বয়কটের রাস্তা থেকে সরে রাজ্য সরকারের অনুষ্ঠানে যোগ দিল গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা। মোর্চার কার্শিয়াঙের বিধায়ক রোহিত শর্মা ও কিছু দলীয় কর্মী-সমর্থক মঙ্গলবার কালিম্পঙের মংপুতে রবীন্দ্র জয়ন্তী উদ্যাপনে সামিল হন। সেখানে দার্জিলিঙের উন্নয়নের জন্য রাজ্য সরকারের নানা উদ্যোগের প্রশংসা করে ওই বিধায়ক বলেছেন, “আশা করব, ডুয়ার্সে মোর্চার সভা করার অনুমতির বিষয়টিও রাজ্য সরকার ভেবে দেখবে।” তা হলে কি সরকারি অনুষ্ঠান বয়কটের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করল মোর্চা? বিধায়ক স্পষ্ট জবাব দেননি। বলেন, “এ নিয়ে এখনই কিছু বলার নেই।”
ডুয়ার্সে সভার অনুমতির দাবিতে সরকারি অনুষ্ঠান বয়কটের ‘ফতোয়া’ দিয়েছিলেন খোদ মোর্চা সভাপতি বিমল গুরুঙ্গ। ওই অনুমতির দাবিতে মোর্চার নেতৃত্বে এখনও ‘রিলে অনশন’ চলছে। পক্ষান্তরে মোর্চা-বিরোধী শিবিরের ‘আদিবাসী বিকাশ পরিষদ’ও মোর্চাকে সভার অনুমতি দেওয়ার বিরোধিতা করে চলেছে। ইতিমধ্যে দার্জিলিঙে একটি সরকারি অনুষ্ঠানে মোর্চার তরফে কেউ যোগ দেননি। সে জন্যই এ দিনের অনুষ্ঠানে কী হয়, তা নিয়ে কৌতূহল ছিল অনেকেরই। এ দিনের অনুষ্ঠানে মোর্চা সামিল হওয়ায়, খানিকটা হলেও স্বস্তিতে রাজ্য সরকারও। |
উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী গৌতম দেবের প্রতিক্রিয়া, “সব কিছু নিয়ে রাজনীতি করতে নেই। তাতে উন্নয়নে বিঘ্ন ঘটে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সব সময়ই পাহাড়-তরাই-ডুয়ার্সের মিলেমিশে থাকার উপরে জোর দিয়েছেন। পাহাড়ের প্রতি দীর্ঘ দিন যে বঞ্চনা হয়েছে, তা মাথায় রেখেই জোরকদমে নানা উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য অর্থ বরাদ্দ করেছেন। সব মন্ত্রীকেই পাহাড়কে অগ্রাধিকার দিতে বলেছেন। পাহাড়বাসীরাও উন্নয়নে সামিল হওয়ায় আমরা খুশি।”
মোর্চা বিধায়ক রোহিত শর্মাও উন্নয়ন, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের ক্ষেত্রে রাজনৈতিক সঙ্কীর্ণতার ঊর্ধ্বে উঠে পাহাড়-সমতলের মেলবন্ধন জোরদার করার আহ্বান করেছেন। বলেছেন, “পাহাড় তো রাজ্যের বাইরে নয়। উত্তরবঙ্গের মধ্যেই একযোগে রয়েছে দার্জিলিং, তরাই-ডুয়ার্স। উন্নয়ন ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে যোগদানের ব্যাপারে কোনও ছুঁৎমার্গ রাখা উচিত বলে আমরা মনে করি না।” এর পরে সম্প্রতি পাহাড়ের রাস্তাঘাট-সহ নানা প্রকল্পে প্রায় ৩১ কোটি টাকা বরাদ্দ করার জন্য উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানান রোহিত শর্মা। আর তার পরেই মোর্চা বিধায়ক ডুয়ার্সে সভা করার অনুমতির বিষয়টি টেনে আনেন। বলেন, “আমরা রাজ্যের মধ্যেই জিটিএ (গোর্খাল্যান্ড টেরিটোরিয়াল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন) গড়ছি। তা হলে জিটিএ-চুক্তির বিষয়টি ব্যাখ্যা করার জন্য ডুয়ার্সে সভা করার অনুমতি পাব না কেন? এটা নিশ্চয়ই রাজ্য সরকার ভেবে দেখবে।”
উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রীর বক্তব্য, “আমাদের কিছু বন্ধু রিলে অনশন করছেন। তাঁদের প্রতি আমার অনুরোধ, ওই অনশন তুলে নিন। আসুন, সকলে মিলে পাহাড়-সমতলের মেলবন্ধনকে আরও দৃঢ় করে তুলি।” মন্ত্রী জানিয়ে দেন, ডুয়ার্সে সভার অনুমতির ব্যাপারে মোর্চা নেতাদের বক্তব্য তিনি মুখ্যমন্ত্রীর কাছে পৌঁছে দেবেন। |