ঘর তৈরির টাকার হিসেব চাইতে গিয়ে ছাত্রছাত্রীদের সামনেই প্রাথমিক স্কুলের প্রধান শিক্ষককে বেধড়ক মারধরের অভিযোগ উঠল তৃণমূল কর্মীদের বিরুদ্ধে। টানা পাঁচ ঘণ্টা ধরে অত্যাচার চলার পরে পুলিশ গিয়ে ওই প্রধান শিক্ষককে উদ্ধার করে আনে বলে অভিযোগ। মারধরের ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে তৃণমূলের এক প্রাক্তন পঞ্চায়েত সদস্য-সহ মোট ১২ জনের নামে মঙ্গলবার অভিযোগ দায়ের করেন ওই প্রধান শিক্ষক পরেশ রায়। সোমবার ঘটনাটি ঘটেছে ধূপগুড়ি থানার মাগুরমারি-১ নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েতের নিরঞ্জনপাট গ্রামে। প্রধান শিক্ষককে মারধরের ঘটনায় আতঙ্কিত হয়ে পড়ে স্কুলের ছাত্রছাত্রীরা। অনেকেই ভয়ে স্কুল ছেড়ে বাড়িতে চলে যায়। মারধরের পাশাপাশি স্কুলে অফিস ঘর তৃণমূল সমর্থকেরা তালাবন্ধ করে রাখেন বলেও অভিযোগ। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ধূপগুড়ি হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসার পরে প্রধান শিক্ষককে ছেড়ে দেওয়া হয়। পুলিশ ঘটনার তদন্তে নেমেছে। জলপাইগুড়ির ডিএসপি দমন কর্মকার বলেন, “খবর পেয়ে পুলিশ কর্মীরা গিয়ে ওই শিক্ষককে উদ্ধার করে। প্রধান শিক্ষকের কাছ থেকে অভিযোগ পাওয়ার পরে পুরো ঘটনা নিয়ে তদন্ত শুরু হয়েছে। তবে ঘর তৈরিতে দুর্নীতির অভিযোগ নিয়ে চাপানউতোর চলছিল বলে জানা গিয়েছে। এখনও কেউ গ্রেফতার হয়নি।” ধূপগুড়ির তৃণমূল নেতা অশোক বর্মন অবশ্য মারধরের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তাঁর দাবি, “বৈঠক ডেকেও হিসেব দেখাতে না পারায় গ্রামবাসীরা প্রধান শিক্ষককে ঘেরাও করেন। তাঁকে কেউ মারধর করেনি। উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে আমাদের লোকজনের নামে থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন প্রধান শিক্ষক।” নিগৃহীত প্রধান শিক্ষক পরেশ রায়ের অভিযোগ, “বৈঠক শুরু হওয়ার নির্দিষ্ট সময়ের আগে তৃণমূলের লোকজন স্কুলে ঢুকে পড়ে। আমি বারান্দায় বার হয়ে এলে তাঁরা আমায় ঘিরে ধরে জামা টেনে ধরে। তার পরে বেধড়ক মারধর শুরু করে। কয়েকজনের হাতে লাঠিসোটা ছিল। আমি মাটিতে লুটিয়ে পড়ায় তাঁরা লাথি মারতে থাকে। ভয়ে ছাত্রছাত্রীরা স্কুল ছেড়ে বাড়ি চলে যায় পরে। পুলিশ গেলে হামলাকারীরা শান্ত হন।” প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, গত বছর গ্রামের প্রাথমিক স্কুলটি জুনিয়ার হাই স্কুলের অনুমোদন পায়। সর্বশিক্ষা মিশন থেকে স্কুলের একটি ঘর নির্মাণের জন্য ৫ লক্ষ ৫৫ হাজার টাকা বরাদ্দ হয়। গ্রাম শিক্ষা কমিটির মাধ্যমে ঘর তৈরির সামগ্রী কেনার সিদ্ধান্ত হয়। গত ফেব্রুয়ারিতে স্কুল ঘর তৈরির কাজ সমাপ্ত হলেও প্রধান শিক্ষক হিসেব দিচ্ছিলেন না বলে তৃণমূলের অভিযোগ। গ্রাম শিক্ষা কমিটির সম্পাদক তথা সিপিএম পরিচালিত মাগুরমারি গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান বিমল রায় বলেন, “কী কী সামগ্রী কেনা হয়েছিল তার সমস্ত হিসেব স্কুল পরিদর্শকের কাছে জমা দিয়ে দেওয়া হয়েছে। প্রধান শিক্ষককে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে তৃণমূল মারধর করে। গোলমালের খবর পেয়ে পুলিশকে খবর দেওয়া হয়।” স্কুল পরিদর্শক বিমলচন্দ্র গায়েন বলেন, “স্কুলের ঘর তৈরিতে যে সামগ্রী কেনা হয়েছে তার বিল পেলে তা মেটানো হবে বলে ঠিক করা হয়। দায়িত্বে ছিলেন ভিএচই কমিটির সভাপতি তথা প্রধান শিক্ষক ও সম্পাদক। বিষয়গুলি তাঁরা দেখেছেন বলেও গ্রামবাসীদের জানানো হয়।” প্রধান শিক্ষকের কথায়, “ঘর তৈরির পরে যে টাকা বেঁচে যায় তারও পুরো হিসেব এসআইকে জমা দেওয়া হয়। সেখানে গিয়েই সমস্ত হিসাব দেখা যাবে বলে জানানোর পরেও তৃণমূলের লোকেরা মিটিং ডাকার জন্য আমাকে চাপ দিয়ে আগামী সোমবার ফের বৈঠক হবে বলে লিখিয়ে নেন।” মারধরের ঘটনায় প্রধান অভিযুক্ত মাগুরমারি-১ গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রাক্তন গ্রাম পঞ্চায়েত সদস্য তথা তৃণমূল নেতা ধীরেন্দ্রনাথ রায় ও অপর তৃণমূল নেতা দীলিপ রায়ও প্রধান শিক্ষককে মারধর করার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তাঁরা দাবি করেছেন, “দুর্নীতি ধামাচাপা দিতে আমাদের বিরুদ্ধে মারধরের অভিযোগ করছেন ওই প্রধান শিক্ষক। তাঁর ডাকা বৈঠকে গিয়েছিলাম। হিসাব দেখাতে না পারায় গ্রামবাসীরা তাঁকে ঘেরাও করেন। পুলিশের সামনেই প্রদান শিক্ষক আগামী সোমবার ফের বৈঠক ডাকার কথা লিখে দেন।” |