• বামফ্রন্ট সরকারের শেষ আর্থিক বছরে একশো দিনের কাজ প্রকল্পে ২৬০০ কোটি টাকা খরচ হয়েছিল।
• নতুন সরকারের আমলে গত জানুয়ারি থেকে মার্চের মধ্যে অর্থাৎ মাত্র তিন মাসেই ওই প্রকল্পে খরচ হয়েছে ১৫০০ কোটি ৯৮ লক্ষ টাকা।
পরিসংখ্যানই বলে দিচ্ছে, বাম আমলের শেষ বছরে একশো দিনের কাজ প্রকল্পে যত টাকা খরচ হয়েছিল, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে মার্চের মধ্যেই তার অর্ধেকেরও বেশি টাকা খরচ করে ফেলেছে নতুন সরকার। কংগ্রেস-তৃণমূল জোট সরকার ওই তিন মাসে খরচের যে-হিসেব দিয়েছে, গোটা দেশের নিরিখেই সেটা সব চেয়ে বেশি অর্থাৎ রেকর্ড বলে জানিয়ে দিয়েছেন কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রী জয়রাম রমেশ স্বয়ং। কেন্দ্র এই রেকর্ডে সিলমোহর দিলেও বিরোধী পক্ষ সিপিএম তা মানতে রাজি নয়। তাদের বক্তব্য, রাজ্য সরকারের এই হিসেব অতিরঞ্জিত।
আগের আমলে একশো দিনের কাজ প্রকল্পে টাকা খরচে গড়িমসি এবং শ্রমদিবস সৃষ্টিতে ব্যাপক ঘাটতির অভিযোগ ছিল। নতুন সরকার এসেই যে টাকা খরচ এবং শ্রমদিবস সৃষ্টিতে একটা গতি আনতে পেরেছে, কেন্দ্রের স্বীকৃতিই তার প্রমাণ। রাজ্যের তথ্য অনুযায়ী গত মার্চেই এই প্রকল্পে ৭৯৫ কোটি টাকা খরচ করা হয়েছে। মহাত্মা গাঁধী গ্রামীণ কর্মসংস্থান নিশ্চিতকরণ আইন (এমজিএনআরইজিএ)-এ একশো দিনের কাজের প্রকল্পে পশ্চিমবঙ্গ যে-গতিতে কাজ করেছে, গোটা দেশের কাছেই তা অনুকরণযোগ্য বলে সম্প্রতি কলকাতায় মন্তব্য করেছেন কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রী। |
রাজ্যের পঞ্চায়েতমন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায় বলেন, “আমি জানুয়ারিতে দায়িত্ব নিয়েছি। তার পর থেকে ধীরে ধীরে এই প্রকল্পে টাকা খরচের পরিমাণ দ্বিগুণ বাড়াতে পেরেছি। গত মার্চে আমরা প্রায় ৮০০ কোটি টাকা খরচ করেছি।” এই প্রকল্পে গোটা বছরে ১০০ দিন কাজ দেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা থাকে। জানুয়ারি থেকে মার্চের মধ্যেই গড়ে ৩২ দিন কাজের সুযোগ তৈরি করা সম্ভব হয়েছে। আর এই তিন মাসে মোট সাড়ে আট কোটি শ্রমদিবস তৈরি হয়েছে বলে সুব্রতবাবুর দাবি। পঞ্চায়েত দফতরের তথ্য অনুযায়ী ২০১১ সালে বাম আমলে জানুয়ারি থেকে মার্চের মধ্যে ওই প্রকল্পে মোট ব্যয়ের পরিমাণ ছিল ৮২৬ কোটি ৫০ লক্ষ টাকার কিছু বেশি। তৈরি হয় চার কোটি ৪০ লক্ষ শ্রমদিবস।
সিপিএম বিধায়ক তথা রাজ্যের প্রাক্তন পঞ্চায়েতমন্ত্রী আনিসুর রহমান অবশ্য বর্তমান সরকারের এই তথ্য মানতে রাজি নন। তাঁর মন্তব্য, ওই প্রকল্পে বর্তমান সরকারের টাকা খরচের হিসেব অতিরঞ্জিত। প্রাক্তন মন্ত্রীর দাবি, “আমি যে-দু’বছর দায়িত্ব সামলেছি, সেই সময়েই সব চেয়ে ভাল কাজ হয়েছে।” আনিসুর দায়িত্ব নেন ২০০৯-’১০ সালে। তাঁর হিসেব, তার আগের বছর অর্থাৎ ২০০৮-’০৯ সালে ওই প্রকল্পে খরচ হয়েছিল প্রায় ৯০০ কোটি টাকা। কাজ দেওয়া গিয়েছিল গড়ে ২৬ দিন। শ্রমদিবস সৃষ্টি হয় প্রায় আট কোটি।
২০০৯-’১০ অর্থবর্ষে তাঁরা এই প্রকল্পে ২১০০ কোটি টাকা খরচ করেন বলে আনিসুরের দাবি। শ্রমদিবস সৃষ্টি হয় প্রায় ১৫ কোটি। প্রাক্তন পঞ্চায়েতমন্ত্রী বলেন, “এই প্রকল্পে ২০১০-’১১ আর্থিক বছরে খরচ করা হয় ২৬০০ কোটি টাকা এবং গড়ে ৩১ দিন কাজের সুযোগ তৈরি হয়।”
বর্তমান সরকারের টাকা খরচের দাবি নস্যাৎ করে দিয়েছেন আনিসুর। তিনি বলেন, “মাত্র তিন মাসে ওরা এত বেশি টাকা খরচ করবে কী করে? আমি প্রতি মাসে জেলায় জেলায় ঘুরে বৈঠক করে কাজ করিয়েছি। এই আমলে এত খাটবে কে?”
বর্তমান পঞ্চায়েতমন্ত্রী সুব্রতবাবু অবশ্য বিরোধী পক্ষের বক্তব্যকে আমল দিতে রাজি নন। তিনি বলেন, “টাকা খরচের হিসেব কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে পেশ করা হয়েছে। বিরোধীদের কথা বলার মুখই নেই।” |