে অভিভাবকরা আমাদের প্রতিশ্রুতি দেন।” |
গ্রামের একটি স্কুলের অষ্টম শ্রেণির ওই ১৩ বছরের ছাত্রীর সঙ্গে সম্প্রতি প্রতিবেশী ১৭ বছর বয়সী মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীর ঘনিষ্ঠতা গড়ে উঠেছিল। তার পরেই স্কুলে যাওয়ার নাম করে তারা দু’জন গাঁ ছাড়া হয়। সন্ধ্যা হলেও দুজন বাড়ি না ফেরায় খোঁজাখুঁজি করতে শুরু করেন। দুপক্ষের অভিভাবকরা ওই রাতেই খোঁজ পেয়ে তাদের পাশের গ্রাম থেকে তাদের উদ্ধার করে আনা হয়। আইসি বলেন, “ঘণ্টাখানেক পরে ওই বাড়িতে গেলে বিয়ে হয়ে যেত। যেহেতু বিয়ে হয়নি তাই আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। প্রথম দিকে পুলিশ ও বিডিওকে দেখে বিয়ের কথা অস্বীকার করে তাঁরা। পরে জেরার মুখে অভিভাবক ও গ্রামবাসী তা স্বীকার করে নেন।” ওই ঘটনা নিয়ে মন্তব্য করতে চাননি মাতব্বররা। তবে প্রাপ্তবয়স্ক না হলে তাদের বিয়ে দেওয়া হবে না বলে প্রশাসনের দুই কর্তার কাছে কথা দেন দু’পক্ষের অভিভাবকরা। পাত্রীর বাবা জয়নাল আবেদিন বলেন, “সমাজের কিছু মাতব্বরের কথা মতো বিয়ের আয়োজন করা হয়। তবে এমন ভুল আর হবে না। মেয়ে ১৮ বছর না হলে বিয়ে দেব না।” পাত্রের বাবা জাহারুল হকের কথায়, “প্রথমে বিয়েতে রাজি হইনি। পরে চাপে পড়ে রাজি হই। ছেলে পড়াশোনা করুক, এটাই চাই।” |