আগেই বলে দিয়েছিল ‘ট্রাই’। এ বার একই কথা বলল কেন্দ্রীয় তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রক।
কলকাতা শহরে ডিজিটাল কেবল টিভি পরিষেবা চালু করার জন্য সময়সীমা কিছুটা বাড়াতে চেয়েছিল রাজ্য সরকার। কিন্তু ‘ট্রাই’ জানিয়ে দিয়েছে, অন্য তিন মেট্রো শহরের সঙ্গে কলকাতাতেও পয়লা জুলাই থেকেই ‘ডিজিটাল’ কেবল টিভি পরিষেবা চালু করতে হবে। এ বার কেন্দ্রীয় তথ্য-সম্প্রচার মন্ত্রকও জানাল, ওই দিন থেকেই চারটি শহরে কেবল টিভি-র গ্রাহকদের সেট-টপ বক্স লাগানো বাধ্যতামূলক হচ্ছে।
শহরের মাল্টি-সিস্টেম অপারেটর-রা (এমএসও) অবশ্য এতে আলাদা করে উদ্বিগ্ন নন। তাঁরা জানিয়েছেন, নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যেই কলকাতার সব বাড়িতে সেটটপ বক্স লাগানোর প্রস্তুতি তাঁরা প্রথম দিন থেকেই শুরু করেছেন। সব কিছু ঠিকঠাক চললে সময়সীমার মধ্যেই ওই প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ হয়ে যাবে।
কেন্দ্রীয় মন্ত্রক মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, বিষয়টির উপর তাদের কড়া নজরদারি রয়েছে। মন্ত্রকের উচ্চ পর্যায়ের কমিটি গোটা বিষয়টি পর্যালোচনা করতে গিয়ে দেখেছে, কলকাতায় মোট ৩৫ লক্ষ সেটটপ-বক্স প্রয়োজন। এর মধ্যে পাঁচ লক্ষেরও বেশি বক্স লাগানো হয়ে গিয়েছে। আরও প্রায় চার লক্ষ এখনই মজুত রয়েছে, যা লাগানোর কাজ চলছে। বাকি বক্সগুলির বরাত দেওয়া হয়েছে। ডিজিটাল কেবল টিভি পরিষেবা সম্প্রচারের জন্য এমএসওদের নিজস্ব প্রস্তুতিও (যেমন ২০০টিরও বেশি ডিজিটাল প্রযুক্তির চ্যানেল প্রদর্শন) সারা হয়ে গিয়েছে। ফলে মন্ত্রকও নির্ধারিত সময়সীমা পূরণের ব্যাপারে আশাবাদী।
কলকাতার অন্যতম দুই এমএসও ‘সিটি কেবলে’র কর্তা সুরেশ শেঠিয়া এবং ‘মন্থনে’র কর্তা সুদীপ ঘোষ জানান, গ্রাহকদের স্বার্থের পাশাপাশি ডিরেক্ট-টু-হোম সংস্থাগুলির সঙ্গে প্রতিযোগিতায় কেবল-টিভি পরিষেবাকে টক্কর নিতে হলে দ্রুত ডিজিটাল প্রযুক্তির পরিষেবা চালু করা জরুরি। সুরেশবাবুর দাবি, এখনও পর্যন্ত তাঁরা সাড়ে তিন লক্ষ সেটটপ বক্স লাগিয়েছেন। আরও সাড়ে ১১ লক্ষ বক্সের বরাত দেওয়া হয়েছে। কোরিয়া ও চিন থেকে জাহাজে সেগুলি আসার কথা। সময়সীমার মধ্যে কাজ শেষ করতে প্রয়োজনে আকাশপথে তা আনার চেষ্টা করা হবে। অন্য দিকে সুদীপবাবু জানান, গ্রাহকদের চাহিদার প্রায় ৩০ শতাংশ বক্স লাগানো হয়ে গিয়েছে। বাকিটারও বরাত দেওয়া হয়েছে।
চারটি মেট্রো শহরে ডিজিটাল কেবল টিভি পরিষেবা চালুর সিদ্ধান্ত কেন্দ্র নিয়েছিল বছর ছয়েক আগেই। কিন্তু তা বাস্তবায়িত করা যায়নি। কলকাতায় বেহালা থেকে টালি নালা পর্যন্ত এই ব্যবস্থা কার্যকর হলেও কেবল অপারেটরদের প্রবল বিরোধিতার মুখে শহরের বাকি অংশে তা চালু করা যায়নি। এ বার কেন্দ্র স্পষ্ট জানিয়ে দেয়, ৩০ জুনের পর থেকে আর বর্তমান ‘অ্যানালগ’ ব্যবস্থায় কেবল টিভি পরিষেবা সম্প্রচার করা যাবে না। যদিও রাজ্যের পুর ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম সম্প্রতি দিল্লিতে গিয়ে এই সময়সীমা বাড়ানোর জন্য কেন্দ্রের কাছে দরবার করেন। গত সপ্তাহে ‘ট্রাই’ ডিজিটাল কেবল পরিষেবার মাসুল-হার স্থির করে দিয়ে ওই আবেদন খারিজ করে দেয়। ট্রাই জানিয়েছে, পছন্দের চ্যানেল দেখার সিদ্ধান্ত গ্রাহকেরই। এবং
আপাতত মাসে ১০০ টাকায় তাঁরা ১০০টি ফ্রি-টু-এয়ার চ্যানেল দেখতে পাবেন। পে-চ্যানেলের
ক্ষেত্রেও কেবল-অপারেটররা ইচ্ছে মতো দর হাঁকতে পারবেন না।
এ দিন কেন্দ্রীয় তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রক জানিয়েছে, চারটি শহরে এখনও মোট ২২ লক্ষ সেটটপ বক্স লাগানো হয়েছে। আরও ২৫ লক্ষ মজুত রয়েছে। বক্স খারাপ হয়ে গেলে কী হবে? মন্ত্রক জানিয়েছে, এক বছরের ‘ওয়ার্যান্টি পিরিয়ড’-এর মধ্যে বক্স খারাপ হলে বিনামূল্যে এমএসও তা বদলে দেবেন। ওই সময় পেরিয়ে গেলে যতক্ষণ না খারাপ বক্স সারিয়ে দেওয়া হচ্ছে, তত ক্ষণ গ্রাহককে অন্য একটি বক্স দিতে হবে। পাশাপাশি নির্দিষ্ট মান বজায় রেখেই যাতে এমএসও-রা গ্রাহকদের বক্স দেন, আইনে তাও নিশ্চিত করার কথা বলা হয়েছে। |